—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
ডিসেম্বরেও আনাজের ঊর্ধ্বমুখী দামে মাথায় হাত ক্রেতার। শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণের বিভিন্ন বাজারে ঘুরে নজরে পড়ল পেঁয়াজ, টম্যাটো, রসুনের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে। শীতকালীন আনাজ মটরশুঁটি, শিম, বেগুন, পেঁয়াজকলি, বাঁধাকপির দাম গড়ে ২০ টাকা করে বেশি। ক্ষমতায় আসার পরেই আনাজের দাম নিয়ন্ত্রণে টাস্ক ফোর্স গড়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বছরের বেশির ভাগ সময়েই আনাজের অস্বাভাবিক দাম দেখে সেই টাস্ক ফোর্সের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
ক্রেতাদের প্রশ্ন, টাস্ক ফোর্সের সদস্যেরা মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন বাজার পরিদর্শনে যান। কিন্তু আনাজের দাম তাতেও না কমলে টাস্ক ফোর্স কেমন কাজ করছে? টাস্ক ফোর্সের সদস্য তথা ‘ফোরাম অব ট্রেডার্স অর্গানাইজেশন’-এর সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ কোলের যদিও দাবি, ‘‘শীতকালীন আনাজের দাম যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে পেঁয়াজ, রসুন, টম্যাটোর দাম তুলনায় বেশি। কারণ, এই তিনটি আনাজের বেশির ভাগই আসে বাইরের রাজ্য থেকে। সেই আমদানি কম হওয়ায় এই মূল্যবৃদ্ধি।’’
মঙ্গলবার মানিকতলা বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল কেজি প্রতি ৬০ টাকা। রসুন, টম্যাটো, মটরশুঁটি বিকিয়েছে যথাক্রমে ৩০০, ৬০ এবং ১০০ টাকায়। রসুনের দাম গত কয়েক দিন ধরে আকাশ ছোঁয়া হওয়ায় চিন্তিত ক্রেতারা। টম্যাটো ও মটরশুঁটির অনিয়ন্ত্রিত মূল্যে ভেবেচিন্তে বাজার করছেন ক্রেতারা। বাদ যায়নি শিম-বেগুনের দামও। এ দিন শিম কেজি প্রতি ৫০ টাকা এবং বেগুন এক কেজি ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেল কয়েকটি বাজারে। দক্ষিণ কলকাতার বাঘা যতীন বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল কিলো প্রতি ৭০ টাকা। অন্যান্য আনাজের দরও সেখানে মানিকতলা বাজারের মতোই ছিল। গত বছরের ডিসেম্বরে শীতকালীন আনাজের দাম যা ছিল, তার থেকে এ বছর গড়ে ২০ টাকা করে বেড়েছে বলে জানাচ্ছেন ক্রেতাদের একটি অংশ।
শীত পড়লেও আনাজের দামে নিয়ন্ত্রণ নেই কেন? রবীন্দ্রনাথ কোলের দাবি, ‘‘এই মরসুমে রসুন আমাদের রাজ্যে উৎপাদন হয় না। জানুয়ারি থেকে রাজ্যে পাওয়া যাবে। রসুন মূলত আসে মিজেরাম, নাগাল্যান্ড, নাসিক থেকে। কিন্তু ওই সব এলাকায় রসুনের ফলন ভাল না হওয়ায় প্রয়োজনের তুলনায় কম এ রাজ্যে ঢুকছে। যার জন্য দাম বেড়েছে রসুনের।’’
পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হওয়ার নেপথ্যে রাজ্য কৃষি দফতরের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, এ রাজ্যে জানুয়ারি থেকে পরবর্তী তিন মাস পর্যন্ত পেঁয়াজ মাঠ থেকে উঠবে। বাকি পেঁয়াজ আসে মূলত দক্ষিণ ভারত থেকে। নাসিক-সহ দক্ষিণ ভারতের অন্যান্য প্রান্তে পেঁয়াজের ফলনও ভাল না হওয়ায় আমদানি যথেষ্ট না হওয়াই দামবৃদ্ধির কারণ।
সেই সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ কোলের সংযোজন, ‘‘কেন্দ্র রফতানিকৃত আনাজের উপরে চল্লিশ শতাংশ কর সংগ্রহ করায় পেঁয়াজের দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন দক্ষিণ ভারতের চাষিরা। এটিও দাম বাড়ার একটি কারণ।’’ তাঁর আশা, জানুয়ারি থেকে এ রাজ্যের পেঁয়াজ মাঠ থেকে উঠলে বাজারে দাম কমবে। কলকাতা লাগোয়া জেলাগুলি থেকে শীতকালীন আনাজের আমদানি সপ্তাহ দুয়েক পর আরও বাড়লে সেগুলির দাম তখন কমবে বলেও আশ্বাস টাস্ক ফোর্সের সদস্যের।