ওই জামাটা চাই। বাঁকুড়া শহরের বাজারে রবিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
গত দু’দিনের টানা বর্ষণ বাঁকুড়া জেলার কৃষকদের মুখে হাসি ফোটালেও বুকে কাঁপুনি ধরিয়েছিল বস্ত্র ব্যবসায়ীদের।
কালো মেঘের ঘনঘটায় মহালয়ার আগের রবিবারের কেনাকাটা মাটি হয়ে যাবে না তো! আকাশে মেঘের মতোই, এই আশঙ্কাটাই জমে ছিল ব্যবসায়ীদের মনে। শনিবারের বৃষ্টি আরও ভয় ধরিয়ে দেয়। তবে রবিবার সকাল গড়াতেই আস্তে আস্তে রোদ ঝলমল করে ওঠে। তাতেই ভরসা পান ব্যবসায়ীরা। অনেকে সন্ধ্যাটা কেমন যাবে, তখনই ভেবে নিয়েছিলেন। আর হলও তাই। রবিবারের বাজার জমে ক্ষীর!
এমনিতেই বৃন্দা কারাটের উপস্থিতিতে সিপিএমের মহামিছিলকে ঘিরে এ দিন গ্রামাঞ্চলের বহু মানুষের ভিড় ছিল বাঁকুড়া শহরে। সে সুবাদে দিনভর ক্রেতাদের ভিড়ে গমগম করছিল চকবাজার এলাকা। মিছিলে পা মেলানোর আগে বহু মানুষ মজেছিলেন পরিবারের জন্য কেনাকাটায়।
মিছিল সেরে ফেরার পথে বড়জোড়ার বিকাশ দে, শালতোড়ার আনন্দ গরাই বলেন, “মিছিলে আসার সময়েই ঠিক করে ফেলি পুজোর বাজার সেরে বাড়ি ফিরব। প্রতিদিন তো আর বাঁকুড়ায় আসা হয় না?’’ রবিবারে এ ভাবে একসঙ্গে গ্রামের এত ক্রেতাকে পেয়ে খুশি ব্যবসায়ীরাও। তাঁদের কথায়, “বৃন্দাদেবী ভাল দিনক্ষণ দেখেই বাঁকুড়ায় এসেছিলেন। এই সভার প্রভাব রাজনীতিতে কতটা পড়বে জানি না, তবে পুজোর বাজারে জোয়ার এল।”
গত দু’দিনের বৃষ্টি পর্ব ছাড়া চলতি বছর বাঁকুড়া শহরে পুজোর বাজার ভালই জমেছে বলে মত ব্যবসায়ীদের। প্রায় একমাস আগে থেকেই সন্ধ্যায় চকবাজার এলাকার ভিড়ভাট্টা সামলাতে ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। বিকেলের পর থেকে দু’চাকার গাড়ি ও রিকশা ছাড়া বড় কোনও গাড়িকেই চকবাজারে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। মাচানতলা মোড়ে আটকে দেওয়া হচ্ছে। এতে অবশ্য যানজট কাটিয়ে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে কেনাকাটা করতে পারছেন সাধারণ মানুষ। গত দু’দিন টানা বৃষ্টির জেরে ব্যবসা কিছুটা মার খেয়েছে।
সুভাষরোড বড়বাজারের রেডিমেড পোশাক ব্যবসায়ী রবিলোচন দে, মধুসূদন চন্দ বলেন, “পুজোর ব্যবসা বেশ ভাল গতিতেই এগোচ্ছে। আমাদের চিন্তা শুধু বৃষ্টি। গত বছর বৃষ্টির জেরে বাজারে কিছুটা খরা ছিল। সব কিছু ঠিকঠাক চললে এ বছর সব পুষিয়ে যাবে বলেই মনে হচ্ছে।” একই কথা শোনাচ্ছেন চকবাজারের জুতো ব্যবসায়ী বাবু চক্রবর্তীও। তিনি জানান, গত বছর বৃষ্টিতে ভাল বেচাকেনা তো হয়ইনি। এমনকী মাল কেনার জন্য ধার করা টাকাও শোধ করতে পারেননি এখনও। তবে এ বছর ছবিটা উল্টো। তাঁর কথায়, “এ বার বাজার ভালই জমেছে। বেচাকেনা বেড়েছে। বৃষ্টি না হলে ভাল ব্যবসা করব।”
তবে চলতি বছরে বর্ষার খাম খেয়ালিপনা জেলা জুড়েই পুজোর বাজারে প্রভাব ফেলেছে। উল্লেখ্য, বাঁকুড়া জেলা মূলত কৃষি নির্ভর। খাতড়া মহকুমা শহর তো বটেই, বিষ্ণুপুর ও জেলা সদর শহর বাঁকুড়ার বাজারও কিছুটা গ্রামের মানুষের উপরে নির্ভর করে। কিন্তু চলতি বছরে বর্ষা একে বেশ দেরিতে এসেছে, তার উপরে পুজোও কিছুটা এগিয়ে এসেছে। তার জেরে অনেক চাষি মাঠে ব্যস্ত থাকায় এখনও সে ভাবে বাজারে আসতে পারেননি।
বাঁকুড়ার বড়বাজারের বস্ত্র ব্যবসায়ী সুব্রত সেন বলেন, “পুজোর জন্য হাতিবাগান, শিলিগুড়ি থেকে লক্ষাধিক টাকার মাল কিনেছি। শহরের ক্রেতারাই দেখছি ভিড় জমাচ্ছেন। গ্রামের মানুষদের এখনও ভিড় সে ভাবে লাগেনি।” বিষ্ণুপুর শহরের রেডিমেড বিক্রেতা কিশোর সূত্রধর ও প্রবীর মহাপাত্র বলেন, “পুজোর বাজার ধীরে ধীরে জমেছে।”