অধিকাংশ পড়ুয়া দুঃস্থ। তাদের শীতবস্ত্র নেই বললেই চলে। তাই বিদ্যালয়ের সকল পড়ুয়াদেরকে শীতবস্ত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বিদ্যালয়েরই এক শিক্ষিকা। মহম্মদবাজারের মালাডাং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘটনা। ওই স্কুলের শিক্ষিকা স্বাগতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার স্কুলের সকল শিশুকে সোয়েটার তুলে দিলেন।
ঠান্ডা বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে। শহরের তুলনায় জেলার মহম্মদবাজারের ঝাড়খণ্ড সীমান্তবর্তী এলাকার ঠান্ডা আরও বেশি। এই সীমান্তবর্তী এলাকার একটি গ্রাম হল মালাডাং। এই গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের পাঠরত অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীই গরিব পরিবারের। খেতমজুর, দিন মজুর ওইসব পরিবারের নুন আনতে পান্তা ফুরনোর মতো অবস্থা। পরনে ভাল জামাকাপড়ই জোটে না। বৃহস্পতিবার স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে ছেলেমেয়েরা যখন জানিয়েছিল যে, শুক্রবার স্কুলের এক দিদিমনি স্কুলের সব পড়ুয়াকে সোয়েটার দেবেন। তখন অনেক অভিভাবক ছেলেমেয়েদের কথা বিশ্বাসই করতে পারেননি। কিন্তু শুক্রবার স্কুল শুরু হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই চিত্রটা অবশ্য পাল্টে যায়। এ দিন স্কুলের ৮৮ জন ছাত্রছাত্রীর প্রায় সকলেই উপস্থিত ছিল। স্কুলের বাইরে ও আশপাশে কয়েকজন অভিভাবক ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। স্কুল শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর ছাত্রছাত্রীদের হাতে সোয়েটার তুলে দেন স্বাগতা দেবী ও পার্শ্বশিক্ষক কালীপ্রসাদ সরকার। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মেঘনাদ রায় বিশেষ কারণে এ দিন স্কুলে আসতে পারেননি। কালীপদবাবু বলেন, “দিদি যে ভাবে গরিবদের কথা ভাবেন, সে ভাবে যদি সবাই ভাবত তা হলে সমাজে এতটা দুঃখকষ্ট থাকত না। কিছুদিন আগে লোকপাড়ার এক ছাত্রের কানের শ্রবণ যন্ত্র ভেঙে যাওয়ার কারণে পড়াশোনার অসুবিধে হচ্ছিল। সংবাদমাধ্যমে সেই খবর পড়ে দিদি সঙ্গে সঙ্গে ওই ছাত্রের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার বাবার হাতে শ্রবণযন্ত্র কেনার টাকা দেন।”
সোয়েটার পেয়ে অভিভাবক মাদু দাস, বিকাশ মণ্ডল, সঞ্জয় বাগদিরা বলেন, “কিছুদিন থেকে আমাদের এদিকে ভীষণ ঠান্ডা পড়েছে। ঠান্ডায় হাত-পা জমে যাচ্ছে। ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতেই চায় না। ওরা যখন বাড়িতে এসে বলল যে, আজ স্কুলের স্বাগতা দিদিমনি স্কুলের সব পড়ুয়াকে সোয়েটার দেবেন। সত্যি কথা বলতে কী প্রথমটা বিশ্বাস করতে পারিনি। এ রকম দিদিমনি বা মানুষ এখন আছেন? পরে বুঝলাম ভাল মানুষ সত্যিই আছেন।” দ্বিতীয় শ্রেণির সুপ্রিয় মণ্ডল, তৃতীয় শ্রেণির আশা বাগদি, সুশ্মিতা দাস, চতুর্থ শ্রেণির ইন্দ্রজিৎ বাগদিরা সোয়েটার পেয়ে বলে, “আজ আমাদের খুশির দিন। এ বার ঠান্ডায় আর অত কষ্ট হবে না।”
স্বাগতাদেবী বলেন, “স্কুলের অধিকাংশ পড়ুয়াই গরিব পরিবারের। ওই সব ছোটছোট ছেলেমেয়েগুলো ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে স্কুলে আসে। ঠান্ডায় তাদের কষ্ট দেখে মনে মনে ঠিক করেছিলাম পড়ুয়াকে সোয়েটার দেব। তা আমার সাধ্যের মধ্যেই। এ দিন আমার মনের ইচ্ছা পূরণ করলাম মাত্র।” মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, “আমি মনে করি স্বাগতাদেবী প্রকৃত সমাজসেবা করেছেন। যাঁদের সামর্থ আছে, সমাজের কল্যাণে তাঁদের প্রত্যেকের এগিয়ে আসা উচিত।”