বক্তৃতার মাঝেই মমতা ডেকে নিলেন ১৪ বছর ধরে নিখোঁজ তৃণমূল কর্মীর স্ত্রীকে। পাশে বিষ্ণুপুরের দলীয় প্রার্থী সৌমিত্র খাঁ। ছবি: শুভ্র মিত্র
রাজ্যের রাজনৈতিক মানচিত্রে বরাবরই সন্ত্রাস কবলিত হিসাবে যে এলাকার পরিচিতি রয়েছে, বাঁকুড়ার সেই কোতুলপুরে এসে পুরনো সন্ত্রাসের স্মৃতিকেই উস্কে দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে পালা বদলের পর প্রথমবার এই এলাকায় জনসভা করতে এসে তৃণমূল নেত্রী একাধিকবার টেনে এনেছেন ‘সন্ত্রাস’-এর প্রসঙ্গ।
মঙ্গলবার বিষ্ণুপুর লোকসভা ও কোতুলপুর বিধানসভা কেন্দ্রের দলীয় দুই প্রার্থী সৌমিত্র খাঁ এবং শ্যামল সাঁতরার সমর্থনে কোতুলপুরের সিহড় গ্রামে জনসভা করেন মমতা। তাঁর প্রায় এক ঘণ্টার বক্তৃতায় বেশির ভাগ সময়েই ঘুরে ফিরে এসেছে বাম আমলে এই এলাকার রাজনৈতিক সন্ত্রাসের কথা। মমতা বলেন, “সিহড়ের কথা আমি ভুলিনি। সিপিএমের বন্দুকধারীদের দাপটে এখানকার মানুষকে রাতের অন্ধকারে আমি পুকুরের পাঁক জলে পদ্মপাতার আড়ালে মাথা লুকিয়ে থাকতে দেখেছি। গ্রামের পর গ্রাম ওরা দখল করে রাখত।” মমতার এ দিনের সভায় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন এই এলাকার নিখোঁজ তৃণমূল কর্মী সুভাষ মণ্ডলের স্ত্রী মঞ্জু মণ্ডল। তাঁকে পাশে নিয়ে মমতা অভিযোগ করেন, “কত মানুষের আত্মীয় কেড়ে নিয়েছে সিপিএম। চারদিকে খুঁড়লে শুধু কঙ্কাল আর কঙ্কাল বের হচ্ছে!”
তৃণমূল নেত্রী এ দিন নিজের বক্তব্যে তুলে ধরেন ১৯৯৮ সালের কোতুলপুরেরই বিক্রমপুর গ্রামের বাসিন্দা, তৃণমূল নেতা সালাম খাঁ-এর দুই ভাইয়ের হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গও। মমতা বলেন, “এখনও সালাম আমার কাছে প্রতি বছর ভাইফোঁটা নিতে আসে।” মঞ্চে অবশ্য এ দিন সালাম খাঁ বা তাঁর পরিবারের কাউকে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়নি। সালামের আক্ষেপ, “আমার দুই ভাই শুধু শহিদই হয়নি, আমি নিজেও ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত কোতুলপুর ব্লক সভাপতি ছিলাম। এখনও জেলা কমিটিতে রয়েছি। অথচ দিদির সভায় আমাকে আমন্ত্রণই জানানো হল না!” এর জন্য তিনি ব্লকের বর্তমান তৃণমূল সভাপতি প্রবীর গরাইয়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, “প্রবীর ব্যক্তি রাজনীতি করছেন। আমাদের মতো আদি তৃণমূলীদের পিছনের সারিতে রেখে নিজে ক্ষমতা জাহির করতে চাইছেন।” প্রবীরবাবুর বক্তব্য, “আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। উনি নিজেই আসেননি।”
বস্তুত, রাজ্যে পরিবর্তনের পরে বাঁকুড়ার কোতুলপুর, জয়পুর-সহ রাজনৈতিক সন্ত্রাস কবলিত এলাকায় শান্তি ফিরেছে বলে তৃণমূল দাবি করলেও বাস্তব ছবিটা কিন্তু অন্য রকম। গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে এখানে একাধিক সিপিএম নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন। এখনও অনেকে ঘরছাড়া। গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয়পুর ও কোতুলপুর ব্লকের গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে বেশিরভাগ আসনেই প্রার্থী দিতে পারেনি সিপিএম। কোতুলপুরের বাসিন্দা, সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তাপস চক্রবর্তীর কটাক্ষ, “মুখ্যমন্ত্রী বলে গেলেন, সিপিএম সন্ত্রাস করত। আজ তৃণমূলের জমানায় এই এলাকা শান্তিতে আছে কিনা, তা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে!”