স্কুলবাড়ি অর্ধ নির্মিত হয়ে পড়েছিল ১৩ বছর। কিন্তু স্কুল চালুর অনুমোদন মিলছিল না। অবশেষে অনুমোদন মিলল পাত্রসায়র ব্লকের সেই জুনিয়র গার্লস হাইস্কুলের।
সম্প্রতি রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতর ওই স্কুলে পঠন পাঠন শুরু করার অনুমতি দিয়েছে। পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার জানান, স্কুল শিক্ষা দফতর থেকে এ দিনই তাঁর কাছে বালসি জুনিয়র গার্লস হাইস্কুল চালু করার সম্মতিপত্র এসেছে। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে স্কুলটি চালু করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। বাঁকুড়া জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) নির্মাল্য দে বলেন, “জেলায় বেশ কয়েকটি নতুন জুনিয়র স্কুলের অনুমোদন মিলেছে। তারমধ্যে বালসি জুনিয়র হাইস্কুলটিও রয়েছে।” শিক্ষা দফতরের সম্মতি পেয়ে প্রত্যাশিত ভাবে খুশি এলাকাবাসী।
দীর্ঘদিন ধরে বালসির বাসিন্দারা এলাকায় একটি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় নির্মাণের জন্য দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তাঁদের সেই দাবি মেনেই বালসি পশ্চিমপাড়া মৌজায় প্রস্তাবিত বালিকা জুনিয়র উচ্চবিদ্যালয় তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। বালসি হাইস্কুলের শিক্ষক গোপাল পাল, মধুসূদন ঘোষ, মোহন ঘোষ-সহ কয়েকজন গ্রামবাসী আড়াই বিঘে জমি দান করেন এই স্কুল নির্মাণের জন্য। বালসি পশ্চিমপাড়ায় তাঁদের দান করা সেই জমিতেই ২০০১ সালের ১২ মার্চ ওই বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক শিলান্যাস করেন বাঁকুড়া জেলা পরিকল্পনা কমিটির তদানীন্তন সদস্য তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্র। বিষ্ণুপুরের তত্কালীন সাংসদ সুস্মিতা বাউরি সাংসদের এলাকা উন্নয়নের তহবিল থেকে এবং ইন্দাসের তত্কালীন বিধায়ক নন্দদুলাল মাঝি বিধায়কের এলাকা উন্নয়নের তহবিল থেকে ৬ লক্ষ টাকা দান করেছিলেন এই স্কুলভবন নির্মাণের জন্য।
প্রশাসন সূত্রের খবর, সাংসদ তহবিল থেকে প্রাপ্ত অর্থে স্কুলের ১২টি শ্রেণিকক্ষ তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। চারবছর ধরে সেই কাজ হয়। ৮টি ঘরে ছাদ ঢালাইয়ের কাজও হয়ে গিয়েছিল। তারপর হঠাত্ ২০০৫ সালে স্কুল ভবন তৈরির কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে প্রস্তাবিত এই বালিকা বিদ্যালয় তৈরির কাজ। স্কুল ভবন তৈরির কাজ এ ভাবে মাঝপথে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ এলাকার বাসিন্দারা। কারণ এলাকায় ৮-১০ কিলোমিটারের মধ্যে মেয়েদের কোনও হাইস্কুল নেই। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব অভিযোগ তুলেছিল, তত্কালীন সিপিএম নেতারা স্কুল চালুর উদ্যোগ নিলেও শিক্ষা দফতরের কাছে প্রয়োজনীয় অনুমোদনই করাতে পারেনি। তাই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যদিও সিপিএম নেতৃত্ব অনুমোদন না দেওয়ার দায় চাপিয়েছিল স্কুল শিক্ষা দফতরের উপরে। অর্ধনির্মিত স্কুলঘরে নিয়মিত মদ-জুয়ার আসর বসছিল বলে বাসিন্দাদের একাংশ অভিযোগ তোলেন। তাঁরা অবিলম্বে এই স্কুল ভবন তৈরির কাজ শেষ করে স্কুল চালুর দাবিতে সরব হন। আনন্দবাজার পত্রিকায় সেই খবর প্রকাশিত হয় গত ১১ অক্টোবর।
অবশেষে তাঁদের দাবি পূরণ হওয়ায় খুশি এলাকাবাসী। স্কুল নির্মাণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলনের প্রথম সারিতে সামিল থাকা স্থানীয় বাসিন্দা কল্যাণ কোঙার, বালসি ২ পঞ্চায়েত প্রধান বুদ্ধদেব পাল এ দিন বলেন, “এলাকায় একটি বালিকা বিদ্যালয় তৈরি হোক এটাই ছিল আমাদের দাবি। দেরিতে হলেও আমাদের সেই দাবি পূরণ হতে চলেছে। আমরা খুশি। এ বার শীঘ্রই ওই অসম্পূর্ণ বিদ্যালয় ভবনের কাজ সম্পূর্ণ করে সেখানেই স্কুলটি চালু করা হোক, এটাই আমরা চাইছি।”
পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপবাবু বলেন, “এলাকার মানুষ ওই বালিকা বিদ্যালয়টি চালু করার জন্য অনেক আন্দোলন করেছেন। বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী ও পরিষদীয় সচিব অরূপ খাঁয়ের প্রচেষ্টায় এই জুনিয়র স্কুলটি চালু করার অনুমোদন মিলেছে।” তিনি জানান, বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ, ইন্দাসের বিধায়ক গুরুপদ মেটের কাছে অসম্পূর্ণ এই স্কুলভবনটির নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য অর্থ সাহায্যের আবেদন জানানো হয়েছে। পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুচাঁদ দাস বলেন, “স্কুলভবন নির্মাণের জন্য পঞ্চায়েত সমিতির ফান্ড থেকেও অর্থ বরাদ্দের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি এলাকার মানুষের কাছেও স্কুল চালুর জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হবে।”