পাড় ভেঙে জলশূন্য বড়বাঁধ, সঙ্কটে চাষ

প্রায় ৩৫ একরের একটা বড় পুকুর। গরম পড়তে না পড়তেই সেই পুকুর শুকিয়ে গিয়ে জলশূন্য হয়ে পড়েছে। ফলে জলের অভাবে চরম সমস্যায় পড়েছেন রাইপুর ব্লকের ধর্মপুর গ্রামের বাসিন্দারা। অবিলম্বে ওই পুকুর সংস্কারের দাবিতে সরব হয়েছেন এলাকার বাসিন্দা থেকে চাষি সকলেই। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে জঙ্গলমহলের রুক্ষ এলাকায় জল সংরক্ষণের জন্য ‘জল ধরো, জল ভরো’ প্রকল্প চালু হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রাইপুর শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৪ ০১:০৬
Share:

জল নেই রাইপুরের ধর্মপুরের বাঁধে। এ বার ৫০০ বিঘা জমির চাষ অনিশ্চিত। ছবি: দেবব্রত দাস।

প্রায় ৩৫ একরের একটা বড় পুকুর। গরম পড়তে না পড়তেই সেই পুকুর শুকিয়ে গিয়ে জলশূন্য হয়ে পড়েছে। ফলে জলের অভাবে চরম সমস্যায় পড়েছেন রাইপুর ব্লকের ধর্মপুর গ্রামের বাসিন্দারা। অবিলম্বে ওই পুকুর সংস্কারের দাবিতে সরব হয়েছেন এলাকার বাসিন্দা থেকে চাষি সকলেই।

Advertisement

রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে জঙ্গলমহলের রুক্ষ এলাকায় জল সংরক্ষণের জন্য ‘জল ধরো, জল ভরো’ প্রকল্প চালু হয়েছে। অথচ এই মেলেড়া পঞ্চায়েতের ধর্মপুর গ্রামের বড়বাঁধ নামের ওই পুকুর সংস্কারের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে জল শূন্য হয়ে পড়ে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ, ওই বাঁধের পাড়ের একাংশ ধসে গিয়েছে গত বর্ষায়। তখন কিছুটা জল বেরিয়ে গিয়েছে। অবশিষ্ট জল গরম পড়তে না পড়তেই শুকিয়েছে। কিন্তু পাড় মেরামতি বা সংস্কারের ব্যাপারে প্রশাসনের এখনও কোনও হুঁশ নেই।

রাইপুরের বিডিও দীপঙ্কর দাস বলেন, “বড়বাঁধটি ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে সংস্কারের জন্য পঞ্চায়েত প্রধানকে বলা হয়েছে। এরই পাশাপাশি এলাকার কয়েকটি মিনি চেকড্যাম ও বড় পুকুর সংস্কারের জন্য কৃষি-সেচ দফতরের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।”

Advertisement

বারিকুল থানার ধর্মপুর গ্রামের মোড় থেকে লুড়কা যাওয়ার মোরাম রাস্তার ধারে ওই পুকুরের অবস্থান। এলাকার মানুষের কাছে ওই পুকুরটি বড়বাঁধ নামেই পরিচিত। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বড়বাঁধের মালিক হলেন গ্রামের কানাই দে, মৃণাল দে, সুবল দে, প্রশান্ত দে-সহ অনেকেই। তাঁরা জানান, গত বর্ষায় বড়বাঁধের একদিকের পাড়ের কিছুটা অংশ জলের চাপে ধসে যায়। ওই ভাঙা অংশ দিয়ে অধিকাংশ জল বেরিয়ে যায়। যে টুকু ছিল তাও শুকিয়ে গিয়েছে। বড়বাঁধের মালিকদের ক্ষোভ, “এত বড় একটা জলাশয়ে আগে প্রচুর পরিমাণে মাছচাষ করা যেত। কিন্তু জল না থাকায় এ বার মাছচাষ বন্ধ।”

ওই বড়বাঁধ থেকে সরু দাঁড়ার মধ্য দিয়ে জল যেত লাগোয়া জমিতে। মেলেড়া পঞ্চায়েতের ধর্মপুর, গোজদা, লাগদা, লুড়কা এবং ঢেকো পঞ্চায়েতের সারসবেদ্যা, চাকা, চরকোল-সহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি মৌজার প্রায় ৫০০ বিঘা জমিতে সেচের জল মিলত। গ্রীষ্মকালে বাঁধের জল এলাকার বাসিন্দাদের নানা কাজে লাগত।

সম্প্রতি ওই বড়বাঁধে গিয়ে দেখা গেল, একদিকের মাটির পাড় প্রায় ১০ ফুট ধসে পড়ছে। জল প্রায় নেই বললেই চলে। শুকিয়ে যাওয়া বড়বাঁধের অনেকটাই আগাছায় ভর্তি। ধূ ধূ করা বড়বাঁধে চরছে গরু, মোষ, ছাগল। ধর্মপুর গ্রামের বাসিন্দা বিপ্লব দে, প্রশান্ত দে-র বক্তব্য, “স্নান করা থেকে মাছ চাষ সবই হত এই বড়বাঁধে। এখন জল না থাকায় দৈনন্দিন কাজকর্মের প্রচণ্ড অসুবিধা হচ্ছে।” গোজদা গ্রামের নবীন বিশুই, লাগদা গ্রামের গগন হাঁসদার মতো কৃষকদের ক্ষোভ, “জল ধরে রেখে যে সেচের সুবিধা আগে পাওয়া যেত তা এখন পুরোপুরি বন্ধ। জলের অভাবে রবি ও খরিফ চাষ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ক্ষতি হচ্ছে শাকসব্জি চাষেও।” এলাকার চাষিদের বক্তব্য, পরিকল্পনার অভাবে বড়বাঁধের সংস্কার হয়নি। গভীর ভাবে ওই বড়বাঁধের মাটি কেটে সংস্কার করা হলে বিপুল পরিমাণে জলধারণ সম্ভব হবে। ফলে সেচের সুবিধা আরও বেশি করে পাওয়া যাবে।

মেলেড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের রাজকুমার সিংহ সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন। তিনিও বলেন, “ধর্মপুরের ওই বড়বাঁধটির অবিলম্বে সংস্কারের প্রয়োজন। কিন্তু বাঁধটি চাতালের মতো হওয়ায় জল ধরে রাখতে গেলে আশপাশে উঁচু করে পাথর-সিমেন্ট দিয়ে পাকা কংক্রিটের প্রাচীর তৈরি করতে হবে। এ ছাড়া জলাশয়ে ১৫-২০ ফুট গভীর করে মাটি কাটাতে হবে। সব মিলিয়ে কয়েক কোটি টাকার দরকার। তাই আমরা কৃষি-সেচ দফতরের কাছে ওই পুকুরটি পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের জন্য আবেদন জানিয়েছি।”

বাঁকুড়া জেলা কৃষি-সেচ দফতরের সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার মেঘনাথ মই বলেন, “কিছুদিন আগে ওই পুকুরটি সরজমিনে দেখে এসেছি। ওই জলাশয়ের পূর্ণ সংস্কারের পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি খরচের তালিকা পাঠানো হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ হলেই কাজ শুরু হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement