যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। —ফাইল চিত্র।
র্যাগিংয়ের জেরে যে ছাত্রমৃত্যু নিয়ে উত্তাল হয়েছিল রাজ্য, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই ঘটনার পরে মাত্র দু’মাস পেরিয়েছে। এর মধ্যেই আবারও র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠল ওই বিশ্ববিদ্যালয়েই! একটি নয়, দু’টি এমন ঘটনা ঘটেছে বলে সূত্রের খবর। যদিও মনে করা হচ্ছে সেই দু’টি ঘটনার মধ্যে একটি ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার অনেক আগেই ঘটেছে। তার অভিযোগ সামনে এসেছে সম্প্রতি। ঘটনাগুলি নিয়ে প্রশাসনিক তৎপরতার অভাব দেখা গিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। আরও অভিযোগ, এই প্রশাসনিক গড়িমসির কারণেই অগস্টের ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।
নতুন করে দু’টি র্যাগিংয়ের অভিযোগ ইউজিসি-র হেল্পলাইনে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে তা বিশ্ববিদ্যালয়কে জানানো হয়েছে। সূত্রের খবর, এই দুই র্যাগিংয়ের অভিযোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কী পদক্ষেপ করেছে, তা নিয়ে সোমবার ইউজিসি-র পক্ষ থেকে কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে।
সূত্রের খবর, র্যাগিংয়ের অভিযোগ দু’টি নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াডের মিটিং ডাকতে চেয়েছিলেন এই স্কোয়াডের চেয়ারম্যান, ‘ফার্মাসিউটিক্যাল টেকনোলজি’ বিভাগের অধ্যাপক সন্ময় কর্মকার। কিন্তু প্রশাসনিক টালবাহানায় সেই বৈঠক ডাকা হয়নি, এমন অভিযোগ করে সোমবার তিনি অন্তর্বর্তী উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউকে চিঠিও দেন। এই পরিস্থিতিতে তিনি স্কোয়াডের চেয়ারম্যান পদে কেন থাকবেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
সূত্রের খবর সাম্প্রতিক র্যাগিংয়ের দু’টি ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও হস্টেলে ঘটেনি। ঘটেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেই। একটি ঘটেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন ক্যাম্পাসে অর্থনীতি বিভাগের বর্তমানে তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়ার সঙ্গে। অন্যটি ঘটেছে সল্টলেক ক্যাম্পাসে এক কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়ার সঙ্গে। এই ঘটনা চলতি শিক্ষাবর্ষে ঘটেনি বলেই খবর। তবে এ মাসে এই ঘটনা দু’টি নিয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছে।
সূত্রের খবর, অন্তর্বর্তী উপাচার্যকে সন্ময় জানিয়েছেন, ১৩ অক্টোবর তিনি র্যাগিংয়ের অভিযোগের বিষয়ে জানতে পেরে দ্রুত অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াডের বৈঠক ডাকার জন্য সচেষ্ট হন। বিষয়টি স্কোয়াডের আহ্বায়ককে জানান। অন্তর্বর্তী উপাচার্যের দফতর, সহ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রারকে ই-মেল করেও তিনি কোনও সদর্থক সাড়া পাননি। ডিন অব স্টুডেন্টসও এই বিষয়ে জেনেছিলেন। এ দিন গোটা বিষয় নিয়ে অন্তর্বর্তী উপাচার্যকে প্রশ্ন করা হলে তিনি অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
অগস্টে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বারবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠছে। কিন্তু ওই ঘটনার পরে দু’মাসের বেশি অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখনও কোনও রকম পদক্ষেপ কর্তৃপক্ষ করেননি। এর মধ্যে অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াডের বৈঠকে এই তদন্ত কমিটির বিভিন্ন সুপারিশ গ্রহণের পাশাপাশি বিষয়গুলি দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি উঠেছিল।
সোমবার স্কোয়াডের পর্যবেক্ষণ নিয়ে আলোচনা হয় অ্যান্টি র্যাগিং কমিটির বৈঠকে। কিন্তু সেখানে কোনও পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত হয়নি বলেই খবর। এরই মধ্যে আবারও দু’টি র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ প্রশাসনিক গড়িমসির।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি পড়ে যাচ্ছে। ক্যাম্পাসে অনেকেরই বক্তব্য, দীর্ঘসূত্রিতার জেরে বিষয়গুলিকে এরপর গুরুত্বহীন করে দেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (জুটা) সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় এ দিন বলেন, ‘‘১০ অগস্ট ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার পরেও কর্তৃপক্ষ দোষীদের শাস্তির ক্ষেত্রে ইচ্ছে করে টালবাহানা করছেন। ওই ঘটনা থেকে কর্তৃপক্ষ যে কোনও শিক্ষাই নেননি, এই ঘটনা আরও একবার তা প্রমাণ করে দিল।’’
বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের ছাত্র সংসদের (আফসু) পক্ষে তর্পণ সরকার বলেন, ‘‘দু’মাস আগের
ঘটনা থেকেও কর্তৃপক্ষ শিক্ষা না নিয়ে যে ভাবে আবারও র্যাগিংয়ের অভিযোগ ধামাচাপা দিতে চাইছেন, তা অন্যায়।’’