বামফ্রন্টের জমানায় এই রাস্তার সংস্কার হয়নি। কিন্তু, তৃণমূল সরকারের আমলেও যে সেই রাস্তার হাল ফেরেনি, বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ায় প্রশাসনিক বৈঠকে সে কথা জেনে চটে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই রাস্তা কেন সারানো হয়নি, সে ব্যাপারে তিনি কৈফিয়ত তলব করতেই আমলা থেকে জনপ্রতিনিধিরা ব্যস্ত থাকলেন দায় চাপানোয়। শেষ পর্যন্ত রাস্তার ওই হালের জন্য অভিযোগের কাঠগড়ায় তোলা হল সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে। আর ঠিকাদারের বিরুদ্ধে এফআইআর করার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
যে রাস্তা নিয়ে এত শোরগোল হল, সেটি বাঁকাদহ থেকে জয়রামবাটি যাওয়ার রাস্তা। বিষ্ণুপুরের সাংসদ তথা যুূব তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সৌমিত্র খাঁ ওই রাস্তার ভগ্ন দশা নিয়ে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুযোগ করেন। জয়রামবাটির মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্যটন কেন্দ্রে যাওয়ার রাস্তার এমন দশা শুনে স্বভাবতই চটে যান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানতে চান, রাস্তাটি কার? বৈঠকে উপস্থিত কেউ কেউ দাবি করেন, রাস্তাটি পূর্ত দফতরের। প্রশাসনিক আধিকারিকরা ভুল ভাঙিয়ে জানান, রাস্তাটি দেখভালের দায়িত্ব আসলে জেলা পরিষদের।
প্রশাসন সূত্রের খবর, এর পরেই মুখ্যমন্ত্রীর তোপের মুখে পড়েন জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী। তাঁকে মমতা সরাসরি প্রশ্ন করেন, “কেন রাস্তা সারানো হয়নি?” খানিকটা অস্বস্তিতে পড়ে অরূপবাবু জানিয়ে দেন, ওই রাস্তা দেখেন জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শ্যামল সরকার। অরূপবাবু বলে ওঠেন, “শ্যামল বলো, কেন রাস্তা সারাই হয়নি? কী সমস্যা?” এই প্রশ্নের মুখে পড়ে কিছুটা হকচকিয়ে যান শ্যামলবাবুও। কিছুক্ষণের নিজেকে সামলে নিয়ে রাস্তা সারাই না হওয়ার যাবতীয় দোষ চাপিয়ে দেন ঠিকাদারের উপর। তিনি জানান, ওই রাস্তা সংস্কারের টাকা বরাদ্দ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু, ঠিকাদারই কাজ শুরু করছেন না। কেন করছেন না? মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রশ্নে শ্যামলবাবু ঠিকাদারকে এক সিপিএম নেতার ‘ভাই’ বলে দাবি করে বলেন, “ওই ঠিকাদার কাজ শুরু করছে না। তাই হচ্ছে না দিদি। আমি দেখছি।” এ বার মমতা সভাধিপতিকে উদ্দেশ করে বলেন, “ঠিকাদার কাজ না করলে ওঁকে ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করে দাও। ওঁর বিরুদ্ধে পুলিশে এফআইআর করো। কেমন করে করতে হয়, তা তো তুমি জানো অরূপ।”
যদিও কাজ শুরু না করার অভিযোগ মানতে নারাজ ঠিকাদার রাম পাল। শুক্রবার তাঁকে ফোন করা হলে তিনি দাবি করেন, “রাস্তাটির যে ভাবে মেরামতির পরিকল্পনা করা হয়েছিল, বরাদ্দ টাকার সঙ্গে তা খাপ খায়নি। তাই গ্রামোন্নয়ন দফতরের ইঞ্জিনিয়াররা ফের রাস্তাটি পরিদর্শন করে সংস্কারের নতুন প্রস্তাব দফতরে পাঠিয়েছেন। যা এখনও অনুমোদন করা হয়নি। তাই কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।” তিনি জানিয়েছেন, আপাতত খানাখন্দে তাপ্পি মেরে রাস্তাটিকে যাতায়াত যোগ্য করা হচ্ছে। নতুন পরিকল্পনা অনুমোদিত হওয়ার এক মাসের মধ্যেই কাজ শেষ করে দেওয়া হবে।
তবে, মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক শেষ হওয়ার পরেও সৌমিত্রবাবুর তোলা এই প্রশ্ন নিয়ে জেলা তৃণমূলের নেতাদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। তৃণমূল সূত্রেই জানা যাচ্ছে, জেলার রাজনীতিতে সাংসদ সৌমিত্রবাবুর সঙ্গে সভাধিপতি অরূপবাবুর একটা ‘দূরত্ব’ রয়েছে। সরাসরি দলনেত্রীর কাছে খুঁজে খুঁজে জেলা পরিষদেরই অধীনে থাকা একটি রাস্তার বেহাল দশার কথা শোনানোর পিছনে ওই ‘দূরত্ব’ কাজ করেছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে তৃণমূলের অন্দরে। যদিও সৌমিত্রবাবু দাবি করেছেন, “উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বা কাউকে নিশানা করার জন্য ওই রাস্তার প্রসঙ্গ আমি তুলিনি। বাঁকুড়ার সীমানা এলাকার ওই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা অবহেলায় পড়ে রয়েছে। তাই স্থানীয় সাংসদ হিসেবে বাসিন্দাদের হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে রাস্তাটি সংস্কারের দাবি রেখেছিলাম। ওই রাস্তা ছাড়াও তো আরও অনেক সমস্যার কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছি!”
অন্য দিকে, অরূপবাবু বলছেন, “আমি খোঁজ নিয়ে ওই এলাকার জেলা পরিষদ সদস্যের কাছ থেকে জেনেছি, রাস্তার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। তবে, বর্ষা এসে যাওয়ায় কাজ কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।” কাজ শুরু হওয়া সত্ত্বেও বৈঠকে কেন সৌমিত্রবাবু ওই কথা বললেন? এ প্রশ্নের জবাব অবশ্য সভাধিপতি দিতে চাননি।