হারিয়ে যাওয়া খেলনা ফিরিয়ে দিচ্ছে রেল। ছবি: আরপিএফের সৌজন্যে।
আপাত দৃষ্টিতে ‘সামান্য’ একটা খেলনা-লরি। কিন্তু বছর দেড়েকের শিশুর কাছে তা সাত রাজার ধন এক মানিক।
তা সেই খেলনা নিয়ে খেলতে রেলের কামরায় বিভোর ছিল উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া থানার কাজিগছের আহমেদ রেজা। কিন্তু নামার সময়ে তাড়াহুড়োয় সেই খেলনা রয়ে গেল ট্রেনের কামরাতেই। আহমেদ কেঁদে আকূল।
প্রিয় খেলনা বাবা-মা ট্রেনে ফেলে আসায় কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছিল আহমেদ। কিন্তু নিরুপায় বাবা-মাও। ফেলে আসা খেলনার লরি ট্রেনে চড়ে কত দূর চলে গিয়েছে কে জানে!
কিন্তু ওই যে, ‘বড় বড় দেশে ছোট ছোট ঘটনাও ঘটে’। এ ক্ষেত্রে ‘চিত্রনাট্য’ একটু অন্য রকমই হল। তাড়াহুড়োয় মাহিত রেজা আর নাসরিন বেগমের ফেলে যাওয়া খেলনা তাঁরা নেমে যাওয়ার পরে নজরে পড়ল সহযাত্রী ভূষণ পট্টনায়েকের। যিনি আগেই দেখছিলেন, বাচ্চাটা সারাক্ষণ ওই খেলনায় মগ্ন। এতটাই যে, সেই খেলনা সরিয়ে নিলেই কান্না জুড়ে দিচ্ছে সে। এত প্রিয় খেলনা ফেলে গেলে কী হবে বাচ্চাটার! মন কেমন করে উঠল ভূষণের।
১৩৯ নম্বরে ‘রেল মদত’-এ ফোন করে কামরা এবং আসনের নম্বর জানিয়ে ভূষণের আকুতি ছিল, যদি ফিরিয়ে দেওয়া যায় সেই খেলনা। কিন্তু সহযাত্রীর নাম-ধাম-নম্বর কিছুই তো জানা নেই! তা সত্ত্বেও ফোন পেয়ে কাল বিলম্ব করেনি রেল। ফেলে যাওয়া খেলনা নিয়ে ট্রেন নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছতেই সেখান থেকে প্রথমে নামিয়ে নেওয়া হল খেলনা। তার পরে শুরু হল তার ‘মালিকের’।
কাজটা সহজ ছিল না। কারণ, ট্রেন সেকেন্দ্রাবাদ থেকে বহু স্টেশন পেরিয়ে যাচ্ছিল আগরতলা। মাঝে কোথা থেকে বাচ্চাকে নিয়ে বাবা-মা উঠেছিলেন, তা ভূষণও জানতেন না। কিন্তু অনেক খুঁজে জানা গেল, সেকেন্দ্রাবাদ থেকেই বুক করা হয়েছিল টিকিট। রেল-কর্তারা জানাচ্ছেন, সেই টিকিটের ‘রিকুইজ়িশন স্লিপ’ খুঁজে পাওয়া কঠিন ছিল। কিন্তু কোমর বেঁধে খুঁজে তা পাওয়া গেল। তা ঘেঁটে বেরিয়ে এল মাহিতদের নম্বর ও ঠিকানা। যোগাযোগ করা হল তাঁদের সঙ্গে। অবশেষে ‘দেশ তোলপাড় করে’ খুঁজে পাওয়া বুধবার ট্রেনে ফেলে যাওয়া সেই খেলনা অবশেষে শুক্রবার পৌঁছে দেওয়া গেল আলুয়াবাড়ি থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের কাজিগাঁওয়ে আহ্লাদে আটখানা শিশুর হাতে।
মাহিত হায়দরাবাদে আনাজের ব্যবসা করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘খেলনা ছেড়ে আসার পরে ছেলের মন খুব খারাপ ছিল। হঠাৎ ফোন আসার পরে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। খেলনা ফিরে পেয়ে ছেলের হাসি থামছে না। আমারও ভাল লাগছে এই ভেবে যে, এ ভাবেও খেলনা ফেরত পাওয়া যায়!’’ আলুয়াবাড়ি রোড স্টেশনের আরপিএফ অফিসার বিপ্লব দত্তের নেতৃত্বে আরপিএফের একটি দল গিয়ে খেলনা দিয়ে এসেছে।