বিষ্ণুপুর মহকুমা বিদ্যালয়ে খাতায় শিলমোহর দেওয়া হচ্ছে। —নিজস্ব চিত্র।
হাতির হানায় প্রায় দিনই ভাঙছে ঘর বাড়ি। বেঘোরেও অনেকের প্রাণ গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় যাতে হাতির হামলায় অনভিপ্রেত কোনও ঘটনা যাতে না ঘটে, তার জন্য আগাম সতর্কতা জারি করল বনদফতর। ডিএফও (বাঁকুড়া উত্তর) সুধীরচন্দ্র দাস বলেন, “প্রত্যেকটি রেঞ্জে কড়া সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা চলাকালীন কোনও স্কুল বা গ্রামে হাতির উপদ্রবের খবর পাওয়া গেলেই সঙ্গে সঙ্গে হুলা পার্টি নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। সে জন্য কর্মীদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।”
তিনি জানান, শুধু গ্রামে হানা দেওয়াই নয়। মাঝে মাঝে রাস্তায় হাতি উঠে পড়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরীক্ষার সময় যাতে এমনটা না ঘটে সে দিকেও নজর রাখতে বলা হয়েছে। ডিএফও বলেন, “পরীক্ষার সময়ে হাতির দলের গতি প্রকৃতির উপরে বিশেষ নজর থাকবে আমাদের।” বস্তুত এই জেলার একটা বড় অংশ জঙ্গল লাগোয়া। ওই সব এলাকায় স্কুলে হাতিদের হামলার আশঙ্কা বছরভরই থাকে। এমনকী স্কুলে যাতায়াতের পথেও হাতির হানার ভয়ে থাকে পড়ুয়ারাও। তাই এ বার মাধ্যমিকের মতো বড় পরীক্ষার মধ্যে বন দফতরের এই উদ্যোগে অভিভাবক ও পড়ুয়ারা খুশি। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে বনকর্মীদের এলাকায় দেখা যাবে কি না তা নিয়েও অনেকে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
আগামী সোমবার থেকে শুরু হতে চলেছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। জেলায় এ বার মোট পরীক্ষার্থী ৪৭,৭৯০ জন। গত বারের চেয়ে ১১৮ জন পরীক্ষার্থী বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে নিয়মিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও বেড়েছে। গতবছর ৪২ হাজার ৪৫৯ জন নিয়মিত পরীক্ষার্থী মাধ্যমিক দিয়েছিল। এ বার সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩ হাজার ২৪৬। জেলা স্কুল পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পঙ্কজ রায় বলেন, “পরীক্ষার্থীদের যাতে কোনও রকম অসুবিধা না হয় সে দিকে আমাদের কড়া দৃষ্টি রয়েছে।”
জেরক্স দোকান ও খোলা জায়গায় মাইক বাজানোর উপরে প্রতিবারের মতোই এ বারও নিষেধাজ্ঞা থাকছে। তবে এ বার এই জেলায় পরীক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষকদেরও পরীক্ষাকেন্দ্রে মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পর্ষদ কর্তৃক নিযুক্ত বাঁকুড়া জেলা আহ্বায়ক পতিতপাবন রায়। তিনি জানান, নিয়ম অনুযায়ী কোনও পরীক্ষার্থীই স্কুল ক্যাম্পাসের ভিতরে মোবাইল নিয়ে যেতে পারে না। সেক্ষেত্রে নজরে এলেই মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হবে। পাশাপাশি শিক্ষকেরাও পরীক্ষা গ্রহণ কেন্দ্রের ভিতরে মোবাইল নিয়ে ঢুকতে পারবেন না। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের টেবিলে মোবাইল জমা দিয়েই পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকতে হবে শিক্ষকদের। পরীক্ষা কেন্দ্রে কোনও সমস্যা দেখা দিলে যাতে দ্রুত পদক্ষেপ করা যায়, তাই বাঁকুড়া জেলার প্রতিটি ব্লকে ও মহকুমাস্তরে একজন করে ‘কো-অর্ডিনেটর’ রাখা হচ্ছে। প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রে এই কো-অর্ডিনেটরের মোবাইল নম্বর দেওয়া হচ্ছে। সমস্যা হলেই তাঁরা দ্রুত স্কুলে পৌঁছে যাবেন। পতিতপাবনবাবু বলেন, “সব রকম দিক দিয়েই আমরা সতর্ক থাকতে চাইছি। তাই পরীক্ষাকেন্দ্রে মোবাইল ব্যবহারে পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকদেরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।”
অন্য বারের মতো এ বারেও পরীক্ষার দিনগুলিতে জেলার পরিবহণ ব্যবস্থা সচল রাখার বিষয়ে জোর গিয়েছে প্রশাসন। সম্প্রতি জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে স্কুল শিক্ষা দফতরের একটি বৈঠক হয়। পতিতবাবু জানান, পরীক্ষাকেন্দ্রের কাছাকাছি পুলিশের নজরদারি থাকবে। গঙ্গাজলঘাটি থানার ভুলুই উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্রে যাতায়াতের জন্য কোনও বাস নেই। তাই জেলা পরিবহণ দফতরকে পরীক্ষার দিনগুলিতে গঙ্গাজলঘাটি থেকে ভুলুই যাওয়ার জন্য একটি বাস চালানোর আবেদন করা হয়েছিল। জেলা পরিবহণ দফতর থেকে বাস চালানো হবে বলে জানানো হয়েছে। অন্য দিকে, পরীক্ষার দিনগুলিতে সারা জেলার নান রুটে যাতে বাস চলাচল স্বাভাবিক থাকে সে বিষয়ে পরিবহণ দফতরকে নজর রাখতে বলা হয়েছে বলে তিনি জানান।
বাঁকুড়া জেলা বাস মালিক সমিতির সম্পাদক দীপক সুকুল বলেন, “মাধ্যমিক পরীক্ষার দিনগুলিতে যাতে কোনও বাস বন্ধ না থাকে বাস মালিকদের আমরা তা জানিয়ে সতর্ক করেছি।” জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন যাতে কোনও ভাবেই বাস তোলা যাবে না। এমনকী সরকারি কর্মসূচিতেও বাস নেওয়া চলবে না। বেশ কিছু এসবিএসটিসি এবং অতিরিক্ত মিনিবাস চালানো হবে কয়েকটি রুটে। পুলিশকেও বিশেষ ভাবে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।”