বাস যাচ্ছে সভায়, দুর্ভোগে বাঁকুড়া

ছবিটা কখনওই বদলায় না! সেই শাসক দলের সমাবেশ। আর তার জন্য জেলা থেকে জোর করে বাস তুলে নেওয়া। যার নিট ফল, সাধারণ যাত্রীদের চূড়ান্ত ভোগান্তি। আজ, সোমবার কলকাতার ধর্মতলায় তৃণমূলের ‘শহিদ দিবস’ উপলক্ষে জমায়েত। তার আগে বাস তুলে নেওয়ার সেই রেওয়াজই অব্যাহত রইল বাঁকুড়ায়। তার জেরে শনি ও রবিবার দুর্ভোগের মুখে পড়লেন যাত্রীরা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৪ ০০:৪৪
Share:

বাস যাবে তৃণমূলের সভায়। বিষ্ণুপুর বাসস্ট্যান্ডে তাই যাত্রীদের চড়া ভাড়া দিয়েই ভাড়াগাড়িতে চড়তে হল। রবিবার সকালে। ছবি: শুভ্র মিত্র।

ছবিটা কখনওই বদলায় না!

Advertisement

সেই শাসক দলের সমাবেশ। আর তার জন্য জেলা থেকে জোর করে বাস তুলে নেওয়া। যার নিট ফল, সাধারণ যাত্রীদের চূড়ান্ত ভোগান্তি। আজ, সোমবার কলকাতার ধর্মতলায় তৃণমূলের ‘শহিদ দিবস’ উপলক্ষে জমায়েত। তার আগে বাস তুলে নেওয়ার সেই রেওয়াজই অব্যাহত রইল বাঁকুড়ায়। তার জেরে শনি ও রবিবার দুর্ভোগের মুখে পড়লেন যাত্রীরা।

শনিবার বিকেলে পাত্রসায়রের ফকিরডাঙার মোড়ে লাঠিসোটা নিয়ে প্রায় ২৫টি বাস তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা আটকে দেন বলে অভিযোগ। যাত্রীদের জোর করে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়। যার ফলে অনেককেই বাধ্য হয়ে হেঁটে বা গাড়ি ভাড়া করে গন্তব্যে পৌঁছতে হয়। রবিবারও সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন রুটের বাস ওই সমাবেশের জন্য ভাড়া নেওয়ায় যাত্রীরা বাস না পেয়ে সমস্যায় পড়েন। যদিও তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের দাবি, ছোটখাটো ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করে দেখানো হচ্ছে। কোথাও যাত্রীদের বাস না পেয়ে দুর্ভোগে পড়তে হয়নি। এই পরিস্থিতিতে আজ সোমবার ধর্মতলায় ২১ জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশের জন্য প্রচুর বাস চলে যাওয়ায়, সঙ্কট আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন যাত্রীরা।

Advertisement

তৃণমূলের একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, কলকাতার ওই সমাবেশের জন্য বাস মালিকদের একাংশ বাস ভাড়া দিতে চাইছিলেন না। সে কারণেই তাঁরা রাস্তা থেকে বাস তুলে নেয়। যাত্রীরা জানাচ্ছেন, বর্ধমান ও বাঁকুড়ার বাস যাতায়াতের পথে শনিবার বিকেল প্রায় ৫টা থেকে তৃণমূলের কিছু কর্মী পতাকা ও লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে বাস আটকায়। তারপরে বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়।

কলকাতায় সভা সমাবেশের জন্য আগে বামপন্থীরা জেলা উজাড় করে বাস তুলত। এখন তা করে তৃণমূল। কিন্তু কোনও দিন যাত্রীদের এ ভাবে ভয় দেখিয়ে বাস থেকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি তুলে নেওয়ার অভিযোগ কোনও দলের বিরুদ্ধে ওঠেনি। তাই ওই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তে বিভিন্ন মহলে প্রতিক্রিয়া হয়েছে। পাত্রসায়রে তৃণমূলের দ্বন্দ্ব মাত্রা ছাড়া রূপ নিয়েছে। তার মধ্যে এই ধরনের গোলমাল নিয়ে দলের অন্দরে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। তৃণমূলের পাত্রসায়র ব্লক সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায় সাফ জানিয়েছেন, “আমরা জোরাজুরি করে বাস নেওয়া পছন্দ করি না। যাঁরা করেছে, তারা ভালো করেনি।” যদিও তাঁর দলেরই নেতা বাঁকুড়া জেলা সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীর দাবি করেছেন, “তেমন কিছুই হয়নি। ছোটখাটো ঘটনা অতিরঞ্জিত করা হচ্ছে। বাসের জন্য জেলায় সমস্যার কথা আমাকে কেউ বলেন নি। কলকাতায় দলের সভায় যাওয়ার জন্য আমরা রির্জাভ বাস নিয়েছি। রুটের বাস তেমন নেওয়াই হয়নি।” পুলিশের কী ভূমিকা ছিল? পাত্রসায়র থানা জানাচ্ছে, যাত্রীদের জোর করে নামিয়ে বাস তুলে নেওয়ার অভিযোগ কেউ করেননি। এমন ঘটনার কথা তাদের কেউ জানায়নি।

এই ঘটনায় বাস মালিক সমিতিও নিশ্চুপ। সংগঠনের জেলা সম্পাদক জগন্নাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, “পাত্রসায়রে একটি ছোট ঝামেলার কথা আমরা জানতে পেরেছি। তবে জেলায় ৪৫০টি বাস চলাচল করে। এর মধ্যে কতগুলি বাস নেওয়া হয়েছে বলতে পারব না।” বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকার দাবি করেছেন, “তৃণমূলের সভার দু’দিন আগে যে ভাবে পাত্রসায়রে লাঠি হাতে যাত্রীদের বাস থেকে নামিয়ে বাসের দখল নেওয়া হল, তাতে শাসকদলেরই মুখ পুড়ল। মানুষ দেখলেন সিপিএম আর তৃণমূলের কোনও তফাত্‌ নেই। আগামী নির্বাচনগুলিতে মানুষ ওদের যোগ্য জবাব দেবেন।”

পাত্রসায়রের মতো অভিযোগ জেলার অন্যত্র শোনা না গেলেও রবিবার থেকেই কার্যত জেলার রাস্তায় বাস চলাচল কমে যায়। এ দিন ছুটির দিন থাকায় বাড়ির বাইরে লোকজন কম বের হলেও যাঁরা বেরিয়েছিলেন, তাঁদের অনেককেই গাড়ি না পেয়ে ভুগতে হয়েছে। যেমন এ দিন সকালে বিষ্ণুপুর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, সারি দিয়ে প্রচুর বাস দাঁড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু বাসকর্মীরা বাস ছাড়ছিলেন না। কেন? খোঁজ নিয়ে যাত্রীরা জানতে পারেন, দুপুর থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের তুলতে যেতে হবে। তাই তাঁরা বাস ছাড়বেন না। হঠাত্‌ করে এ দিনই বাস তুলে নেওয়ায় ফাঁপরে পড়েন যাত্রীরা।

জয়পুরের এক দম্পতি বলেন, “সকাল থেকে বিষ্ণুপুর বাসস্ট্যান্ডে ঘণ্টা দুয়েক ধরে বসে রয়েছি। এত বাস রয়েছে। কিন্তু সব তৃণমূল আগে থেকে ভাড়া নিয়েছে বলে বাসকর্মীরা আমাদের তুলতে চাইলেন না। কখন সরকারি বাস আসে, সেই অপেক্ষায় রয়েছি।” একই অবস্থা বিষ্ণুপুর থেকে সোনামুখী রুটের যাত্রীদেরও। বাসিন্দারা জানান, ওই রুটে কোনও সরকারি বাস চলে না। আরও লোক জড়ো হলে ট্রেকার ভাড়া করে তাঁরা বাড়ি ফিরবেন।

একই অভিযোগ শোনা গিয়েছে, বাঁকুড়া, সোনামুখী, খাতড়া-সহ বিভিন্ন এলাকায়। যাত্রীদের অভিযোগ, একে বাস না পেয়ে ভোগান্তি, তার উপরে গাড়ি ভাড়া করতেও মোটা টাকা খরচ হয়েছে। আজ সোমবার কী হয়, তা নিয়ে তাঁরা আশঙ্কিত। তবে জেলা সভাধিপতির দাবি, “জেলায় এমনতেই কিছু রুটে সরকারি বাস চলে। তার উপরে সোমবার বাড়তি ১৫টি বাস রাস্তায় নামানো হবে। ফলে যাত্রীদের সমস্যায় পড়তে হবে না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement