—ফাইল চিত্র।
সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংস্কারে অর্থ দফতরের উপর নির্ভরতা কিছুটা কমাল রাজ্য সরকার। সরকারি সিদ্ধান্তে গোটা বছর ধরে নিজেদের হাতে থাকা সব সেতু, উড়ালপুল এবং রেল ওভারব্রিজের (আরওবি) নিয়মমাফিক পর্যবেক্ষণ করবেন পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়াররা। বছরে এক বার বিশেষজ্ঞ সংস্থা নিয়োগ করে হবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা। শেষ কাজটির জন্য অর্থ দফতরের সম্মতি নিয়ে আগেভাগে সংস্থার তালিকা তৈরি করে রাখবে পূর্ত দফতর। সংস্থাগুলির দরও প্রথম থেকে নির্দিষ্ট থাকবে।
বর্তমানে এই ধরনের সংস্থা নিয়োগের পদ্ধতি ভিন্ন ও সময়সাপেক্ষ। সেই কাজে এবার আগেভাগে অর্থ দফতরের সম্মতি নিয়ে সময় বাঁচাতে চাইছে পূর্ত দফতর। সংশ্লিষ্ট কর্তারা জানাচ্ছেন, অর্থ দফতরের মঞ্জুরি পেতে যে প্রশাসনিক দৌত্য চালাতে হয়, তাতেই অনেক ক্ষেত্রে বাড়তি সময় লাগে। যেমন কাজের পরিকল্পনা, দরপত্র ডাকা, প্রস্তাবিত দর সরকারি মানদণ্ডে ওঠানামা করলে অর্থ দফতরের মঞ্জুরি নেওয়া, তার পরে কাজের বরাত—এমন দীর্ঘ প্রক্রিয়া চালাতে হয় জরুরি কাজেও। যেমন, ভেঙে পড়ার অনেক আগে মাঝেরহাট সেতুর সংস্কারের কাজে ডাকা দরপত্রে সরকার প্রস্তাবিত দরের থেকে ১৬.৫ শতাংশ বেশি অর্থ ঠিকাদার দাবি করেছিল বলেই অর্থ দফতরের সঙ্গে দীর্ঘ টানাপড়েন চলেছিল পূর্ত দফতরের।
এ বার বিজ্ঞপ্তি জারি করে পূর্ত দফতরের অধীনে থাকা ‘ব্রিজ ইনসপেকশন অ্যান্ড মনিটরিং সেল’কে বিশেষজ্ঞ সংস্থাগুলির নাম নথিবদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন পূর্ত সচিব অর্ণব রায়। নতুন পদ্ধতিতে নির্ধারিত তালিকা (যা অর্থ দফতরের আগাম অনুমোদন নিয়ে তৈরি হবে) থেকে বিশেষজ্ঞ সংস্থাকে প্রয়োজনমতো নিয়োগ করা যাবে। তাদের টাকা মিটিয়ে দেবে পূর্ত দফতরই। ফলে অর্থ দফতরের সঙ্গে ফাইল চালাচালির প্রয়োজন কমিয়ে আনা যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে।সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সেতু, উড়ালপুল ও আরওবি’গুলির নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ নিশ্চিত করবেন সংশ্লিষ্ট ডিভিশনের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার। প্রতি বছরের ফেব্রুয়ারি, মে, অগস্ট ও নভেম্বর মাসে চার দফায় সেগুলির অবস্থা খতিয়ে দেখবেন দফতরের ইঞ্জিনিয়াররা। নথিভুক্ত বিশেষজ্ঞ সংস্থাকে দিয়ে বছরে এক বার সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষাও হবে। তাদের প্রস্তাব মেনে সংস্কারের কাজ করবে সরকার।
পূর্ত দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘মাঝেরহাট-কাণ্ডের পরেই বোঝা গিয়েছিল, খালি চোখে সেতু পরীক্ষা সম্ভব নয়। প্রকৃত ক্ষয় কোথায় হয়েছে, কংক্রিট বা ইস্পাতের মান কেমন রয়েছে— তা সেতুর শরীরে ক্ষত তৈরি না করেই প্রযুক্তি ও উন্নত যন্ত্রের মাধ্যমে বোঝা সম্ভব। সরকারের হাতে এই সব দামী যন্ত্র বা প্রযুক্তি থাকে না। সেই কারণে বিশেষজ্ঞ সংস্থার প্রয়োজন। এমপ্যানেলড তালিকা থেকে সংস্থার নিয়োগে এই সুবিধা মিললে কার্যকারিতা অনেক বাড়বে।’’