সংবেদনশীল হন মহিলাদের প্রতি, বার্তা পুলিশের সভায়

থানায় অভিযোগ জানাতে আসা মহিলাদের সঙ্গে সংবেদনশীল ব্যবহার করতে হবে, বাঁকুড়া জেলার ২৪টি থানায় গঠিত হওয়া ‘উইমেন অ্যান্ড চাইল্ড হেল্প ডেস্ক’-এর মহিলা পুলিশকর্মীদের এই বার্তা দিলেন পুলিশকর্তারা। সম্প্রতি বাঁকুড়া পুলিশ লাইনের কনফারেন্স হলে একটি আলোচনাসভার আয়োজন করেছিল জেলা পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৪ ০২:০৪
Share:

থানায় অভিযোগ জানাতে আসা মহিলাদের সঙ্গে সংবেদনশীল ব্যবহার করতে হবে, বাঁকুড়া জেলার ২৪টি থানায় গঠিত হওয়া ‘উইমেন অ্যান্ড চাইল্ড হেল্প ডেস্ক’-এর মহিলা পুলিশকর্মীদের এই বার্তা দিলেন পুলিশকর্তারা।

Advertisement

সম্প্রতি বাঁকুড়া পুলিশ লাইনের কনফারেন্স হলে একটি আলোচনাসভার আয়োজন করেছিল জেলা পুলিশ। তাতে জেলা পুলিশের আধিকারিকেরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা মহিলা সুরক্ষা আধিকারিক অপর্ণা দত্ত, গাঁধীবিচার পরিষদের একাধিক প্রতিনিধি প্রমুখ। এ ছাড়াও ছিলেন বাঁকুড়া মহিলা থানার ওসি রমারানি হাজরা, ৪৮ জন মহিলা কনস্টেবল। ওই সভাতেই মহিলা পুলিশদের থানায় অভিযোগ জানাতে আসা মহিলাদের সঙ্গে মানবিক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ডিএসপি (আইনশৃঙ্খলা) বাপ্পাদিত্য ঘোষ বলেন, “অভিযোগকারিণীর সঙ্গে মহিলা পুলিশকে একাত্ম হতে হবে। তাঁদের সমস্যা ভাল করে শুনে, ডিউটি অফিসারের কাছে নিয়ে গিয়ে অভিযোগ করতে সাহায্য করতে হবে।”

চলতি বছরের গোড়াতেই থানায় অভিযোগ জানাতে আসা মহিলাদের সহযোগিতা করার জন্য এই ‘হেল্প ডেস্ক’ গড়া হয়। আলাদা করে থানা গুলিতে এই ডেস্ক-এর কোনও পরিকাঠামো না থাকলেও এই কাজের জন্য দুজন মহিলা কনস্টেবল নিয়োগ করা হয়েছে থানাগুলিতে। সকাল সাতটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত এই ডেস্ক কাজ করে। মহিলারা থানায় অভিযোগ জানাতে এলে সেই প্রক্রিয়ায় তাঁদের পূর্ণ সহযোগিতা করাই এই ডেস্কের পুলিশকর্মীদের কাজ, প্রয়োজনে অভিযোগ লিখতে সাহায্য বা আইন সম্পর্কে খুঁটিনাটি তথ্যও পাওয়া জানা যাবে এই ডেস্ক থেকে।

Advertisement

থানায় অভিযোগ জানাতে এসে মহিলারা অনেক সময় বিভিন্ন সমস্যায় পড়েন। ডিউটি অফিসারদের বিরুদ্ধে অভিযোগকারীকে ফিরিয়ে দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে এই জেলায়। গত জানুয়ারিতেই দুর্গাপুর ও বাঁকুড়ার মাঝে দামোদরের চরের সোনাইচণ্ডীপুরের বাসিন্দা এক বধূকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ জানাতে গিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। দুষ্কৃতীদের হামলায় জখম স্বামীকে দুর্গাপুরের হাসপাতালে ভর্তি করে অভিযোগ দায়ের করতে হন্যে হয়ে দু’দিন ধরে বড়জোড়া, গঙ্গাজলঘাটি, মেজিয়া থানায় ঘুরপাক খেতে হয়েছিল ওই বধূকে। কিন্তু, কোনও থানাই অভিযোগ নেয়নি। শেষে ঘটনার খবর পেয়ে জেলার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারের হস্তক্ষেপে মেজিয়া থানা ওই বধূর অভিযোগ নেয়। এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন পুলিশ সুপার।

পুলিশকর্মীদের উদ্দেশে ডিএসপি-র বার্তা, অভিযোগ জানাতে আসা কোনও মহিলার পোশাকপরিচ্ছদ বা তাঁর কথাবার্তা শুনে কোনও রকম বাজে মন্তব্য করা চলবে না। এই ধরনের ঘটনার অভিযোগ পেলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রমারানিদেবী বলেন, “এই ডেস্ক মহিলা ও শিশুদের সাহায্য করার জন্যই কাজ করবে। আইনি পথ অনেকের কাছেই অজানা। তাই ডেস্কের কর্মীদের কাজ হবে তাঁদের সাহায্য করা।”

জেলা মহিলা সুরক্ষা আধিকারিক অপর্ণাদেবী অবশ্য মহিলা ও শিশুদের উপর হয়ে চলা অত্যাচার রুখতে পুলিশ ও জেলা প্রশাসন এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের কথা বলেছেন। এমনকী, নির্যাতন রুখতে স্বয়ম্ভরগোষ্ঠীগুলির কর্মীদেরও এই কাজে যুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, “স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা গ্রামাঞ্চল স্তরে কাজ করেন। তাই তাঁরা অনেকের খবর রাখেন। আমরা যদি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি, তাহলে মহিলা ও শিশুদের উপর ঘটে চলা নির্যাতন রুখতে আমাদের কাজ সহজ হবে।” গাঁধী বিচার পরিষদ মহিলা ও শিশুদের নিয়ে যে সমস্ত কাজ করে চলেছে, ওই সভায় তার বিবরণ তুলে ধরেন ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধি চায়না দাস।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement