লুঠপাটের কায়দাটা হুবহু এক। মাঝে দু’সপ্তাহের ব্যবধান।
আগের লুঠপাটের ঘটনায় পুলিশ এখনও পর্যন্ত কাউকে ধরতে পারেনি। তার মধ্যেই ফের মঙ্গলবার রাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে পরপর মোটরবাইক আটকে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটল বড়জোড়ায়। দু’সপ্তাহ আগে এই বড়জোড়ারই মালিয়াড়া থেকে দুর্গাপুর ব্যারাজ যাওয়ার রাস্তায় একই ভাবে ছিনতাইয়ের ঘটনায় আলোড়ন পড়ে গিয়েছিল এলাকায়। দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবিতে পথ অবরোধও করেন বাসিন্দারা। তার পরেও মঙ্গলবার বড়জোড়ার নতুনগ্রাম থেকে প্রতাপপুর যাওয়ার একটি গ্রামীণ রাস্তায় ঘণ্টাখানেক ধরে বিনা বাধায় ছিনতাই চলায় এ বার পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল। পুলিশ জানিয়েছে, কয়েক হাজার টাকা, সোনার গয়না ও মোবাইল লুঠ করার অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
নতুনগ্রাম লাগোয়া নাদিন গ্রামে একটি বিয়ে আসর ছিল। দুষ্কৃতীরা রাত প্রায় ন’টা থেকে এক ঘণ্টা মোটরবাইক আটকে ছিনতাই চালায় বলে অভিযোগ। ছিনতাইবাজদের খপ্পরে প্রথম পড়েন নতুনগ্রামের বাসিন্দা জয়ন্ত ঘড়ুই। তিনি মোটরবাইক নিয়ে বড়জোড়া থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। জয়ন্তবাবুর অভিযোগ, “দুষ্কৃতীরা নাদিন গ্রাম ও নতুনগ্রামের মাঝে একটি ফাঁকা এলাকা বেছে নিয়েছিল। মোটরবাইক নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে প্রথমে মুখে মাফলার বাঁধা দু’জন ব্যক্তিকে রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। কাছাকাছি যেতেই একটা বাঁশ দিয়ে হঠাত্ ওই দু’জন পথ আটকায়। বাধ্য হয়ে দাঁড়িয়ে যাই। পিছন থেকে আরও দু’জন এগিয়ে আসে। তাদের এক জনের হাতে ছিল কাটারি, অন্য জনের হাতে রিভলবার। আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে সব ওদের হাতে তুলে দিতে বলে। তারা মানিব্যাগ, ঘড়ি, মোবাইল কেড়ে নেয়।” এর পর অবশ্য জয়ন্তবাবুকে তারা ছেড়ে দেয়নি। মাফলার দিয়ে তাঁর মুখ বেঁধে ফেলে। তারপর দড়ি দিয়ে পিছমোড়া করে বেঁধে রাস্তার পাশে একটি ঝোপে তাঁকে বসিয়ে রাখে দুষ্কৃতীরা। চিত্কার করা বা পালানোর চেষ্টা করলে গুলি করে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
একই ভাবে ছিনতাইবাজদের কবলে পড়েন নতুনগ্রামের বাসিন্দা প্রহ্লাদ ঘরুই। তিনি নাদিন গ্রামে বিয়ে বাড়ি সেরে বাড়ি ফিরছিলেন। দুষ্কৃতীরা পথ আটকানোর পরেই তিনি চিত্কার করার চেষ্টা করতেই তাঁর ঘাড়ে কাটারির উল্টো দিক দিয়ে আঘাত করে দুষ্কৃতীরা। এর পর মাফলার তাঁর মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে আটোসাঁটো করে বেঁধে দেয়। হাত দু’টি পিছমোড়া করে বেঁধে জয়ন্তবাবুর কাছে তাঁকেও বসিয়ে দেওয়া হয়। এই ভাবেই দুষ্কৃতীদের খপ্পরে পড়েন বড়জোড়ার পিংরুই গ্রামের কার্তিক দাস, ময়রাশোলের নির্মল দের মতো সাত জন। লুঠপাট পর্ব শেষ করে মালপত্র একটি থলিতে ভরে বড়জোড়ার দিকে অন্ধকার মাঠ ধরে পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। ঘটনার কথা জানাজানি হতে গ্রামবাসীরা এসে সবাইকে উদ্ধার করে পুলিশে খবর দেন।
বুধবার ঘটনার তদন্তে গ্রামে যান বাঁকুড়া জেলা পুলিশের ডিএসপি (প্রশাসন) আনন্দ সরকার। মালিয়াড়া-দুর্গাপুর ব্যারাজ রাস্তায় কিছুদিন আগে এ ভাবেই পরের পর বাইক-গাড়ি থামিয়ে লুঠপাট চলার পরে পুলিশ কী ব্যবস্থা নিয়েছে জানতে চাওয়া হলে ডিএসপি বলেন, “রাতে ওই রাস্তার পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের মোবাইল ভ্যান টহল দিচ্ছে। আমরা দুষ্কৃতীদের খোঁজ শুরু করেছি। আশা করছি, তারা শীঘ্রই ধরা পড়বে।”
এ দিকে একই এলাকায় পরপর দু’বার এ রকম লুঠপাটের ঘটনা ঘটে যাওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সুজয় চৌধুরী বলেন, “কিছু দিনের ব্যবধানে দু’বার ছিনতাই হল বড়জোড়া শিল্পাঞ্চলে। এটা পুলিশের পক্ষে লজ্জাজনক ঘটনা। সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষমতাই যে পুলিশের নেই, এর থেকে সেটাই প্রমাণ হল।” এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন বড়জোড়ার তৃণমূল বিধায়ক আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ও। তবে, পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কোনও কারণ নেই বলেই তাঁর বক্তব্য। তিনি বলেন, “পুলিশ সুপারের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তদন্তের কাজ পুলিশ গুরুত্ব সহকারেই করছে।”