ফুটপাত দখলমুক্ত করতে গিয়ে ‘বাধা’

ফুটপাত দখলমুক্ত করতে গিয়ে তৃণমূল নেতার ‘বাধার’ মুখে পড়তে হল প্রশাসনকে। থমকে গেল দখলমুক্ত অভিযানও। এমন নজির মিলল রামপুরহাট শহরে! কয়েকমাস আগের কথা। রামপুরহাট শহরের ফুটপাত দখলমুক্ত করতে হবে এবং রাস্তার উপর জবর দখলকারীদের সরাতে হবে। সঙ্গে শহরের বেহাল নিকাশি ব্যবস্থা ভালো করার জন্য এবং যানজট ব্যবস্থা ঠিক করার জন্য সর্বদলীয় একটি বৈঠক ডেকেছিলেন মহকুমাশাসক উমাশঙ্কর এস।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রামপুরহাট শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:১০
Share:

এই গুমটি ঘিরেই বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র।

ফুটপাত দখলমুক্ত করতে গিয়ে তৃণমূল নেতার ‘বাধার’ মুখে পড়তে হল প্রশাসনকে। থমকে গেল দখলমুক্ত অভিযানও। এমন নজির মিলল রামপুরহাট শহরে!

Advertisement

কয়েকমাস আগের কথা। রামপুরহাট শহরের ফুটপাত দখলমুক্ত করতে হবে এবং রাস্তার উপর জবর দখলকারীদের সরাতে হবে। সঙ্গে শহরের বেহাল নিকাশি ব্যবস্থা ভালো করার জন্য এবং যানজট ব্যবস্থা ঠিক করার জন্য সর্বদলীয় একটি বৈঠক ডেকেছিলেন মহকুমাশাসক উমাশঙ্কর এস। ঠিক হয়েছিল, ওই বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েই কাজ শুরু করবেন। মঙ্গলবার সেই কাজ করতে গিয়েই বিতর্কে জড়ালেন তিনি।

বিতর্কের সূত্রপাত রামপুরহাট পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর আব্বাস হোসেনের একটি গুমটি সরানো নিয়ে। শহরে ডাকবাংলা পাড়ার সিনেমাতলার কাছে রামপুরহাট দুমকা রোডের উপর আব্বাস হোসেনের ওই গুমটি। তাঁর দাবি, “দীর্ঘ ষোলো বছর যাবত্‌ একই জায়গায় তাঁর ওই গুমটি রয়েছে। প্রথমে কেবলমাত্র লটারির টিকিট বিক্রির ব্যবসা ছিল। পরে লটারির টিকিট বিক্রির পাশাপাশি সিগারেট এবং কিছু স্টেশনারি সামগ্রী বিক্রির দোকান হয় বলে তিনি জানিয়েছেন।

Advertisement

ঘটনা হল, মঙ্গলবার সকাল সওয়া নটা নাগাদ রামপুরহাট মহকুমা শাসক উমাশঙ্কর এস ওই দোকানের দুই কর্মচারীর সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলার পর দোকানে তালা লাগিয়ে দেন। খবর যায় আব্বাস হোসেনের কাছে। তাঁর কথায়, “আমি পুরসভায় এলাকায় রাস্তা সারাই এর কাজে ব্যস্ত ছিলাম। পরে জানতে পারি আমার দোকানের কাজের লোকদের সরিয়ে দিয়ে এসডিও সাহেব দোকানে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। আমি এসডিও সাহেবকে বুঝিয়ে বলি।

পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ওই কাউন্সিলর ইতিমধ্যেই তাঁর গুমটি সরানোর বিষয় নিয়ে রামপুরহাট বিধায়ক তথা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রতি মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, পুরসভার পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারি, রামপুরহাট শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতির দ্বারস্থ হয়েছেন।

তাঁর দাবি, এলাকার লোক তাঁকে ওই জায়গায় দোকান করতে বলেছেন। “দোকান নিয়ে কোনও রাজনৈতিক দলের আপত্তি নেই। অথচ আমাকে না জানিয়ে এসডিও এই ভাবে গুমটি সরাতে এসেছেন। তাঁকে বলি, ‘এটা স্যার ঠিক হচ্ছে না।’ এর পরেই উনি চাবি দিয়ে দেন।” কী বলছেন রামপুরহাট বিধায়ক তথা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য প্রতি মন্ত্রী আশিসবাবু? তিনি বলেন, “কাউন্সিলর আমাকে ঘটনার কথা জানিয়েছে। এসডিও সাহেবের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। বিষয়টি টাউন সভাপতি দেখছেন।”

রামপুরহাট শহর তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি সুশান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, “সর্বদলীয় বৈঠকে সিধান্ত হয়, নিকাশি নালার উপর যারা দোকান করে আছেন, তারা নালা পরিষ্কার রাখার জন্য সপ্তাহে একদিন তা খোলা রেখে দেবেন। ফুটপাতের উপর যারা ব্যবসা করছেন তাদের জন্য পুর্নবাসন না করে ফুটপাত ভাঙ্গলে শহরে অনেকে বেকার হয়ে পড়বে।”

এদিকে শহরের একাংশের বক্তব্য, পুনর্বাসন না করে ব্যবসা বন্ধ করলে শহরে চুরি ছিনতাই বাড়বে। মহকুমা শাসককে সে কথা বলা হয়েছে বলে জানান সুশান্তবাবু। তিনি এও বলেন, “আব্বাস হোসেনকেও রাস্তা ছেড়ে কিছুটা পিছিয়ে আসতে হতে পারে। কিন্তু সেক্ষেত্রেও অসুবিধা হবে। কারণ, গুমটি সরাতে গেলে পিছনের রাস্তায় যাতায়াত করতে অসুবিধা হবে। আবার এসডিও সাহেবকেও কাজ করতে দিতে হবে।”

রামপুরহাট শহরজুড়ে যানজট সরাতে চারদিন আগেও মহকুমা শাসককে দেখা গিয়েছিল শহরের কামারপট্টি মোড়, রামপুরহাট ভাঁড়শালা মোড় থেকে জবর দখল সরাতে। মঙ্গলবার সকালেও চলে তাঁর অভিযান। আব্বাস হোসেনের ক্ষেত্রে কি ব্যবস্থা নেবেন তিনি? উত্তরে বলেন, “সর্বদলীয় বৈঠকে যে সিধান্ত হয়, তেই মতো ফুটপাতে দখলমুক্ত অভিযানের কাজ চলছে। আব্বাস হোসেনের ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারি বলেন, “পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত, ফুটপাত দখলমুক্ত করা যাবে না। তবে ফুটপাতবাসীকেও নিয়ম মেনে চলতে হবে। আব্বাস হোসেনের ক্ষেত্রে এসডিওর সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement