দুধকুমারের ইস্তফায় ভুল বার্তা গেল, মানছেন রাহুল

তাঁর পদত্যাগপত্র আদৌ গৃহীত হবে কিনা, হলেও কবে, সেটা স্পষ্ট নয়। কিন্তু, তাঁর ইস্তফা যেন দলে বিদ্রোহের আগল খুলে দিয়েছে। লাইন দিয়ে ইস্তফা দেওয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছেন দলের আরও নেতা-কর্মী। আর তিনি, দুধকুমার মণ্ডল কিন্তু তেমন টেনশনে নেই! বরং জেলার কর্মী-সমর্থকেরা এসে তাঁর প্রতি যে সমর্থন জানাচ্ছেন, তা তিনি বেশ উপভোগই করছেন। কাগজেকলমে তিনি এখনও বিজেপি-র বীরভূম জেলা সভাপতি (অন্তত ইস্তফাপত্র গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত)।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৫ ০৩:২৬
Share:

তাঁর পদত্যাগপত্র আদৌ গৃহীত হবে কিনা, হলেও কবে, সেটা স্পষ্ট নয়। কিন্তু, তাঁর ইস্তফা যেন দলে বিদ্রোহের আগল খুলে দিয়েছে। লাইন দিয়ে ইস্তফা দেওয়ার হুমকি দিয়ে রেখেছেন দলের আরও নেতা-কর্মী।

Advertisement

আর তিনি, দুধকুমার মণ্ডল কিন্তু তেমন টেনশনে নেই! বরং জেলার কর্মী-সমর্থকেরা এসে তাঁর প্রতি যে সমর্থন জানাচ্ছেন, তা তিনি বেশ উপভোগই করছেন। কাগজেকলমে তিনি এখনও বিজেপি-র বীরভূম জেলা সভাপতি (অন্তত ইস্তফাপত্র গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত)। বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব সোমবার জানান, তাঁরা দুধকুমারের পদত্যাগপত্র পেয়েছেন। কিন্তু তা গ্রহণ করা হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেননি। দলে আলোচনার পর আজ, মঙ্গলবার ওই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে।

তবে, দুধকুমারের ইস্তফা যে পুরভোটের মুখে তাঁদের অস্বস্তিতে ফেলেছে, তা স্পষ্ট বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের মন্তব্যে। সোমবার তাঁর স্বীকারোক্তি, “দলের কোনও নেতা এ ভাবে পদত্যাগপত্র দিলে জনমানসে প্রশ্ন ওঠে বৈকি! মানুষের কাছে ভুল বার্তাই যায়। কিন্তু আমরা সমস্যাটা সামলানোর চেষ্টা করছি।” অন্যান্য জেলার মতো বীরভূমেও পুরভোটে বিজেপি-র প্রার্থী তালিকা নিয়ে দলীয় কর্মীদের বিক্ষোভ হয়েছে। কিন্তু প্রার্থী বাছাই নিয়ে ক্ষোভের জেরে দুধকুমার পদত্যাগ করেননি বলেই রাহুলবাবুর দাবি। তাঁর বক্তব্য, “ওঁর ক্ষোভের অনেক কারণ আছে। প্রার্থী বাছাই তার মধ্যে একটা ছোট কারণ হতে পারে।” তবে রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের এ-ও বক্তব্য, বীরভূমে বা গোটা রাজ্যে যখন বিজেপি-র কোনও জমিই ছিল না, সেই সময়ও তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাহসের সঙ্গে দল করেছেন। পুরভোটের মরসুমে এমন নেতার ক্ষোভ প্রশমন না করাটা উচিত হবে না। বীরভূম জেলা সভাপতি হিসাবে অন্য কোনও নেতার নাম কি তাঁরা ভেবেছেন? রাহুলবাবুর জবাব, “অজস্র নাম আছে!”

Advertisement

রাজ্য সভাপতি ‘অন্য নামের’ কথা বললেও ঘটনা হল, দুধকুমারের পদত্যাগ বীরভূমে দলীয় কর্মীদের বড় অংশের মধ্যে অসন্তোষ এবং ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। সোমবার দুধকুমারকে পদে বহাল রাখার দাবিতে পদত্যাগ করতে চেয়ে এবং গণ ইস্তফার হুমকি দিয়ে প্রদেশ নেতৃত্ব ও জেলার পর্যবেক্ষের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন মযূরেশ্বর ২ ব্লক এলাকার নেতা-কর্মীরা। এ দিন ওই ব্লকের কোটাসুরে বিজেপি-র দু’নম্বর মণ্ডল কমিটির কার্যালয়ে সকাল থেকে ছিলেন দুুধকুমার। দিনভর সেখানে এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন তাঁর অনুগামীরা। রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের পদত্যাগ দাবি করে বিক্ষোভও দেখান কিছু কর্মী। বিজেপি-র তরফে বীরভূমের পর্যবেক্ষক রামকৃষ্ণ পাল অবশ্য বলেছেন, “ওই চিঠির বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তাই মন্তব্য করতে পারছি না।”

নিজের ইস্তফাপত্রে রবিবার দলের রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের প্রতি গুরুতর কিছু অভিযোগ তুলেছিলেন দুধকুমার। এ দিনও তাঁর তোপ, “কিছু রাজ্য নেতা জেলা নেতাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে দলকে দু’ভাগ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। দলে আমাকে কেন্দ্র করে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিচ্ছিল। এতে দলের ক্ষতি হচ্ছিল। আমি সেই ক্ষতি রোধ করতেই পদত্যাগ করেছি।” রাহুল সিংহের প্রতি তাঁর ক্ষোভ, যাঁরা দল করতে গিয়ে মার খেয়েছেন বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তিন-তিন বার রাজ্য সভাপতি থেকেও তাঁদের জন্য ভাল কিছু বা উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারেননি। দুধকুমারের আরও অভিযোগ, “রাজ্যের কিছু অযোগ্য অপদার্থ নেতা এ বার পুরভোটে টিকিট বেচে নিজেদের পকেট ভরেছেন।”

দুধকুমার যে অভিযোগই করুন না কেন, এটাও ঘটনা যে, রাজ্য নেতৃত্ব এবং জেলা কমিটির বেশ কিছু নেতার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কে সম্প্রতি তিক্ততা ক্রমেই বাড়ছিল। জেলা থেকে তাঁর নামে বহু অভিযোগও গিয়েছে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে। দুধকুমারের বিভিন্ন সময়ে করা মন্তব্য দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে বলেই মত রাজ্য ও জেলা নেতৃত্বের একাংশের। বিভিন্ন বিষয়ে কোণঠাসা হয়ে শেষ অবধি তিনি-ই পদত্যাগের চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু, পদত্যাগপত্র সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করে দেওয়ায় সঙ্ঘ এবং বিজেপি নেতৃত্ব তাঁর উপর আরও বিরূপ হয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, এ বিষয়ে নিজের যাবতীয় বক্তব্য দলের অন্দরে জানানোর সুযোগ তাঁর ছিল এবং সেটাই তিনি করতে পারতেন।

২০১৩ সালেও একবার পদত্যাদের ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন দুধকুমার। কিন্তু সেটা গৃহীত হয়নি। এ বার কী পদক্ষেপ করে দল, জেলার বিজেপি নেতা-কর্মীরা এখন সেটাই দেখার অপেক্ষায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement