হুল দিবসের পোস্টারে মন্ত্রীর নামে ভুল, দ্বন্দ্ব প্রকট তৃণমূলে

নামে অনেক কিছুই আসে যায়। অন্তত পুঞ্চায় পোস্টারে মন্ত্রীর নাম ভুল লেখার ঘটনা পুরুলিয়ায় তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের দ্বন্দ্বকে ফের সামনে এনে দিয়েছে। তিনি শান্তিরাম মাহাতো, রাজ্যের স্বনির্ভর ও স্বনিযুক্তি দফতরের মন্ত্রী। তার উপরে তৃণমূলের জেলা সভাপতি। অথচ পুঞ্চায় হুলদিবসের একটি অনুষ্ঠানের পোস্টারে তাঁর নাম ছাপা হয়েছে, শান্তিময় মাহাতো। ওই পোস্টারে তৃণমূলের একগুচ্ছ নেতার নাম থাকলেও ভুল শুধু হয়েছে শান্তিময়বাবুর নামেই।

Advertisement

সমীর দত্ত

পুঞ্চা শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৪ ০০:৩২
Share:

এই পোস্টার ঘিরেই বিতর্ক।—নিজস্ব চিত্র

নামে অনেক কিছুই আসে যায়। অন্তত পুঞ্চায় পোস্টারে মন্ত্রীর নাম ভুল লেখার ঘটনা পুরুলিয়ায় তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের দ্বন্দ্বকে ফের সামনে এনে দিয়েছে।

Advertisement

তিনি শান্তিরাম মাহাতো, রাজ্যের স্বনির্ভর ও স্বনিযুক্তি দফতরের মন্ত্রী। তার উপরে তৃণমূলের জেলা সভাপতি। অথচ পুঞ্চায় হুলদিবসের একটি অনুষ্ঠানের পোস্টারে তাঁর নাম ছাপা হয়েছে, শান্তিময় মাহাতো। ওই পোস্টারে তৃণমূলের একগুচ্ছ নেতার নাম থাকলেও ভুল শুধু হয়েছে শান্তিময়বাবুর নামেই। অনুষ্ঠানের যাবতীয় দায়িত্বেও ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। তা হলে মন্ত্রীর নামে এই ভুল হল কী করে? এ নিয়েই পুরুলিয়ায় শুরু হয়েছে জোর জলঘোলা। ওই অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষক আবার জেলা রাজনীতিতে শান্তিরামবাবুর বিপরীত মেরুতে অবস্থান করা সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতেই আগুনে ঘি পড়েছে। ওই ভুল-কাণ্ডে এতেই আরও রং চড়েছে। বেড়েছে জ্বল্পনাও।

জেলার অন্যান্য এলাকার মতোই পুঞ্চার লাখরা গ্রামে সোমবার হুলদিবস উদ্যাপনের আয়োজন করা হয়েছিল। ওই অনুষ্ঠানের আগাগোড়াজুড়ে ছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। পোস্টারে উল্লেখ করা ছিল উদ্বোধন করতে আসছেন প্রাক্তন রেলমন্ত্রী মুকুল রায়। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকার কথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো ও জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো-র। এ ছাড়া জেলাশাসক ছাড়া তৃণমূলের বেশ কয়েকজন বিধায়কেরও থাকার কথা ছিল। ঘটনাচক্রে মুকুলবাবু, শান্তিরামবাবু ও সৃষ্টিধরবাবু ওই অনুষ্ঠানে ছিলেন না। এ দিকে ওই অনুষ্ঠানের পোস্টার পুঞ্চা ও আশপাশের এলাকায় সাঁটানো হয়। তাতে মন্ত্রীর নাম ভুল থাকার খবর পৌঁছে যায় দলের নেতাদের কাছে। পৌঁছায় মন্ত্রীর কানেও।

Advertisement

পোস্টারের তলায় অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক হিসাবে মানবাজারের বিধায়ক সন্ধ্যারানি টুডু ও পৃষ্ঠপোষক সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম লেখা ছিল। জেলার রাজনীতিতে শান্তিবাবুর সঙ্গে সুজয়বাবুদের ‘মধুর’ সম্পর্কের কথা অনেকেরই জানা। শান্তিরামবাবু দলের জেলা সভাপতি এবং সুজয়বাবু জেলা কার্যকরী সভাপতি ছিলেন। কিন্তু লোকসভা ভোটের পরে জেলা কমিটি ভেঙে দেওয়া হলেও অ্যাডহক কমিটিতে শান্তিরামবাবুর পদ থেকে যায়। অন্যদের মতোই সুজয়বাবু পদহীন নেতা হয়ে পড়েন। এ নিয়ে সুজয়বাবু পাশে পান অনেক পুরনো তৃণমূল নেতাদের। রাজ্য নেতৃত্বকে তাঁরা দাবি জানিয়েছিলেন, দুর্দিনে যারা দলকে বুক দিয়ে আগলে রেখেছিলেন তাদের যথাযোগ্য মর্যাদা দেওয়া হচ্ছে না। দলে তাঁদের সম্মানজনক পদে পুনর্বাসন করতে হবে বলে দাবি তোলেন। পুরুলিয়ার বিধায়ক কে পি সিংদেও-সহ আরও অনেকে এই দলে ভিড়েছিলেন। তারপর থেকেই শান্তিরামবাবুর সঙ্গে সুজয়বাবুদের মতো পুরনো তৃণমূলীদের দূরত্ব বাড়ে বলেই দল সূত্রের খবর।

তারপরেই ওই পোস্টারে মন্ত্রীর নাম ভুল হওয়া নিয়ে সেই দ্বন্দ্ব আবার সামনে এসে পড়েছে। শান্তিরামবাবুর অনুগামীরা শুধু মন্ত্রীর নামেই কেন ভুল, তা নিয়ে অন্য গন্ধ পাচ্ছেন। তাঁদের প্রশ্ন, ও কি নিছকই ‘ভুল’, না কি অন্য কিছু? শান্তিরামবাবুর আপ্ত সহায়ক প্রণব মাহাতো বলেন, “পোস্টারে নামের ভুলের ব্যাপারটা মন্ত্রী বুধবার জেনেছেন। তিনি খোঁজ নেওয়া শুরু করেছেন।” শান্তিরামবাবু জানান, ওইদিন তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কলকাতায় হুল দিবসের অনুষ্ঠানে ছিলেন। তাই জেলার অনুষ্ঠানে হাজির থাকতে পারেননি। তিনি বলেন, “পুঞ্চার অনুষ্ঠানে পোস্টারে আমার নামে ভুল করা হয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু ওই ভুল নাম নিয়েই পোস্টার যে সাঁটানো হয়েছে, তা কেউ আমাকে জানায়নি।”

কেন এই ভুল?

অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক মানবাজারের বিধায়ক সন্ধ্যারানি টুডুর দাবি, “পোস্টারে ছাপা ও প্রচারের দায়িত্ব দলের পুঞ্চা এলাকার নেতারা নিয়েছিলেন। পোস্টার সাঁটানো হয়ে যাওয়ার পরে ওই ভুল আমাদের নজরে এসেছে।” তাঁর মতে, ‘‘এটা মামুলি ব্যাপার।” অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষক সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ও “মামুলি বিষয়কে নিয়ে জল ঘোলা করা হচ্ছে” বলে পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর কথায়, “এটা মুদ্রণ প্রমাদ। এ নিয়ে অত হইচই করার কী আছে? তা ছাড়া সে দিন তো শান্তিরামবাবু অনুষ্ঠানে আসেনি।” শান্তিরামবাবুর পাল্টা মন্তব্য, “যদি মুদ্রণ প্রমাদের জন্যই এমনটা হয়ে থাকে, তাহলে আমাকে জানালেও পারতেন। কী কারণে এমনটা হয়েছে খোঁজ নিচ্ছি।”

জল কতদূর গড়ায়, তাকিয়ে রয়েছেন জেলার রাজনীতি সচেতন মানুষ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement