সাংবাদিক বৈঠকে জেলা পুলিশ সুপার। —নিজস্ব চিত্র।
জেলা জুড়ে একের পর এক ডাকাতি! তার মধ্যে গত ছ’মাসেই তিন-তিনটে ঘটনা ঘটে গিয়েছে। তা রুখতে নাভিশ্বাস উঠছিল তদন্তকারীদের। পুরুলিয়া তো বটেই, পড়শি ঝাড়খণ্ডেও ডাকাতদলের লোকেরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় বিপাকে পড়ছিলেন তাঁরা! তার উপর ডাকাতির পর পুলিশের চোখে ধুলো দিতে এক এক করে সব সূত্রও নষ্ট করে দিচ্ছিল ডাকাতদলটি। যার ফলে তাদের নাগাল পেতে আরও হিমশিম খেতে হচ্ছিল পুলিশকে। কিন্তু হাল ছাড়েননি তদন্তকারীরা। শেষ পর্যন্ত খালি মদের বোতলই ধরিয়ে দিল সেই ডাকাতদলকে!
বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া জেলা পুলিশ জানিয়েছে, জেলার সাঁওতালডিহি থানা এলাকা ও পার্শ্ববর্তী রাজ্য ঝাড়খণ্ডে হানা দিয়ে ওই চক্রের ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে ছ’টি আগ্নেয়াস্ত্র, কার্তুজ ও কিছু নথিপত্র মিলেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের মধ্যে তিন জনের বাড়ি পুরুলিয়ার সাঁওতালডিহি থানার পারবহাল গ্রামে। দু’জন ঝাড়খণ্ডের ধানবাদ জেলার কাটরাস ও এক জন ওই রাজ্যেরই চন্দনকেয়ারির বাসিন্দা।
২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর বাজার, আদ্রা থানার সুভাষ নগর, আড়ষা থানার সেনাবনা ও পুরুলিয়ার মফস্সল থানার নদীয়াড়া গ্রামে একাধিক ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে শেষ তিনটি ডাকাতির ঘটনা ঘটে গত ছ’মাসে। পুলিশ জানিয়েছে, প্রতিটি ঘটনায় ডাকাতদল এতটাই পেশাদার ছিল যে, তেমন কোনও সূত্রই মিলছিল না। সেনেবনা ও নদীয়াড়া গ্রামের ডাকাতির ঘটনায় ডাকাতদল একাধিক মোবাইল ফোন লুট করে নিয়ে গেলেও, পরে তা একটি পরিত্যক্ত জায়গায় ঝোপের মধ্যে ফেলে দেয়। পুলিশের নজর এড়াতে নদীয়াড়া গ্রামে ডাকাতির ঘটনার পর অকুস্থলের সিসি ক্যমেরার হার্ড ডিস্কও খুলে নিয়ে যায় তারা। এই ঘটনাগুলির তদন্তে নেমে ডাকাতির ধরন ও সূত্র নষ্ট করার কৌশল দেখে তদন্তকারীরা একপ্রকার নিশ্চিত ছিলেন যে, সব ক’টি একটি ডাকাতদলেরই কাজ। শুধু এ রাজ্যেই নয়, পড়শি জেলাতেও নানা জায়গায় তারা ডাকাতি করেছে বলে খবর পেয়েছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশ জানিয়েছে, গত ৯ মে পুরুলিয়ার মফস্সল থানার নদীয়াড়ায় ডাকাতির ঘটনার তদন্তে নেমে ঘটনাস্থল থেকে একটি খালি মদের বোতল উদ্ধার হয়। ওই মদের বোতলই পরে তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অন্যতম হাতিয়ার হয়ে ওঠে। বোতলের গায়ে লাগানোর কিউআর কোড স্ক্যান করে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, কোন দোকান থেকে সেটি কেনা হয়েছে। এর পর গোপন সূত্র মারফত আরও তথ্য জোগাড় করে ডাকাতদলটির সন্ধান মেলে। তার পরেই সাঁওতালডিহি ও পড়শি রাজ্যে অভিযান চালিয়ে ডাকাতদলের লোকেদের গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই ডাকাতদলটি অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে যে ভাবে একের পর এক ডাকাতি করছিল, তাতে তাদের চিহ্নিত করা সহজ ছিল না। কিন্তু আমরা ওদের ফেলে রেখে যাওয়া মদের বোতল ও অন্যান্য সূত্র ধরে শেষ পর্যন্ত ছ’জনকে গ্রেফতার করতে পেরেছি। ওই দলে আর কেউ যুক্ত ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ধৃতদের প্রথমে টিআই প্যরেড করানো হবে। পরে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’’