—প্রতীকী চিত্র।
বিশাখাপত্তনমের দুর্ঘটনার পরে ট্রেনের চালকদের কাজের উপরে কড়া নজরদারি চালানোর নির্দেশ দিল রেল বোর্ড। দীর্ঘ পথে ট্রেন চালাতে গিয়ে চালকেরা সমস্ত সতর্কতামূলক বিধি মানছেন কি না, তা খতিয়ে দেখতে প্রয়োজনে চালকের কক্ষে ভিডিয়ো এবং ভয়েস রেকর্ডার চালিয়ে পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে রেল বোর্ড।
দূরপাল্লার এক্সপ্রেস ট্রেন এবং মালগাড়ি চালানোর সময়ে চালক ও সহকারী চালক যাতে সব সময়ে সজাগ থাকেন, তার জন্য রুটের সমস্ত সিগন্যাল দেখার পরে তা চিৎকার করে বলার নিয়ম রয়েছে। সহকারী চালক সিগন্যাল দেখে চালককে বললে চালক তার পুনরাবৃত্তি করেন। ওই ব্যবস্থাকে ‘কল আউট’ বলে। একই সঙ্গে ওই কাজ করার সময়ে সহকারী চালকের দায়িত্ব হল, নির্দিষ্ট ভঙ্গিমায় হাতে সঙ্কেত দেওয়া। ট্রেন চালানোর সময়ে সতর্ক ভাবে সিগন্যাল দেখা ছাড়াও দু’জনের কেউ যাতে ঘুমিয়ে না পড়েন, তা নিশ্চিত করাও ওই ব্যবস্থার লক্ষ্য। রাজধানী, শতাব্দী এবং বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ছাড়া অন্যান্য ট্রেনে স্টেশন, রিলে কেবিন, এবং পাশের লাইনে কোনও ট্রেন অতিক্রম করার সময়ে চালকদের পতাকা ব্যবহার করে সিগন্যাল বিনিময় করা আবশ্যক কাজ। ওই সব ব্যবস্থার লক্ষ্য হল চালকদের সদা তৎপর রাখা। বিভিন্ন রুটের লোকো বা ইঞ্জিন পরিদর্শকদের ট্রেনে উঠে ভিডিয়ো এবং ভয়েস রেকর্ডার পরীক্ষা ছাড়াও চালক মোবাইল ফোন বন্ধ রাখছেন কি না, তা নজরে রাখতে বলা হয়েছে। ট্রেন চালানোর সময়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
এ ছাড়াও, চালকদের মানসিক এবং শারীরিক অবস্থার দিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে। অস্বাভাবিক কিছু চোখে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। ইঞ্জিনে ওঠার আগে চালকদের বাধ্যতামূলক ভাবে নিঃশ্বাসের পরীক্ষা দিতে হয়। সেই ফলাফল কেন্দ্রীয় ভাবে নথিভুক্ত হয়। সেখানে কোনও অস্বাভাবিকতা থাকলে ওই চালককে কাজে যোগ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না। কিন্তু, চালকের আসনে বসার পরে দীর্ঘ পথে তাঁরা কতটা সজাগ থাকছেন, তা দেখতেই ওই নজরদারির ব্যবস্থা বলে খবর। অটোম্যাটিক ব্লক সেকশনে ট্রেনের সিগন্যাল স্বয়ংক্রিয় উপায়ে বদলে যায়। সেখানে চালকেরা ঠিক মতো সিগন্যাল পড়তে পারছেন কি না, তার উপরেও নজরদারি করতে বলা হয়েছে। নির্দিষ্ট রুটের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকো ইনস্পেক্টরদের ওই কাজে তৎপর হতে বলা হয়েছে।
তবে, চালক সংগঠনের অভিযোগ, দুর্ঘটনার পরে সমস্যার মূল কারণে না গিয়ে চালকদের উপরে দায় চাপিয়ে নজর ঘোরানোর চেষ্টা চলছে। তাদের অভিযোগ, রেলে এখনও প্রয়োজনের তুলনায় ১৫ শতাংশের মতো কম চালক রয়েছেন। ফলে, অতিরিক্ত কাজের চাপ এসে পড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে ১২ ঘণ্টার বেশি কাজ করতে হচ্ছে তাঁদের। ওই সব সমস্যার দিকে নজর না দিয়ে চালকদের উপর কড়াকড়িকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা বলেই অভিযোগ তুলছেন সংগঠনের নেতৃত্ব।
উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে রেলের পক্ষ থেকে বহু প্রচার চালানো হলেও দুর্ঘটনায় যে রাশ টানা যায়নি, তা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছেন রেলের শীর্ষ কর্তারা। ওই দুর্ঘটনার পরে রেল বোর্ডের পক্ষ থেকে দেশের সব ক’টি জ়োনে চিঠি পাঠিয়ে ১৫ দিনের বিশেষ সুরক্ষা প্রস্তুতির কথা বলা হয়েছে। সেখানে ২০টির বেশি ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করে নজরদারি চালাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি, প্রতিদিন ওই সংক্রান্ত ক্ষেত্রে অগ্রগতির কথা জানাতে বলা হয়েছে। বিশাখাপত্তনমের দুর্ঘটনায় ট্রেন চালক লাল সিগন্যাল উপেক্ষা করছিলেন বলে অভিযোগ। ওই দুর্ঘটনায় চালক ও সহকারী চালকের মৃত্যু হয়। অন্য একটি ট্রেনের গার্ডের মৃত্যু হয়। রেলে সংঘর্ষ ঠেকাতে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার কেন করা যাচ্ছে না, সেই প্রশ্নও উঠছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যে প্রযুক্তিতে ট্রেন নিয়ন্ত্রণ করা হয়, সরকারের পক্ষ থেকে তার সমতুল্য প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কথা বলা হলেও তা কবে কার্যকর হবে, সেই প্রশ্ন উঠছে।