সম্প্রীতির কালীপুজো মহম্মদবাজারের গ্রামে

গ্রামের মাঝখানে প্রাচীন বটগাছ। তার নীচে সিমেন্টের পাকা বেদী। কে কবে সেই বেদী তৈরি করেছিলেন গ্রামবাসীদের তা অজানা। তাঁরা শুধু জানেন কালীপুজোর দিন এই বেদী চত্ত্বরে কবিগানের ঢোল বাজার শব্দ পেতেই গ্রামের হিন্দু এবং মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ জন জড়ো হন এবং গ্রামের সুখ, সমৃদ্ধি বৃদ্ধির পাশাপাশি জাতপাত বিভেদ ভুলে দীর্ঘদিনের প্রাচীন ঐতিহ্য সম্প্রীতি অক্ষুন্ন রাখার জন্য কালীর কাছে তাঁরা প্রার্থনা করেন।

Advertisement

অরুণ মুখোপাধ্যায়

মহম্মদবাজার শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৪ ০১:৩৯
Share:

গ্রামের মাঝখানে প্রাচীন বটগাছ। তার নীচে সিমেন্টের পাকা বেদী। কে কবে সেই বেদী তৈরি করেছিলেন গ্রামবাসীদের তা অজানা। তাঁরা শুধু জানেন কালীপুজোর দিন এই বেদী চত্ত্বরে কবিগানের ঢোল বাজার শব্দ পেতেই গ্রামের হিন্দু এবং মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ জন জড়ো হন এবং গ্রামের সুখ, সমৃদ্ধি বৃদ্ধির পাশাপাশি জাতপাত বিভেদ ভুলে দীর্ঘদিনের প্রাচীন ঐতিহ্য সম্প্রীতি অক্ষুন্ন রাখার জন্য কালীর কাছে তাঁরা প্রার্থনা করেন। এ ভাবেই মহম্মদবাজার থানার ভাঁড়কাটা গ্রামে চিরাচরিত প্রথা মেনে কালীর আবাহন করে আসছেন গ্রামের হিন্দু এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন।

Advertisement

গ্রামবাসী আলামিন মল্লিক, বিজন বিহারী মণ্ডলরা জানালেন, ভগবান দাস মহান্ত নামে ভাঁড়কাটা গ্রামের এক জমিদার ছিলেন। সেই জমিদার সাড়ে ১৪ বিঘে জমি গ্রামের এই কালীপুজোর নামে দিয়ে গিয়েছিলেন। তবে কবে কে এই কালীপুজো শুরু করেছিলেন তা নিয়ে গ্রামে মতান্তর আছে। কেউ বলেন, গ্রামের কবিরাজরা এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন। আবার কারও মতে এই পুজোর প্রচলন গ্রামের এক মুসলিম বাড়ি থেকে হয়েছিল। তবে পুজোর শুরু যেই করুক এখনও গ্রামের এই কালীপুজো চালানোর জন্য যে সাড়ে ১৪ বিঘে জমি আছে সেই জমির ধান চাষ এখনও মুসলিম সম্প্রদায়রা করে আসছেন এবং পুজোর জন্য আতপ চাল মুসলিম সম্প্রদায়ে বাড়ি থেকে তৈরি হয়ে মা কালী পুজোর নৈবেদ্য সাজানো হয়। কালী পুজোর সম্পূর্ণ খরচ জমি থেকে উত্‌পাদিত ধান বিক্রির টাকা থেকে হয়।ভাঁড়কাটা গ্রামে ৭৫ শতাংশ মুসলিম সম্প্রদায়ের বাস। বাকি ২৫ শতাংশ হিন্দু সম্প্রদায়ের। এই গ্রামে সম্প্রীতির এক মেলবন্ধন লক্ষ্য করা যায়। হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষজন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিজেদের দায়িত্ব পালনে ব্রতী হন।

গভীর রাতের পুজো। তাই পুজো শুরু হতেই মা কালীর থান লাগোয়া এলাকায় মাথার উপর সামিয়ানা খাটিয়ে কবিগানের আসর বসানোটাই এই গ্রামের কালীপুজোর চিরাচরিত ঐতিহ্য। এক দিকে কবিগানের পালা অন্য দিকে, গভীর রাতে পাঁঠা বলিদান। আর এ সব কিছুর জন্যই গ্রামের উভয় সম্প্রদায়ের সব বয়সের মানুষ রাত জাগেন। পরের দিন বিসর্জনে পায়ে পা মিলিয়ে, কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে মা কালীকে বিদায় দেন। গ্রাম প্রদক্ষিণ করার সময় গ্রামের মুসলিম মহিলারা মা কালীর উদ্দেশ্যে বাতাসা ছুঁড়ে দেন। আর এই পুজো ঘিরে যে দু’দিনের গ্রামীণ মেলা বসে তার মজা নিতে শুধু ভাঁড়কাটা গ্রামের হিন্দু বা মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন নয়, আশপাশ এলাকার অন্য সম্প্রদায়ের বিশেষ করে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষেরাও সেই আনন্দ উপভোগ করতে ভিড় জমান ভাঁড়কাটা গ্রামে। গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা নাজির হোসেন মল্লিক, বিজন বিহারী মণ্ডল বললেন, “বাপ-ঠাকুরদার আমল থেকে এই সম্প্রীতির পুজো দেখে আসছি। সকলে মিলে খুব আনন্দ করি। আমরাও সেই অভিন্ন ঐতিহ্য বজায় রেখে চলেছি এবং আগামী প্রজন্মও তা রাখবে বলে আমরা আশা রাখছি।”

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement