প্রথম পুজো আয়োজন যৌনকর্মীদের

সমাজের চোখে ওঁরা ‘অপাংক্তেয়’, ‘অচ্ছুৎ’। এতদিন ওঁরা পুজো মণ্ডপে গিয়েছেন মুখ লুকিয়ে। অথচ ওঁদের উঠোনের মাটি ছাড়া দুর্গা পুজো হয় না। সেই যৌনকর্মীরাই এ বার নিজেদের পাড়ায় আয়োজন করেছেন দুর্গা পুজো। গঠন করেছেন দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি। বৃষ্টি ভেজা সোমবারের দুপুরে বিষ্ণুপুরের গোপালগঞ্জে দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি আয়োজিত পুজোর খুঁটি পুজো হয়েছে।

Advertisement

স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৫৮
Share:

দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির উদ্যোগে চলছে খুঁটিপুজো। সোমবার শুভ্র মিত্রের তোলা ছবি।

সমাজের চোখে ওঁরা ‘অপাংক্তেয়’, ‘অচ্ছুৎ’। এতদিন ওঁরা পুজো মণ্ডপে গিয়েছেন মুখ লুকিয়ে। অথচ ওঁদের উঠোনের মাটি ছাড়া দুর্গা পুজো হয় না। সেই যৌনকর্মীরাই এ বার নিজেদের পাড়ায় আয়োজন করেছেন দুর্গা পুজো। গঠন করেছেন দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি।

Advertisement

বৃষ্টি ভেজা সোমবারের দুপুরে বিষ্ণুপুরের গোপালগঞ্জে দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটি আয়োজিত পুজোর খুঁটি পুজো হয়েছে। পুজোর বাজেট ৮০ হাজার ছাড়ালেও বাইরের কারও কাছে হাত পাততে হয়নি ওই যৌনকর্মীদের। পুজোর আয়োজন সবটাই নিজেদের জমানো টাকায় হয়েছে। এ দিন দুপুরে এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, খুঁটি পুজো উপলক্ষে নতুন পোশাকে হাজির হয়েছেন প্রায় শ-দেড়েক যৌনকর্মী। নিজেরাই আল্পনা আঁকলেন, প্রদীপ জ্বালালেন। নিষ্ঠা ভরে খুঁটির চারপাশে ছড়িয়ে দিলেন গাঁদা ফুল। পুরোহিত মন্ত্র পড়লেন। রীতিনীতি মেনে পুজো শুরু করলেন। প্রথামতো বাঁশের খুঁটিতে লাল শালু বেঁধে হয়ে গেল অনুষ্ঠান।

এই পুজো কমিটির সম্পাদিকা পদ্মা পাত্র বললেন, “বাইরের পুজো মণ্ডপে যেতে আমরা একটু ইতস্তত বোধ করতাম। পুষ্পাঞ্জলিও দেওয়া যেত না। তাই নিজেরা পুজো আয়োজন করব এই ইচ্ছে অনেকদিনের। সারা বছরের চেষ্টায় তিলে তিলে জমানো টাকায় এই প্রথম পুজো করছি। আর্থিক সমস্যা মিটে যাওয়ায় পুজো আয়োজনে নেমে পড়লাম। আমাদের দীর্ঘদিনের ইচ্ছে বাস্তবায়িত করতে পেরে খুবই ভাল লাগছে।” পুজো আয়োজন করতে পেরে সকলের চোখে মুখে আনন্দ ভেসে উঠছে। পুজো কমিটির সভাপতি মালতি দাস, কোষাধ্যক্ষ সঙ্গীতা ঘোষ-সহ পল্লির সবাই বললেন, “পুজো ক-দিন মণ্ডপেই কাটবে। একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া হবে। দুর্গা মায়ের আরাধনায় খুব আনন্দ করব আমরা।” আইসি (বিষ্ণুপুর) স্বপন দত্ত বলেন, “ওঁরা পুজোর জন্য আবেদন করেছেন।” এলাকাটি ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে। এলাকার বাসিন্দা তথা প্রাক্তন কাউন্সিলর উদয় ভকত বলেন, “নানা কারণে এলাকার অন্য অন্য অনুষ্ঠানগুলিতে তাঁদের যোগ দিতে খুব একটা দেখা যায় না। নিজেদের উদ্যোগে এত বড় একটা পুজো আয়োজন করছেন সত্যিই প্রশংসনীয়।”

Advertisement

অন্য ক্লাব বা পারিবারিক পুজোর মতো এখানেও মণ্ডপ সজ্জা থেকে ঢাক, মাইক, পুজোর আচার আয়োজনের নানা সামগ্রী-সবই থাকছে। কিছুই বাদ যাচ্ছে না। সম্পাদিকার কথায়, “বিষ্ণুপুরেরই এক শিল্পী মূর্তি গড়েছেন। পুজো করবেন এলাকারই এক পুরোহিত। আলো, প্যান্ডেল সব মিলিয়ে বাজেট ৮০ হাজারের বেশি।” তবে আনন্দের রেশ ছড়িয়ে পড়লেও প্রথম পুজোর থিম কী? মণ্ডপ ভাবনাও বা কী রকম? এই প্রশ্নের উত্তর এখনই উত্তর দিতে চান না উদ্যোক্তারা। শুধু এটুকুই জানালেন, প্রথম বারের পুজো চমক তো কিছু থাকবেই!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement