সেই শিশু। —নিজস্ব চিত্র।
মাঠ থেকে উদ্ধার হওয়া সদ্যোজাতকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলেন গ্রামবাসী। পরে সেই শিশুকেই নিজের সন্তান বলে দাবি করলেন এক অবিবাহিতা তরুণী। ঘটনাটি রঘুনাথপুর থানার শাঁকা গ্রামের। তবে শিশুকন্যাটিকে তাঁর হাতে তুলে দেয়নি শিশু কল্যাণ সমিতি। সমিতির জেলা চেয়ারপার্সন অমিতা মিশ্র বলেন, “নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে আবেদন করলে তারপর ওই শিশুটিকে তরুণীর কাছে দেওয়া সম্ভব।”
শিশু কল্যান সমিতি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার দুপুরে নপাড়া গ্রামের অদূরে মাঠের মধ্যে এক সদ্যোজাতকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা খবর দেন গ্রামের আশা কর্মী বেলা বাউরিকে। তারই উদ্যোগে শিশুটিকে ভর্তি করানো হয়েছিল রঘুনাথপুর মহকুমা হাসপাতালে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটির চিকিৎসা শুরু করে পুলিশ ও চাইল্ড লাইনকে ঘটনাটি জানান।
কিন্তু পরের দিনই এলাকার এক তরুণী হাসপাতালে গিয়ে দাবি করেন, ওই শিশুটি তাঁরই সন্তান। আদ্রার মণিপুরের চাইল্ড লাইনের কর্মকর্তা মন্টু মাহাতো বলেনস “রঘুনাথপুর হাসপাতালে আমরা দেখি এক অবিবাহিতা তরুণী ওই সদ্যোজাতকে নিজের সন্তান বলে দাবি করছেন। পুরো বিষয়টি শিশু কল্যান সমিতিকে জানানো হয়। তাদের নির্দেশ মতো আমরা শিশুটিকে আপাতত পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের নবজাতক শিশু পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি করি।”
সম্প্রতি এলাকায় গিয়ে ওই তরুণীর সঙ্গে কথা বলেন শিশু কল্যাণ সমিতির জেলা চেয়ারপার্সন। তিনি বলেন, “ওই তরুণী আমাদের কাছে দাবি করেছেন এলাকার এক যুবকের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওই যুবক তার সঙ্গে সহবাস করায় তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। কিন্তু ওই যুবক বিয়ে না করে মাস চারেক আগে কাজ করতে চেন্নাই চলে যান। তিনি সন্তানের জন্ম দিলেও লোকলজ্জার ভয়ে শিশুটিকে পরিত্যাগ করেন।”
এখন কেন শিশুটিকে ফিরিয়ে নিতে চাইছেন? ওই তরুণীর দাবি, “লোকলজ্জায় প্রথমে নিজের সন্তানকে ছেড়ে দিলেও পরে ঠিক করি আমিই ওকে প্রতিপালন করব। তাই ওকে ফিরিয়ে নিতে চাইছি। ওকে ছেড়ে আমি থাকতে পারব না।” তবে তা মোটেই সহজ নয়।
শিশু কল্যাণ সমিতির চেয়ারপার্সন বলেন, “আমরা ওই যুবকের পরিবারের সঙ্গেও কথা বলেছি। দুই পরিবার আলোচনা করে আগে তাঁদের বিয়ে দিক। তারপরে নিয়ম মেনে শিশুটিকে ফেরত চেয়ে তাঁরা আবেদন করুক। তবে শিশুটির ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে।” কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে যদি ওই যুবক তরুণীকে বিয়ে করতে অসম্মত হয়, সে ক্ষেত্রে কী হবে? তিনি জানান, তারপরেও যদি ওই তরুণী শিশুটিকে ফেরত চেয়ে আবেদন করেন, তা হলে ওই তরুণীর ডিএনএ পরীক্ষা করে সন্তোষজনক ফল পাওয়া গেলে শিশুটিকে তার কাছে ফিরিয়ে দিতে সমস্যা হবে না। চেষ্টা করেও ওই যুবক বা তাঁর পরিজনদের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শিশুটি সুস্থ রয়েছে। অমিতাদেবী জানান, তাকে পরে পুরুলিয়ার ভাটবাঁধ মহিলা সমিতির হোমে রাখা হবে।