এ বার চাষে পর্যাপ্ত জল মিলবে তো? উত্তরের খোঁজে চাষিরা। ফাইল চিত্র
বোরো মরসুম শুরুর আগেই, পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বিদ্যুৎ চুরি রুখতে সতর্ক হচ্ছে রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানি। বণ্টন দফতরের দাবি, তারা লো-ভোল্টেজ সমস্যা ঠেকাতেও এখন থেকেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে।
কৃষি দফতর সূত্রে খবর, চলতি মাসের তৃতীয় এবং চতুর্থ সপ্তাহ থেকে বোরো ধানের চাষ শুরু হবে। বোরো মরসুমে বেশির ভাগ চাষী বিদ্যুৎ চালিত গভীর ও অগভীর নলকূপের ভরসায় ধান চাষে নামে। সেক্ষেত্রে মূলত লো ভোল্টেজ সমস্যায় জল অভাবে ধানের বীজতলা শুকিয়ে যায়। ধানের চারা রোপন করার পর, জলের অভাব নিয়ে চাষীদের অনেক জায়গায় বিক্ষোভ জানাতেও দেখা যায়। জেলাজুড়ে লো-ভোল্টেজ সমস্যা চলতে থাকায় বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষও। অন্য দিকে বোরো চাষের মরসুমের গোড়ার দিক যেহেতু মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষার সময়, তাই বিপাকে পড়েন পড়ুয়ারাও।
জেলায় বোরো ধানের চাষ রামপুরহাট এবং বোলপুর মহকুমায় বেশি হয়। এবার ওই দুই মহকুমায় লো-ভোল্টেজ সমস্যা দূর করার জন্য এবং অবাধ বিদ্যুৎ চুরি ঠেকাতে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি জেলায় কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে। কোম্পানির বীরভূম সার্কেলের রিজিওন্যল ম্যানেজার তপন কুমার দে বলেন, “বোরো মরসুমের আগে মুর্শিদাবাদ জেলার রঘুনাথ গঞ্জ থেকে মুরারই পর্যন্ত নতুন করে ৩৩,০০০ ভোল্টেজের লাইনের জন্য খুঁটি বসানো হচ্ছে। মাড়গ্রাম ও রাজগ্রামে ৩৩ কেভি নতুন সাব স্টেশন হচ্ছে। এ ছাড়া, মল্লারপুর, কোটাসুর, বোলপুরের মোলডাঙ্গা, লাভপুর, নানুর এই সমস্ত সাব স্টেশন গুলি একটি করে বেশি ট্রান্সফরমা বসানো হচ্ছে।”
এ ছাড়া জেলার সিউড়ি মহকুমার সদাইপুরে ২২০ কেভি সাব স্টেশন করা হচ্ছে। এতে জেলার লো ভোল্টেজ সমস্যা অনেকটা দূর হবে বলে আশাবাদী কোম্পানি। ঘটনা হল, নতুন খুঁটি অথবা সাব স্টেশন বাড়ালেও বোরো মরসুমে বিদ্যুৎ চুরির প্রকোপও বেড়ে যায়। তপনবাবুর দাবি, “বিদ্যুৎ চুরির প্রতিরোধের জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে এবার।”
এ দিকে ট্রান্সফরমার লোড নিতে না পারায় অধিকাংশ সময়ই পুড়েও যায়। রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির বীরভূম জেলার এক আধিকারিক জানান, এতদিন, বোরো মরসুমে বিদ্যুৎ চুরির প্রকোপ ঠেকাতে চাষীদের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার আগে যেমন ভাবে সুইড (স্টেট ওয়াটার ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট)-এর অনুমোদন পত্র ভালো ভাবে পরীক্ষা করে দেখা হতো, এখন আর সে রকম ভাবে দেখা হচ্ছে না।
কার্যত, চাষিদের কাছে ‘সুইড’-এর অনুমোদন থাকলেই বোরো ধান চাষের জন্য কোম্পানি থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার চল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির অনেক আধিকারিককে চাপের মুখেও পড়তে হচ্ছে। এ ভাবে ঢালাও অনুমোদনের জেরে সরকারি মহলেই নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বীরভূম জেলার বেশ কিছু এলাকায় বিশেষ করে নলহাটি ২, মুরারই ২ এবং রামপুরহাট ২ এলাকায় ভুগর্ভস্থ জল জলস্তর থেকে অনেক নীচে নেমে গিয়েছে। দেখা যাচ্ছে, যে সমস্ত এলাকাগুলি সেমি ক্রিটিক্যাল জোন হিসাবে জেলার মানচিত্রে চিহ্নিত, সেই এলাকাতেও যথেচ্ছ ভাবে ‘সুইড’-র অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।
রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির বীরভূম সার্কেলের রিজিওন্যাল ম্যানেজার তপন কুমার দে অবশ্য বলেন, “বোরো চাষীদের জন্য ‘সুইড’ এর অনুমোদন নিয়ে যে সমস্ত চাষী চাষ করার জন্য বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদন করছেন, তাঁদের আমরা রাজ্য সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী এককালীন ৮০০০ টাকা স্কিমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে।”