বাঁকুড়ার রাইপুরে প্রীতিলতা কেন্দ্রীয় ছাত্রী আবাসের সুপারের বিরুদ্ধে এ বার পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করলেন রাইপুরের বিডিও। বুধবার রাইপুর থানায় তিনি অভিযোগ জমা দেন। বিডিও দীপঙ্কর দাস বলেন, “সরকারি সার্ভিস রুল ভঙ্গ করেছেন প্রীতিলতা কেন্দ্রীয় ছাত্রী আবাসের সুপার তাপসী দে। তিনি প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন, এমনকী আবাসিক ছাত্রীদের মিথ্যা অভিযোগ করাতে প্ররোচিত করেছেন। এরই পাশাপাশি আরও কিছু অভিযোগ রয়েছে ওই সুপারের বিরুদ্ধে। তাই বাধ্য হয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।” এসডিপিও (খাতড়া) কল্যাণ সিংহ রায় বলেন, “বিডিও-র দায়ের করা অভিযোগ প্রাথমিক ভাবে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”
গত শুক্রবার ওই কেন্দ্রীয় ছাত্রী আবাসের নানা অব্যবস্থা নিয়ে সুপারের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে রাইপুর পঞ্চায়েত সমিতির জনস্বাস্থ্য স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ আশা মণ্ডল হেনস্থার শিকার হন বলে অভিযোগ। ছাত্রী আবাসের মধ্যে তাঁকে আটকে রাখা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করেছিল। পরে হস্টেল সুপারের বিরুদ্ধে তিনি পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। শনিবার ওই কর্মাধ্যক্ষ, কলেজের দুই ছাত্রী-সহ চারজনের বিরুদ্ধে থানায় পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন হস্টেল সুপার। সোমবার খাতড়া আদালতে আত্মসমর্পণ করে হস্টেল সুপার জামিন পান।
এরই মধ্যে সোমবার নতুন করে ওই ঘটনার প্রতিবাদে ছাত্রী আবাসের সামনে মঞ্চ বেঁধে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করে তৃণমূলের রাইপুর ব্লক সভাপতি জগবন্ধু মাহাতোর গোষ্ঠী। বিডিওকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তাঁরা। অন্য দিকে প্রীতিলতা কেন্দ্রীয় আবাসের প্রায় ৫০ জন ছাত্রী ওই দিনই লিখিত ভাবে তাঁদের নিরাপত্তা চেয়ে বাঁকুড়ার জেলাশাসক ও অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের জেলা প্রকল্প আধিকারিকের কাছে ই-মেল করেন। অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের জেলা প্রকল্প আধিকারিক স্বরূপ শিকদার বৃহস্পতিবার বলেন, “রাইপুরে গিয়ে ওই কেন্দ্রীয় ছাত্রী আবাস সরজমিনে পরিদর্শন করে এসেছি। সুপার ও ছাত্রীদের কাছ থেকে কিছু অভিযোগ পেয়েছি। তবে সুপারের কাজকর্মের ধরণ ঠিক নয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই তিনি অনেক কাজ করেছেন যাতে সরকারি নিয়মনীতিকে লঙ্ঘন করা হয়েছে।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, গত মঙ্গলবার রাইপুরের ওই ছাত্রী আবাসে তদন্তে যান খাতড়ার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ তনবীরুল হাসান। সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে তিনি রিপোর্ট মহকুমাশাসকের কাছে জমা দিয়েছেন। প্রশাসনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ওই হস্টেলের ছাত্রীরা জেলাশাসকের কাছে বিডিও-র বিরুদ্ধে কিছু আপত্তিকর অভিযোগ করেছেন। যা রীতিমত মানহানিকর। তাঁরা প্ররোচিত হয়ে ওই অভিযোগ করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ মিলেছে। মহকুমাশাসক (খাতড়া) শুভেন্দু বসু বলেন, “ওই রিপোর্ট জেলাশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। যা ব্যবস্থা নেওয়ার জেলাশাসক নেবেন।” ওই ছাত্রী আবাসের সুপার অবশ্য এ ব্যাপারে প্রথমে সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলতে চাননি। পরে তিনি বলেন, “আমি সরকারি কর্মী, বিডিও যে অভিযোগ করেছেন আমি সার্ভিস রুল ভেঙে কাজ করেছি, দুর্ব্যবহার করেছি, উনি তার প্রমাণ দিন। এ ব্যাপারে যা জবাবদিহি করার তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে করব।”