ফাইল ছবি।
বানভাসি হওয়ার দু’দিন পরেও উত্তরের সঙ্গে দক্ষিণের যোগাযোগ বিচ্ছিন্নই থেকে গেল সোমবার। বহু জায়গায় জলের নীচে রেলপথ। কোথাও সেতু ভেঙে ঝুলে রয়েছে লাইন। তাই বাতিল হয়ে গিয়েছে উত্তরবঙ্গ ও অসমগামী সব ট্রেন। কবে থেকে লাইন খুলবে, সে বিষয়েও ধোঁয়াশা যথেষ্টই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেনে আটকে থাকার ফলে মালদহ টাউন স্টেশনে এক যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ। বহু জায়গায় সড়ক পথ নদীর চেহারা নেওয়ায় যানবাহন চলাচলও কার্যত শিকেয়।
উত্তরবঙ্গ এবং বিহারের বন্যা পরিস্থিতির জেরে কলকাতা থেকে দার্জিলিং মেল, উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেস, কামরূপ এক্সপ্রেস-সহ ১০টি দূরপাল্লার ট্রেন ছাড়েনি। আগামী কাল, বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মালদহ এবং কাটিহার টাউন পর্যন্ত আসা সমস্ত ট্রেন বাতিল করেছে রেল বোর্ড। তার পর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সোমবার রেলের তরফে জানানো হয়েছে, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, কিষানগঞ্জের মতো জায়গায় লাইনে এখনও জল জমে আছে। বারসইয়ে সেতু ভেঙে লাইন ঝুলে আছে। এই অবস্থায় ট্রেন বাতিল করা ছাড়া উপায় নেই। এ দিন ১৬টি ট্রেন বাতিল করেছে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে। আজ, মঙ্গলবার বাতিল করা হয়েছে ১৯টি ট্রেন। এ ছাড়াও একাধিক ট্রেনের যাত্রাপথ বদলানো বা ছোট করা হয়েছে।
লাইন ও রেলসেতুগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় জল কমলেও দ্রুত ট্রেন চালু করতে পারবে না রেল দফতর। ট্রেন চালানোর আগে সরেজমিনে লাইন পরিদর্শন করতে হবে। উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক প্রণবজ্যোতি শর্মা বলেন, ‘‘রেলের আধিকারিকরা বিভিন্ন এলাকার পরিস্থিতি ঘুরে দেখছেন। কাটিহার, গুয়াহাটি এবং এনজেপি থেকে যাত্রীদের টিকিটের টাকা ফেরতও দেওয়া হচ্ছে।’’
রেলের মতো সড়ক যোগাযোগেরও বেহাল দশা। জলের তোড়ে রাস্তা ভেসে যাওয়ায় শিলিগু়ড়ি, কোচবিহার, বালুরঘাট রুটে সরকারি বাস চলাচল এখন বন্ধ। জাতীয় সড়ক জলমগ্ন হওয়ার ফলে রায়গঞ্জের পরে আর যানবাহন যেতে পারছে না। বেসরকারি বাসগুলি ঘুরপথে যেতে হবে বলে জানিয়ে ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের।
আরও পড়ুন:উঠল অনশন, বন্ধে ধন্দই
এ দিন ধর্মতলা বাসগুমটিতে গিয়ে দেখা গেল, ঘুর পথে যেতে হবে— এই যুক্তিতে এসি বাসের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১২০০ থেকে ২৪০০ টাকা। নন-এসি বাস হলে ভাড়া কিছুটা কম। তুফানগঞ্জের সুকুমার অধিকারী এক আত্মীয়কে নিয়ে কলকাতায় চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন। বললেন, ‘‘অত টাকা নেই। কী ভাবে বাড়ি ফিরব জানি না।’’ এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের কাছে সাহায্যের আর্জি জানিয়েছেন বিপাকে পড়া যাত্রীরা।
এ দিকে সোমবার সকালে মালদহ টাউন স্টেশনের টিকিট কাউন্টার সংলগ্ন শৌচাগার থেকে অসুস্থ এক রেল যাত্রীর মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে যাত্রী মহলে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত সাইফুল ইসলাম (২৪) অসমের বরপেটা মেসপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। কেরলে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন তিনি। সহযাত্রী মহম্মদ জাহির ইসলাম বলেন, খাবার ও জল না পেয়ে এবং গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল সাইফুল। আমরা ওষুধ কিনেও দিয়েছিলাম।’’ দুর্ভোগের জেরেই অসুস্থ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
মালদহ টাউন স্টেশনের ম্যানেজার হরেকৃষ্ণ সিংহ বলেন, ‘‘স্টেশনের বাইরে এক যাত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে শুনেছি। আর কেউ অসুস্থ হলে যাতে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, সে জন্যও বলে দিয়েছি।’’