জীর্ণ ফ্রন্টে কাজ কি, প্রশ্ন বামেই

চার দশকেরও বেশি পুরনো বামফ্রন্টের চেনা কাঠামো নিয়ে আর কি ফিরে আসার লড়াই সম্ভব? আলোচনার টেবিলে পরস্পরের মুখোমুখি বসে এই প্রশ্ন এখন তুলছে বাম শরিকেরা।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৮ ০৩:৫২
Share:

প্রতীকী ছবি।

লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করা উচিত কি না, তা নিয়ে তর্ক আছে। কিন্তু তার বাইরে আরও বড় প্রশ্ন, চার দশকেরও বেশি পুরনো বামফ্রন্টের চেনা কাঠামো নিয়ে আর কি ফিরে আসার লড়াই সম্ভব? আলোচনার টেবিলে পরস্পরের মুখোমুখি বসে এই প্রশ্ন এখন তুলছে বাম শরিকেরা। বামফ্রন্টের বাইরের ছোট বাম দলগুলিও ফ্রন্টের খোলনলচে বদলানোর পক্ষপাতী। চলতি মাসেই আরও কিছু দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এই তর্কে আরও ঝ়ড় ওঠার সম্ভাবনা।

Advertisement

প্রায় ১০ বছর ধরে বামফ্রন্টের ভোটবাক্সে রক্তক্ষরণ অব্যাহত। অন্য দিকে আবার রাজনীতির মোড় ঘোরানোর মতো কোনও আন্দোলনও তারা সাম্প্রতিক কালে গড়ে তুলতে ব্যর্থ। ফ্রন্টের ভিতরে ও বাইরের বেশ কিছু নেতার মত, গণ-আন্দোলনের উত্তাল ঢেউয়ের উপরে দাঁড়িয়ে যে বামফ্রন্ট তৈরি হয়েছিল, তার ভিত অনেকটাই নড়বড়ে এখন। শুধু নির্বাচনী সমঝোতায় লাভ নেই। মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা ফিরে পেতে হলে বামফ্রন্টকে চেহারা বদলাতে হবে। ভোটে বিপর্যয়ের হতাশা ছেড়ে লাগাতার আন্দোলনের রাস্তাতেই থাকতে হবে।

জ্যোতি বসু, প্রমোদ দাশগুপ্ত, অশোক ঘোষেরা বলতেন, ‘বামফ্রন্টকে চোখের মণির মতো রক্ষা করতে হবে’। অশোকবাবুরই দল ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায় এখন বলছেন, ‘‘বামফ্রন্ট ‘ব্র্যান্ড’টারই বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হয়েছে। অন্যান্য বাম শক্তিকে সামিল করে ‘বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট’ বা ‘বাম সংহতি কমিটি’ গড়তে হবে। সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আমরা আলোচনা করছি।’’

Advertisement

সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যও মেনে নিচ্ছেন, ‘’৩৪ বছর সরকারে থাকার ফলে কোনও একটা বিষয়ের প্রতি যে দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের তৈরি হয়েছে, সেখান থেকে বেরোনো যাচ্ছে না। বিরোধী হিসেবে তৃণমূল নেত্রীকে যে কোনও প্রশ্নে যে ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখে মানুষ অভ্যস্ত, আমাদের সে ভাবে দেখা যাচ্ছে না। হতে পারে, তাতে সমস্যা বাড়ছে।’’

এখন প্রশ্ন হল, এই সঙ্কট থেকে বেরোনোর পথ কী? বাম শিবিরেই তিন ধরনের মত আছে। প্রথম মত, লম্বা সময়ের সরকারে যাঁরা মুখ ছিলেন এবং ভোটে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন, তাঁদের নেপথ্যে চলে যাওয়া উচিত। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যে পথ বেছে নিয়েছেন। দ্বিতীয় মত, অভিজ্ঞ কিছু নেতাকে রেখে তরুণ রক্তকে সংগঠনে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্রেরা যে কথা বলছেন। এবং তৃতীয় মত, সিপিএমকে সামনে রেখে কোনও ফ্রন্টের আর বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। আবার সিপিএমকে বাদ দিয়ে কোনও বাম ঐক্যও সম্ভব নয়। তাই অন্যদের সামনে এনে নতুন কাঠামো তৈরি করা উচিত। কিছু শরিক ও অন্য বাম নেতৃত্ব যে দাবি তুলছেন।

সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য মনে করছেন, হতাশার মধ্যেও রাজ্যের নানা জায়গায় যে ছোট ছোট গণপ্রতিরোধ গড়ে উঠছে, তার থেকে শিক্ষা নিতে হবে। আর সংগঠনের কাজে নেতাদের সক্রিয় হতে হবে। দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যবাবুর মতে, ‘‘পুরনো নেতারা বলতেন, গরুর গাড়ির চাকা কাদায় আটকে গেলে শুধু গরুকে খোঁচা মারলে হয় না। গাড়োয়ানকে নেমে কাঁধ দিয়ে চাকা ঠেলতে হয়। এই কাজ উপরের কমিটির নেতাদেরই করতে হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement