রাহুল গাঁধী ফোন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কথা হল প্রায় আধ ঘণ্টা। দু’দিন আগের এই কথোপকথনে প্রধান আলোচ্য ছিল অবশ্যই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। উদ্বিগ্ন রাহুল মুখ্যমন্ত্রীকে জানান, অভিষেকের দুর্ঘটনার কথা জেনে তিনি খুবই উদ্বিগ্ন। জানতে চান, চিকিৎসা ঠিক মতো হচ্ছে তো অভিষেকের? এখন কেমন আছেন তিনি? মমতা জানান, অভিষেকের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু উদ্বেগ কাটেনি। চোখের নীচে হাড় ভেঙেছে। চিকিৎসকরা বিপন্মুক্ত বলছেন না।
শুধু রাহুল নন। সনিয়া গাঁধীও অভিষেকের খোঁজ নিয়েছেন মমতার কাছ থেকে। ফোন করেছেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও। পাঠিয়েছেন দূতও। সনিয়া অবশ্য নিজে ফোন করেননি। নিজের রাজনৈতিক সচিব আহমেদ পটেলকে দিয়ে ফোন করিয়েছেন। সনিয়ার সঙ্গে এই পরোক্ষ বার্তালাপ বা রাহুলের সঙ্গে কথা— দু’টিই ঘটল অনেক দিন পর। বস্তুত পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভোটের ফল বেরোনোর পর এ’টিই ছিল মমতা-রাহুল প্রথম বাক্যালাপ। পটনায় নীতীশের শপথে গিয়ে মমতা-রাহুল একান্তে কথা হয়েছিল। দিল্লি ফিরে রাহুলই সাংবাদিকদের জানিয়ে দেন, মমতা বলেছেন, ‘আর যা-ই করো, সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিও না। ভরাডুবি হবে।’ কংগ্রেস ভেবেছিল, মমতা ভয় পেয়ে রাহুলকে এ কথা বলেছেন। রাহুল এর পর মমতার পরামর্শ উড়িয়ে তাঁর সঙ্গে সংঘাতের লাইন নেন ভোটে। মুখ্যমন্ত্রী হয়ে মমতা এর পর একাধিক বার দিল্লি এসেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সংসদে বেশ কিছু কংগ্রেস নেতার সঙ্গেও তাঁর কথা হয়। কিন্তু সনিয়া বা রাহুলের সঙ্গে বৈঠকে আগ্রহ দেখাননি তিনি। শেষ পর্যন্ত এত দিন পরে কথা হল রাহুলের সঙ্গে। শুধু কি অভিষেকের স্বাস্থ্য নিয়েই আলোচনা হল নাকি রাজনীতির কথাও হয়েছে কিছু? মুখ খোলেনি কোনও দু’পক্ষই।
নীতীশ ফোন করেছিলেন গত কাল। মমতাকে তিনি জানান, রাজগির জেলা সফরে ব্যস্ত থাকায় অভিষেকের খোঁজ নিতে একটু দেরি হল। তবে তিনি নিজে হাসপাতালে গিয়ে অভিষেককে দেখতে চান। চিকিৎসকদের বারণের কথা বলে মমতা তাঁকে নিরস্ত করেন। নীতীশ তবু শনিবার তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুগামী সঞ্জয় ঝা-কে পাঠান কলকাতায়। হাসপাতালে নীতীশের পুষ্পস্তবক দিয়ে আসেন দূত সঞ্জয়।
রাহুল-নীতীশদের তৎপরতায় এটা স্পষ্ট, বিরোধী নেতানেত্রীরা এখন নিজেদের মধ্যে ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পর্ক ‘মধুর’ করতে ব্যস্ত। কংগ্রেস সূত্রের মতে, ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির মধ্যে মমতার প্রাসঙ্গিকতা যে এখন অনেক বেশি, দলের হাইকম্যান্ডও তা মানছে। তা ছাড়া রাজ্যে বিজেপি-সঙ্ঘের সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিয়ে ক্ষুব্ধ মমতা ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির জোটে আগ্রহী। ভোটযুদ্ধে জিততে বিজেপি যে ভাবে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের বাহাদুরি নিয়ে দেশ জুড়ে জাতীয়তাবাদের হাওয়া তুলতে ব্যস্ত, ক্রমেই ফিরছে তার কট্টর হিন্দুত্ববাদী লাইনে— অন্য বিরোধী দলগুলিও তাতে বিরক্ত। কিন্তু এই মুহূর্তে জোট বাঁধার পরিস্থিতি নেই। তবে রাহুল-নীতীশরা জানেন, বিজেপি উত্তরপ্রদেশের ভোটে বিফল হলেই ফের মোদী-বিরোধিতার হাওয়া জোর পাবে। সে জন্য সব পথ খোলা রাখতে চান তাঁরা। একটি অঘটন সেই রাস্তাটা আপাতত খুলে দিল!