পুরসভার আসন বিন্যাসের খসড়া তালিকা প্রকাশ হতেই জেলাজুড়ে শুরু হয়েছে নানা রাজনৈতিক জল্পলা-কল্পনা। মঙ্গলবার রাতে রামপুরহাটে এবং বুধবার বোলপুরে তালিকা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে সেই জল্পনা তুঙ্গে ওঠে। জেলার দুটি শহরেই একটি করে ওয়ার্ড বেড়েছে। রামপুরহাটে ১৭টি ওয়ার্ড থেকে একটি বেড়ে ১৮টি ওয়ার্ড হয়েছে। অন্য দিকে বোলপুর পুরসভার ১৯টি থেকে বেড়ে ২০টি ওয়ার্ড হয়েছে। ভেঙে দেওয়া হয়েছে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডটি।
মঙ্গলবার প্রকাশিত রামপুরহাটের ১৮টি ওয়ার্ডের আসন বিন্যাসের তালিকা অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, পুরসভার ১, ৪, ৫ , ৭, ৮, ১০, ১২, ১৫, ১৬, ১৭ এই দশটি ওয়ার্ড অসংরক্ষিত রাখা হয়েছে। বাকি ৮ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৩, ১১, ১৪, ১৮ এই চারটি ওয়ার্ড তফসিল উপজাতি এবং আদিবাসীদের সংরক্ষিত। ২, ৬, ৯, ১৩ এই চারটি ওয়ার্ড সাধারণ মহিলা সংরক্ষিত। আবার ৩, ১১ এই দুটি ওয়ার্ড তফসিল উপজাতি এবং আদিবাসী মহিলা সংরক্ষিত আসন। অন্যদিকে ১৪ এবং ১৮ এই দুটি ওয়ার্ড তফসিল উপজাতি এবং আদিবাসীদের জন্য সংরক্ষিত।
ঘটনা হল, নতুন বিন্যাসের তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর তৃণমূল, সিপিএম, বিজেপি কাউন্সিলররা নানা রাজনৈতিক অঙ্ক মেলাচ্ছেন। পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারি তিন বারের কাউন্সিলর। ৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে পরপর নির্দল হিসাবে জয়ী হয়ে আসছেন। ২০১০ সালের পুর নির্বাচনের পর অশ্বিনীবাবু অবশ্য তৃণমূলে যোগ দেন। এবারেও ৭ নম্বর ওয়ার্ড সাধারণ হওয়ার জন্য তৃণমূল থেকে আবারও অশ্বিনীবাবুর দাঁড়াবার সম্ভাবনা প্রবল। তৃণমূলের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় যে ওয়ার্ডের বাসিন্দা, সেই ৫ নম্বর ওয়ার্ডে সাধারণ এবং অসংরক্ষিত হওয়ার জন্য শুভাশিষ চৌধুরীর বিজেপির প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিজেপি পরপর তিনবার নিজেদের দখলে রেখেছে এই ওয়ার্ডটি। শুভাশিষবাবু অবশ্য এখনই কিছু মন্তব্য করতে চাননি। আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “খসড়া তালিকা সরকারি নিয়ম মেনে হয়েছে। বুধবার দলের বৈঠক হবে। সেখানে প্রার্থী তালিকা এবং মুখ্যমন্ত্রীর সভা নিয়ে আলোচনা হবে।”
অন্যদিকে কয়েক দশক ধরে বোলপুরের ১৭ নং ওয়ার্ড বরাবর বামেদের দখলে ছিল। গত পুরভোটে সিপিএমের প্রতীকে জিতে, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর এক বছরের মাথায় তৃণমূলে যোগ দেন। সেই ওয়ার্ড ভেঙে আর একটি নতুন ওয়ার্ড হওয়ায়, কার্যত তৃণমূলের প্রাপ্তি বাড়ল বলে মনে করছে তৃণমূল। যদিও বামেদের দাবি, “ভোটের পর দেখা যাবে।” পুরপ্রধান সুশান্ত ভকত বলেন, “পুরসভার ওয়ার্ড সংখ্যা বাড়ছে, বিন্যাসের চিঠি বুধবার হাতে পেয়েছি। সকলের সঙ্গে আলোচনা করে দেখব। তৃণমূল কংগ্রেস পুরসভার ২০টি ওয়ার্ডই দখল করবে।”
পুরসভার আসন বিন্যাসের খসড়া তালিকায় দেখা যাচ্ছে ২, ৭, ১০, ১৪ এবং ১৭ নম্বার ওয়ার্ড মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত তপশিলি জাতির মহিলাদের জন্য। আলাদা ভাবে পুরসভার ৩ ও ৫ দুটি ওয়ার্ড সংরক্ষিত তপশিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত রয়েছে। তিন বারের কংগ্রেস ওয়ার্ড কাউন্সিলর তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান তপন সাহার ওয়ার্ডটি তপশিলি (মহিলাদের) জন্য সংরক্ষিত হয়েছে।
বস্তুত, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের চার বার মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হওয়ায়, এলাকায় ক্ষোভ বাড়ছেই। কিসের ক্ষোভ? বাসিন্দাদের ব্যাখ্যা, “এলাকায় তেমন কাজ হয়নি। মেলে না পরিষেবা। গোটা এলাকাজুড়েই একের পর এক ফ্ল্যাটবাড়ির নির্মাণ বাড়ছে। তাতে বেশিরভাগ রাস্তা-ঘাটজুড়ে ইমারতি সামগ্রী পড়ে থাকে। কয়েকটি রাস্তায় পথবাতিও জ্বলে না। সে সব ঘিরেই ক্ষোভ বাড়ছে।”
সিপিএমের বোলপুর জোনাল কমিটি সম্পাদক উত্পল রুদ্র বলেন, “বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে আমরা সব কয়েকটা ওয়ার্ডে প্রার্থী দিচ্ছি। তবে ১০ নং ওয়ার্ড ক্ষোভ দেখা দিয়েছে ভোটারদের মধ্যে। পুরসভার ওয়ার্ডগুলির উন্নয়নের নিরিখে, ১৭ নম্বার ওয়ার্ডও অনেকটা পিছিয়ে উন্নয়নের ক্ষেত্রে।”