মঙ্গলবার জামিন পেয়ে মেদিনীপুর আদালত থেকে বেরিয়ে আসছেন শ্রীনু নায়ডু। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
৩৫ আসনের পুরসভায় একক সংখ্যা গরিষ্ঠ দল হতে দরকার শুধু এক জন মাত্র কাউন্সিলরের সমর্থন। আর সে জন্য খড়্গপুরের রেল মাফিয়া শ্রীনু নায়ডুর স্ত্রী তথা বিজেপি কাউন্সিলর পূজাকে দলে টানতে মরিয়া হয়ে উঠেছে তৃণমূল। বারবার সংশোধনাগারে গিয়ে শ্রীনুর সঙ্গে দেখা করছেন খড়্গপুরের প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা এ বারও তৃণমূলের টিকিটে জয়ী জহরলাল পাল— এমনই অভিযোগ বিজেপি-র। মঙ্গলবার সকালে আবার পূজাকে সঙ্গে নিয়ে মেদিনীপুর সংশোধনাগারে গিয়ে জহরবাবু শ্রীনুর সঙ্গে দেখা করেন বলে বিজেপির দাবি।
এ সবের মধ্যে এ দিনই বিকেলে বোমাবাজির ঘটনায় ধৃত শ্রীনু মেদিনীপুর আদালত থেকে জামিন পেয়ে যাওয়ায় জল্পনা আরও উস্কেছে রেলশহরে। বিরোধীদের দাবি, শ্রীনু জেল থেকে বেরিয়ে আসায় পূজার সমর্থন আদায় শাসক দলের কাছে এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। যদিও শ্রীনুর জামিন আইন-মাফিক হয়েছে বলেই জানান সরকারপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ নাজিম হাবিব।
পুর-নির্বাচনে ত্রিশঙ্কু ফল হয়েছে খড়্গপুরে। ৩৫টি আসনের মধ্যে তৃণমূল এবং কংগ্রেস ১১টি করে আসন পেয়েছে। বিজেপি-র দখলে সাত, বামেরা জিতেছে ছ’টি আসনে। পূজার সমর্থন পেলে তৃণমূল ১২ আসনে পৌঁছে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হবে। তখন বোর্ড গঠনে অগ্রাধিকার পাবে তারা। আর তাই বিরোধী ভাঙাতে তৃণমূল এতটা তৎপর বলে অভিযোগ বিরোধীদের।
বিজেপি-র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “কৌশলে আমাদের দল ভাঙানোর চেষ্টা করছে তৃণমূল। বারবার জেলে গিয়ে পূজাদেবীর স্বামীর সঙ্গে দেখা করছেন জহর পাল। আমাদের কাউন্সিলরকে ভুল বোঝানোরও চেষ্টা হচ্ছে।” সিপিআইয়ের জেলা সহ-সম্পাদক বিপ্লব ভট্ট এবং প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সদস্য তথা খড়্গপুরের বিদায়ী পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডেরও দাবি, “তৃণমূল জোর করে বোর্ড গড়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।” বিরোধী ভাঙাতে চাপ সৃষ্টির কথা না মানলেও তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত্ ঘোষ বলেন, “বিরোধী কোনও কাউন্সিলর যদি আমাদের দলে আসেন, তাঁকে স্বাগতই জানাব।”
গত শুক্রবারও মেদিনীপুর সংশোধনাগারে এসে জহরবাবু শ্রীনুর সঙ্গে দেখা করেন বলে অভিযোগ তুলেছিল বিজেপি। তবে সে দিনের মতো এ দিনও সংশোধনাগারে গিয়ে রেল-মাফিয়া শ্রীনুর সঙ্গে সাক্ষাতের কথা মানেননি জহরবাবু। তাঁর দাবি, “আমার এলাকার এক যুবক জেলে রয়েছে। তাঁর সঙ্গে দেখা করতেই গিয়েছিলাম।” সঙ্গে কি পূজাদেবীও ছিলেন? প্রাক্তন পুরপ্রধানের জবাব, “এ সব গল্প।” পূজাদেবীর বক্তব্য, “স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে গেলেও দেখা হয়নি।” জহরবাবুর সঙ্গে গিয়েছিলেন? পূজাদেবীর জবাব, “আমি কিছু জানি না!”
মেদিনীপুর সংশোধনাগার সূত্রে খবর, এ দিন সকাল ৮টা ৫০ মিনিট নাগাদ প্রথমে একাই আসেন জহরবাবু। কিছু পরে তিন সঙ্গীকে নিয়ে এসে পৌঁছন পূজাদেবী। ৯টা ২০ মিনিট নাগাদ তাঁরা জেল থেকে বেরিয়ে যান।