দলীয় সদস্যদের পাশে পেয়েও সরতে হল তৃণমূলের প্রধানকে।
পাড়া ব্লকের দুবড়া পঞ্চায়েতের প্রধান চন্দনা বাউরিকে সদস্যদের আনা অনাস্থায় সরতে হয়নি। তাঁকে সরিয়েছেন তৃণমূলেরই এক সময় জোটসঙ্গী কংগ্রেস। আর কংগ্রেসকে সমর্থন জানিয়েছে সিপিএম।
ওই পঞ্চায়েতের ১৮টি আসনের মধ্যে সিপিএমের দখলে ছিল আটটি আসন, তৃণমূল জিতেছিল পাঁচটিতে। কংগ্রেসের দখলে ছিল চারটি.এবং একটি আসনে জিতেছিল নির্দল প্রার্থী। নির্বাচনের পরে জোট গড়ে পঞ্চায়েত দখল করেছিল তৃণমূল ও কংগ্রেস। সেই সময়ে স্থির হয়েছিল প্রধান পদ পাবে তৃণমূল, আর উপপ্রধান হবে কংগ্রেসের। কিন্তু ঘটনা হল প্রধান নির্বাচনের সময়ে তৃণমূলের প্রার্থীকে কংগ্রেস সমর্থন করলেও উপপ্রধানের ক্ষেত্রে কংগ্রেসের প্রার্থীকে সমর্থন জানাননি তৃণমূলের দুই সদস্য। ফলে উপপ্রধানের পদটি যায় সিপিএমের দখলে। সেই সময় থেকেই তিক্ততা তৈরি হয়েছিল তৃণমূল ও কংগ্রেসের মধ্যে। তৃণমূল তাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বলে অভিযোগ করেছিল কংগ্রেস।
বস্তুত পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের এক বছরের মধ্যে প্রধান ও উপপ্রধানদের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তাই বছর ঘুরতেই প্রথমে সিপিএমের উপপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনে তৃণমূল। তার এক সপ্তাহের মধ্যে তৃণমূলের প্রধানের বিরুদ্ধে পাল্টা অনাস্থা আনে সিপিএম। কিন্তু সিপিএমের উপপ্রধানের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের সব সদস্য সমর্থন না জানানোয় অনাস্থা খারিজ হয়ে যায়। অন্য দিকে, তৃণমূলের প্রধান চন্দনাদেবীর বিরুদ্ধে আনা অনাস্থায় সিপিএমের আট ও কংগ্রেসের দুই সদস্য সমর্থন জানানোয় গত ২৪ সেপ্টেম্বর অপসারিত হয়েছিলেন চন্দনাদেবী।
এ দিন ব্লক অফিসের এক আধিকারিকের উপস্থিতিতে নতুন প্রধান নির্বাচনে ভোটাভুটি হয়। প্রধান পদে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন রঞ্জু মাহাতো এবং কংগ্রেসের মনিরা বিবি। ভোটাভুটিতে তৃণমূল প্রার্থী নিজের দলের পাঁচ-সহ কংগ্রেসের দুই সদস্য মিলিয়ে মোট সাতটি ভোট পেয়েছিলেন। অন্য দিকে, নিজেদের দুই ও সিপিএমের আট সদস্য মিলিয়ে ১০টি ভোট পান কংগ্রেস প্রার্থী।
নির্বাচনের পরে দুবড়া অঞ্চলের বাসিন্দা তথা কংগ্রেসের প্রদেশ কমিটির সদস্য রমজান মির্ধা বলেন, “তৃণমূলকে আমরা বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্তু ওরা প্রথম থেকেই ক্ষমতা পাওয়ার লোভে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে আমরা এই পদক্ষেপ করেছি।” কংগ্রেসের যে দুই সদস্য তৃণমূলকে সমর্থন করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে দলগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রমজান।
আর তৃণমূল নেতা নবেন্দু মাহালি বলছেন, “সিপিএমের সমর্থন নিয়ে প্রধান পদ দখল করার ঘটনাতেই কংগ্রেসের সুবিধাবাদী চরিত্রটা সকলের কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।” তবে কংগ্রেসকে প্রধান পদে সমর্থন জানানোর বিষয়ে বিশদে বলতে চাননি সিপিএমের নেতারা। দলের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য দীননাথ লোধা শুধু বলেন, “দুবড়াতে আমাদের সদস্যরা কেন কংগ্রেসের প্রধানকে সমর্থন করেছে সেই বিষয়ে খোঁজ নেব।”