নগরীর জ্বালা জুড়োল ভিন্ রাজ্যের বজ্রমেঘ

অবাঞ্ছিত এক অতিথি কবে বিদায় নেবে, দিন গুনছিল মহানগর। সেই সঙ্গে পথ চেয়ে ছিল অন্য এক অতিথির। আর প্রতীক্ষিত সেই অতিথিই শেষ পর্যন্ত গেড়ে বসা দহনজ্বালায় অন্তত সাময়িক শান্তি-মলম লাগিয়ে দিল শুক্রবারের সন্ধ্যারাতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৬ ০৩:২৬
Share:

স্বস্তির বৃষ্টি শহরে। শুক্রবার রাতে ধর্মতলায় দেবস্মিতা ভট্টাচার্যের তোলা ছবি।

অবাঞ্ছিত এক অতিথি কবে বিদায় নেবে, দিন গুনছিল মহানগর। সেই সঙ্গে পথ চেয়ে ছিল অন্য এক অতিথির। আর প্রতীক্ষিত সেই অতিথিই শেষ পর্যন্ত গেড়ে বসা দহনজ্বালায় অন্তত সাময়িক শান্তি-মলম লাগিয়ে দিল শুক্রবারের সন্ধ্যারাতে। ভিন্ রাজ্যের মেঘ যে অতিথি হয়ে এত দূরে, এই মহানগরে এসে এ ভাবে হাত উপুড় করবে, এতটা আশাই করতে পারেননি হাওয়া অফিসের বিজ্ঞানীরা!

Advertisement

বিকেলে ঝাড়খণ্ডে তৈরি হয়েছিল বজ্রগর্ভ মেঘ। আবহবিদদের অনুমান ছিল, মরসুমের আর-পাঁচটা দিনের মতোই সেই মেঘ ভেঙে পড়বে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বর্ধমান, বীরভূমের উপরেই। এ দিনের মেঘ সেই ধারা কিছুটা বজায় রেখেছে, পুরোটা নয়। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বর্ধমান, হুগলিতে বৃষ্টি নামিয়ে রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ সেই মেঘ হাজির হয় কলকাতায়। শুরু হয় ঝড়বৃষ্টি। প্রসাদ পেয়েছে দুই ২৪ পরগনাও। দিনভর নাকাল করা গরম সয়ে রাতটুকু নিশ্চিন্তে ঘুমিয়েছে আমবাঙালি। সৌজন্য অতিথি-মেঘ।

ঝড়বৃষ্টি শুধু স্বস্তিই দিয়েছে, এ কথা বললে ভুল হবে। কিছু ক্ষত, কিছু ক্ষতিও রেখে গিয়েছে। রেল জানায়, রাতে রানাঘাট ও চাকদহের মাঝখানে গাছ ভেঙে পড়ায় শিয়ালদহ মেন লাইনে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। বিরাটিতে একই ঘটনা ঘটায় ট্রেন বন্ধ হয়ে যায় বনগাঁ শাখায়। অনেকেই রাস্তায়, অনেকে শিয়ালদহ স্টেশনে আটকে পড়েন। আবার ট্রেনে উঠেও মাঝপথে থমকে যেতে হয় বহু যাত্রীকে। ঝড়বৃষ্টি একটু কমতেই শিয়ালদহ স্টেশনের বাইরে বাস-ট্যাক্সিতে ভিড় বাড়তে থাকে। সব মিলিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত ভোগান্তি পোহাতে হয় ঘরমুখী লোকজনকে।

Advertisement

গুরুসদয় দত্ত রোডেও একটি গাছ ভেঙে পড়ে। বিমানবন্দরের কাছে শিলিগুড়িগামী একটি বাস ঝড়বৃষ্টিতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কাত হয়ে যায়। কয়েক জন যাত্রী সামান্য জখম হন। ঝড়ে মানিকতলা মেন রোডে একটি পরিত্যক্ত বাড়ির পাঁচিল ভেঙে পড়ে। তবে হতাহতের কোনও খবর নেই।

এই ধরনের বিক্ষিপ্ত বিপত্তি বাদ দিলে রাতের বৃষ্টি স্বস্তিই দিয়েছে। আবহবিদেরা জানান, বঙ্গোপসাগর থেকে নাগাড়ে জলীয় বাষ্প ঢুকছে। ছোটনাগপুর মালভূমির হাওয়া গরম হয়ে উপরে উঠছে। সেখানে ছুটে যাচ্ছে বাংলার জোলো বাতাস। ফলে ঝড়বৃষ্টির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। গত কয়েক দিনে তার কমবেশি সুফলও পেয়েছে পশ্চিমাঞ্চল-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা। কিন্তু কলকাতার কপাল কোনও মতেই খুলছিল না।

এ দিন খুলল কী ভাবে?

কেন্দ্রীয় আবহ মন্ত্রকের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ জানান, ঝাড়খণ্ডের দিকে এ দিন বিকেলে একাধিক বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়েছিল। সেগুলি পরস্পরের সঙ্গে জুড়ে গিয়ে বিরাট মেঘপুঞ্জ তৈরি করে। প্রায় ১২ কিলোমিটার উচ্চতার সেই মেঘপুঞ্জই চলে আসে কলকাতায়। রাতে ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ৭৪ কিলোমিটার। রে়ডার-চিত্র বিশ্লেষণ করে আবহবিদদের ব্যাখ্যা, মেঘপুঞ্জটি কলকাতার উপরে অধিকাংশ শক্তি খুইয়ে বাংলাদেশের দিকে গিয়েছে। তাই বাংলাদেশ লাগোয়া দুই ২৪ পরগনাতেও ঝড়বৃষ্টি হয়েছে।

আবার কবে এমন ঝড়বৃষ্টি হবে?

নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না আবহবিদেরা। তাঁরা বলছেন, বাতাসে বাড়তি জলীয় বাষ্প থাকায় ঝ়ড়বৃষ্টির অনুকূল পরিস্থিতি রয়েছে দক্ষিণবঙ্গে। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন জেলায় ঝড়বৃষ্টি ঘটায় তার প্রমাণ মিলেছে। কিন্তু পশ্চিমাঞ্চলের মেঘ এ ভাবে রোজ রোজ কলকাতার অতিথি হবে কি না, এত আগেভাগে সেই বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়।

আবহবিদদের একাংশ বলেই দিয়েছেন, এই স্বস্তি আজ, শনিবার দিনে তেমন মালুম হবে না। তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকবে। সাগর থেকে নাগাড়ে ঢুকতে থাকা জলীয় বাষ্পের সুবাদে থাকবে বাড়তি আর্দ্রতাও।

‘‘ফলে অস্বস্তি কিন্তু এখনই পিছু ছাড়বে না,’’ মনে করিয়ে দিচ্ছেন এক আবহবিজ্ঞানী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement