ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্ট নিয়ে বিস্তর টানাপড়েনের পরে রাজ্যে স্বাস্থ্য কমিশন গড়া হয়েছে। কিন্তু যার ভিত্তিতে তাদের কাজকর্ম চালানোর কথা, সেই বিধিরই দেখা নেই। তা সত্ত্বেও কমিশন ইতিমধ্যে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। কিন্তু বিধি না-থাকা সত্ত্বেও রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশন কেন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, কী ভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, প্রশ্ন উঠছে আইনজীবী মহলে।
বিধি ছাড়াই কাজকর্ম নিয়ে প্রশ্নের পাশাপাশি স্বাস্থ্য কমিশনে এক সদস্যের নিয়োগের বিষয়টিও প্রশ্নের মুখে পড়েছে। সুপ্রিম কোর্টে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরেও এক ডাক্তারকে এই ধরনের একটি কমিশনের পদে রাখা হচ্ছে কেন, সেই প্রশ্ন তুলেছেন প্রবাসী চিকিৎসক কুণাল সাহা।
এই সব প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) কিশোর দত্ত শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে জানিয়ে দেন, যত দিন না বিধি তৈরি হচ্ছে, স্বাস্থ্য কমিশন তত দিন তাদের কাজকর্ম বন্ধ রাখছে। এজি একই সঙ্গে জানান, ওই বিধি তৈরির কাজ শেষ বলে রাজ্য সরকারের তরফে তাঁকে জানানো হয়েছে। সরকার শীঘ্রই সেই বিধি সংক্রান্ত গেজেট বিজ্ঞপ্তি জারি করবে।
স্বাস্থ্য কমিশন নিয়ে জনস্বার্থে মামলা দায়ের হয়েছে। সেই মামলার শুনানি চলছে কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রের ডিভিশন বেঞ্চে। এ দিনের শুনানিতে এজি আদালতে জানান, বিধি চূড়ান্ত হওয়ার আগে পর্যন্ত কমিশনের কাজ বন্ধ থাকছে। তত দিন তারা কোনও সিদ্ধান্তও নেবে না। এজি-র বক্তব্য শুনে বিচারপতি মাত্রে জানিয়ে দেন, মামলার শুনানি ২৫ অগস্ট পর্যন্ত মুলতুবি থাকছে।
মামলার আবেদনকারী তথা আইনজীবী শ্রীকান্ত দত্ত জানান, গত এপ্রিল থেকে বিভিন্ন শুনানিতে বিচারপতি মাত্রে রাজ্য সরকারের কাছে জানতে চেয়েছেন, স্বাস্থ্য কমিশন আইন তৈরি হলেও তার বিধি কবে তৈরি হবে। আদালতের কাছে এই ব্যাপারে বারবার সময় চেয়েছে সরকার। কিন্তু তারা এখনও স্বাস্থ্য কমিশনের বিধি তৈরি করে উঠতে পারেনি বলে শ্রীকান্তবাবুর অভিযোগ।
বিধি চূড়ান্ত না-হওয়া সত্ত্বেও কমিশন কিন্তু কাজ শুরু করে দিয়েছে। কিছু সিদ্ধান্তও নিয়েছে। বিধি তৈরির বিজ্ঞপ্তি শীঘ্রই জারি করা হবে বলে এজি আশ্বাস দিয়েছেন জেনে আইনজীবীদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, বিধি তৈরির আগে কমিশন সিদ্ধান্ত নিল কেন? নিলই বা কী করে? মামলার আবেদনকারী অবশ্য এই বিষয়ে আদালতে কোনও প্রশ্ন তোলেননি। আদালতেও এই ব্যাপারে আলোচনা হয়নি। তবে আইনজীবী শিবিরের একটি অংশের বক্তব্য, বিধি তৈরির পরে যদি দেখা যায় ইতিমধ্যে কমিশনের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো বিধির পরিপন্থী, তা হলে সেই সব সিদ্ধান্তকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে।
স্বাস্থ্য কমিশনের সদস্য হিসেবে রাজ্য এক প্রবীণ চিকিৎসককে নিযুক্ত করেছে। সুপ্রিম কোর্ট ওই চিকিৎসককে দোষী সাব্যস্ত করা সত্ত্বেও তিনি কমিশনের সদস্য থাকবেন কেন, সেই প্রশ্ন তুলে জনস্বার্থ মামলায় যুক্ত হয়েছেন প্রবাসী চিকিৎসক কুণাল সাহা। কুণালবাবুর কৌঁসুলি ইন্দ্রনীল রায় হাইকোর্টে আবেদন জানান, তাঁর মক্কেল বিদেশ থেকে ভিডিও-সম্মেলনের মাধ্যমে তাঁর বক্তব্য পেশ করতে চান। ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের কাছে ওই আবেদনের নোটিস পাঠাতে হবে।