শুক্রবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
পাড়ুইয়ের সাত্তোরের নির্যাতিতা বধূর শ্বশুরকে মারধরের ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে সাত্তোর গ্রাম থেকেই তাঁদের ধরা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। অভিযুক্ত শেখ বুদ্দিন, শেখ ইরশাদ ও শেখ রাজুকে শুক্রবার সিউড়ি সিজেএম আদালতে তোলা হয়। মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যজিস্ট্রেট ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায় ৫০০ টাকার বণ্ডে প্রত্যেকেরই জামিন মঞ্জুর করছেন।
নির্যাতিতার শ্বশুরের অভিযোগ, এ দিন দুপুরে বাড়ির কাজকর্ম সেরে দেবগ্রাম থেকে ফেরার পথে সাত্তোর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এলাকার জনা পাঁচেক তৃণমূলের জনা পাঁচেক কর্মী-সমর্থক তাঁকে ঘিরে ধরে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে তাঁর পুত্রবধূর করা অভিযোগ প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দেয়। তাতে রাজি না হওয়ায় তৃণমূলের লোকজন তাঁকে চড়, কিল, ঘুষি মারে। জামা ছিঁড়ে দেয়। স্থানীয় বাসিন্দা এবং বাড়ির লোক চলে আসায় হামলাকারীরা পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ। ঘটনায় এলাকার তৃণমূল নেতা শেখ মুস্তফার দুই ছেলে শেখ বাবর ও জাফর-সহ মোট পাঁচ জনের বিরুদ্ধে পাড়ুই থানায় আভিযোগ করেন নির্যাতিরা শ্বশুর। তার প্রেক্ষিতেই তিন জনকে ধরে পুলিশ। ধৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি ৩৪১, ৩২৩, ৫০৬ ও ৩৪ নম্বর ধারায় অর্থাত্ আটক করে মারধর, গালিগালাজ করা এবং একত্রে সেটা করা— সবগুলিই জামিনযোগ্য। তবে নেতার দুই ছেলেকে পুলিশ ধরতে পারেনি। অভিযুক্তদের পক্ষের আইনজীবী নুরুল আলম এই মর্মে আবেদন করার পরই ধৃতদের জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে ওই সব ধারা প্রয়োগ করা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, নির্যাতিতা বধূর ভাসুরপোর বিরুদ্ধে বোমাবাজির অভিযোগ রয়েছে। গত ১৭ জানুয়ারি বিকেলে ওই বিজেপি কর্মীকে ধরতে তাঁর কাকিমার বাপের বাড়ি, বর্ধমানের বুদবুদ থানার কলমডাঙা গ্রামে হানা দেয় বীরভূম পুলিশের একটি বিশেষ দল। অভিযুক্তকে না পেয়ে তাঁর কাকিমাকে বাপের বাড়ি থেকে তুলে জঙ্গলে গাছে বেঁধে মারধর করা এবং ব্লেড দিয়ে হাতের তালু চিরে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে পুলিশ ও পাড়ুইয়ের কিছু তৃণমূল নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। নির্যাতিতার সারা গায়ে বিছুটি পাতা ঘষে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। ওই রাতেই তাঁকে ইলামাবাজার থানায় ফেলে যায় পুলিশ। ওই ঘটনায় রাজ্য জুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। রাজ্যপালও রাজ্য পুলিশের ডিজি-কে উপযুক্ত পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেন। জেলা পুলিশের অভিযুক্ত অফিসার-কর্মীদের বিরুদ্ধে নামমাত্র বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সিআইডি ওই ঘটনার তদন্ত শুরু করলেও এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযুক্তকে ধরেনি। তাই সিবিআই তদন্ত চেয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে নির্যাতিতার পরিবার। নির্যাতিতার অভিযোগ, কখনও তিনি বর্ধমান মেডিক্যালে চিকিত্সাধীন থাকার সময়ে, আবার কখনও তাঁর বাপের বাড়ির লোকজনের উপরে হামলা ও জুলুম চালিয়ে অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দিচ্ছে তৃণমূল। বৃহস্পতিবারের ঘটনা ফের তা প্রমাণ করল। অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছে তৃণমূল।