রমনিতা শবর।
শবর জনজাতির প্রথম মহিলা হিসেবে স্নাতকোত্তর হলেন পুরুলিয়ার বরাবাজারের রমনিতা শবর। খেড়িয়া শবর জনজাতির মধ্যে তিনিই প্রথম মহিলা হিসেবে স্নাতক হয়েছিলেন। এ বার পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর পাশ করলেন তিনি। তবে রমনিতা বলছেন, ‘‘পথ চলা এখনও বাকি আছে।’’
‘পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া শবর কল্যাণ সমিতি’র কর্তা প্রশান্ত রক্ষিত বলেন, ‘‘এই প্রথম শবর সমাজের কেউ স্নাতকোত্তর হলেন। এর থেকে খুশির খবর আর কিছু হতে পারে না। রমনিতার দেখানো পথে আরও অনেকে যুক্ত হবে।’’ রমনিতাও ওই সমিতির সদস্য। বুধবার সমিতির বার্ষিক অধিবেশনে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার স্নাতকোত্তরের চতুর্থ সিমেস্টারের ফল ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে। রমনিতা বুধবার জানান, তিনি এ দিন অনলাইনে ফল দেখেছেন। তবে মার্কশিট এখনও হাতে পাননি।
বরাবাজারের ফুলঝোর গ্রামের শবরপাড়ার বাসিন্দা রমনিতার লড়াইয়ের পথ সহজ ছিল না। তাঁর বাবা মহাদেব শবর দিনমজুর। চার ভাই-বোনের মধ্যে রমনিতা বড়। তাঁর পড়াশোনায় আগ্রহ দেখে এক আত্মীয় সহায়তায় এগিয়ে আসেন। ঝাড়খণ্ডের স্কুল থেকে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়ার পরে, পুরুলিয়ার কস্তুরবা হিন্দি বালিকা বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। ২০২০ সালে বরাবাজার লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের পটমদা কলেজ থেকে ইতিহাস নিয়ে স্নাতক হন। শবর সমাজের প্রথম মহিলা হিসেবে তাঁর স্নাতক হওয়ার খবর জেনে পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন তাঁকে সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরে ভর্তির ব্যবস্থা করে।
রমনিতার স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হওয়ার খবর জেনে তাঁর বাবা মহাদেব এ দিন বলেন, ‘‘মেয়ের জেদ আজ সফল হল। ও আমাদের সমাজের মান অনেক উঁচুতে নিয়ে গেল।’’ রমনিতা জানান, তিনি গোড়া থেকেই শিক্ষকতা করার স্বপ্ন দেখেন। তাঁর কথায়, ‘‘এ বার ‘নেট’ ও ‘সেট’ পরীক্ষার প্রস্তুতি নেব। তার সঙ্গে বিএড করার ইচ্ছাও রয়েছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এখানে থেমে গেলে চলবে না। আরও অনেককে শিক্ষার আলোয় নিয়ে যেতে হবে।’’ মহকুমাশাসক (মানবাজার) অনুজপ্রতাপ সিংহ বলেন, ‘‘এটি খুবই গর্বের বিষয়। প্রশাসনেরতরফে ওই ছাত্রীকে কী সাহায্য করা যায়, তা দেখব।’’