বন্ধ কুলেকুড়ি শিশুশিক্ষাকেন্দ্র। —নিজস্ব চিত্র।
স্বল্প সংখ্যক পড়ুয়া। তাই সরকারি নির্দেশে রাতারতি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দুবরাজপুরের কুলেকুড়ি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র। ইতিমধ্যেই ওই কেন্দ্রের দুই সহায়িকাকে অন্য শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। আচমকা এই সরকারি নির্দেশে বেকায়দায় ওই কেন্দ্রের পড়ুয়া ও তাদের অভিভাবকেরা। অভিভাবকদের প্রশ্ন, মাস তিনেকও হয়নি কেন্দ্রের নতুনভবন তৈরি হয়েছে। তা হলে কেন এই সিদ্ধান্ত? পড়ুয়ার সংখ্যা তো আনেক স্কুলেই কম। তা হলে কি ওই স্কুল বন্ধ করে দিতে হবে? আমাদের বাড়ির ছেলেমেয়েকে কেন দূরের স্কুলে যেতে হবে? সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য দুবরাজপুরের বিডিও কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটি আবেদনও জানিয়েছেন অভিভাবকেরা। বিডিও বলেন, “এটা আমার সিদ্ধান্ত নয়। পঞায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর থেকে শিশু শিক্ষাগুলির ছাত্র সংখ্যা জানতে চাওয়া হয়েছিল। আমরা তা পাঠানোর পরই ওই শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ওই সিদ্ধান্ত। তবে অভিভাবকেরা যে আবেদন করেছেন তা যথাস্থানে পাঠানো হবে।”
প্রসঙ্গত, স্কুল ছুট রুখতে এবং সব শিশুকে শিক্ষার আঙিনায় আনতে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর শিশুশিক্ষা কর্মসূচি নেয়। কর্মসূচি অনুযায়ী, যে সব গ্রামে অন্তত স্কুলে যাওয়ার মতো ২০ জন পড়ুয়া রয়েছে অথচ কোনও প্রাথমিক স্কুল নেই, অথবা প্রাথমিক স্কুল থাকালেও পরিকাঠামো গত কোনও সমস্যা (বসার স্থানাভাব বা শিক্ষকের অভাব) থাকে তা হলে সেই গ্রামে শিশুশিক্ষা কেন্দ্র গড়ে তোলার কথা। সেই কর্মসূচির আওতায় অন্যান্য শিশু শিক্ষা কেন্দ্রগুলির মতো ২০০৩ সালে দুবরাজপুরের কুলেকুড়ি গ্রামেও তৈরি হয় শিশুশিক্ষা কেন্দ্র। কারণ প্রায় ৮০টি পরিবার নিয়ে গঠিত ওই গ্রামে কোনও শিক্ষা কেন্দ্র বা ছিল না। ছোট্ট গ্রামে পড়ুয়ার সংখ্যাও প্রথম থেকেই কম। কিন্তু প্রথমে একজন সহায়িকা পরে ২০০৭ সালে আরও এক সহায়িকা নিয়ে চলতে থাকে শিশুশিক্ষা কেন্দ্রটি। গ্রামবাসী এবং ওই দুই সহায়িকা বলেন, “কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার আগে নিয়মিত ২২ জন পড়ুয়া ছিল। স্কুল বন্ধ হওয়ার পরে সমস্যায় পড়েছে সেই সব খুদে পড়ুয়ারাই।” অভিভাবক সুভাষ পাল, সঞ্জিৎ ঘোষ, উত্তম কর্মকার, শেফালি মণ্ডল বা বর্ণালী কর্মকাররা বলছেন, “শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে পাঁচ বছরের পরই ভর্তি করা যায় একটি শিশুকে। চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পরে একটু দূরে পাঠাতে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু কাউকে কিছু না জানিয়েই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি সরকারি নির্দেশে হঠাত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খুব অসুবিধা হচ্ছে। ছোট ছেলেমেয়েদের পাশের গ্রাম বেলসাড়া বা গোপালপুর (যা খয়রাশোল ব্লকের অন্তর্গত) ভর্তি করতে বাধ্য হয়েছি।”
অসুবিধায় পড়েছেন কেন্দ্রের সহায়িকা তপতী মণ্ডল ও রুমা চক্রবর্তীরা। যাঁরা আদতে ওই গ্রামেরই বাসিন্দা। তাঁরা বলছেন, “আমাদের বেতন তো খুব বেশি নয়। গ্রামের স্কুল থাকলে যাতায়াতের সমস্যা ছিল না। খরচও ছিল না। কিন্তু এখন বেতনের টাকা থেকেই সেটা করতে হবে।” সমস্যায় পড়েছে ওই স্কুলে মিড-ডে মিল রান্নার দায়িত্বে থাকা তিনটি মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীও। স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদেরও কাজ গেল।
প্রশাসন সূত্রের খবর, যে সব শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে পর্যাপ্ত পড়ুয়া নেই সেই পড়ুয়াদের কাছের অন্য প্রাথমিক স্কুলে এবং সহায়িকাদের পদখালি থাকা শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভবিষ্যতে প্রাথমিক শিক্ষা দফতরের ছাতার তলায় নিয়ে আসারও পরিকল্পনা রয়েছে। সেই মতো ওই সিদ্ধান্ত। শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে পড়ে থাকা পরিকাঠামো হয় অঙ্গনওয়াড়িকেন্দ্র বা উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভাবনা নেওয়া হয়েছে।