বিকিকিনি। সোমবার শান্তিনিকেতনে তোলা নিজস্ব চিত্র।
কলাভবনের ছাত্রীকে নির্যাতন থেকে ভর্তিতে সংরক্ষণের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন নানা ঘটনার জেরে বিশ্বভারতীর গায়ে গত কয়েক মাস ধরে বিতর্কের আঁচ লেগেই রয়েছে। এমনকী, এ বারের কলাভবনের নবীনবরণ অনুষ্ঠানও বাতিল করতে হয়েছে। সোমবার এই পরিস্থিতি কাটিয়ে ফের উত্সবে মেতে উঠলেন বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীরা। উপলক্ষ বহু দিন ধরে চলে আসা ‘নন্দন মেলা’। আর তার হাত ধরেই যেন কিছুটা হলেও স্বাভাবিক পরিবেশে ফেরার চেষ্টা শুরু করল বিশ্বভারতী। রীতি মেনে এ দিন সন্ধ্যায় কলাভবন চত্বরে শুরু হল দু’দিনের এই মেলা। যেখানে বিশ্বভারতীর দেশি-বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি বিভিন্ন বিভাগ যোগ দিয়েছে।
কলাভবনের অধ্যক্ষ শিশির সাহানা বলেন, “যে কোন কারণেই হোক, সব রকমের প্রস্তুতির পরেও কলাভবনের ‘ইন্ট্রো’ (নবীনবরণ) বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিলাম। আমাদের ছাত্রছাত্রীরা এ নিয়ে খানিকটা হলেও মর্মাহত ছিলেন। আশা রাখছি, নন্দন মেলা কিছুটা হলেও তাঁদের আনন্দ দেবে।” প্রসঙ্গত, ৩ ডিসেম্বর বিশিষ্ট শিল্পী নন্দলাল বসুর জন্মদিন। ওই জন্মদিনকে স্মরণীয় করে তুলতে ফির বছর কলাভবন কর্তৃপক্ষ পয়লা ডিসেম্বর থেকে দু’দিনের জন্য ফি বছর এই শিল্প মেলার আয়োজন করে। যে মেলা এ বার ৪১তম বর্ষে পা দিল। দেশ-বিদেশের শিল্প রসিকদের আনাগোনার পাশাপাশি প্রাক্তনীদের মিলন মেলাও বটে এই শিল্পমেলা। কলাভবনের অধ্যক্ষ বলেন, “চলতি বছর থেকে নন্দন মেলায় অবসরপ্রাপ্ত শিল্পী, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সংবর্ধনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বছর অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তথা শিল্পী সুখেন গঙ্গোপাধ্যায় এবং অরুণ পালকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।” তাঁর দাবি, কলাভবনের এই নন্দন মেলা বর্তমানে শিল্প ও সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক মঞ্চ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। মেলায় দেশি-বিদেশী শিল্পী ছাত্রছাত্রীরা তাঁদের শিল্পকর্মের পসরা সাজিয়ে বসেন। পাশাপাশি নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও পরিবেশন হবে। দু’ দিনের এই শিল্প-সংস্কৃতির মেলায় বহু পর্যটকেরও সমাগম হয়। শিল্প কর্ম বিক্রি থেকে উপার্জিত টাকা ছাত্রছাত্রী কল্যাণ তহবিলে জমা পড়ে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য করার পাশাপাশি সেই তহবিল থেকে দুস্থ পড়ুয়াদের বৃত্তিও দেওয়া হয়ে থাকে।
এ দিন সন্ধ্যা থেকেই নানা রকমের রঙিন আলোর রোশনাইয়ে ভেসে গিয়েছে গোটা কলাভবন চত্বর। প্রাক্তনীদের স্টলে বর্ষীয়ান শিল্পী থেকে এই প্রজন্মের নবাগত শিল্পীরা ভিড় জমিয়েছেন। কেউ অতীতের বিশিষ্ট শিক্ষক-শিল্পীদের স্মৃতিচারণা করছেন তো কেউ মেতে উঠেছেন সাম্প্রতিক শিল্পকর্মের চর্চায়। বিভিন্ন প্রদেশের ছাত্রছাত্রীরা সমবেত হয়ে চাতালে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করেছেন। নতুন বর্ষের ক্যালেন্ডার থেকে নানা শিল্প কর্মের পসরা সাজিয়ে বসেছেন শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীরা। কলাভবনের ছ’টি বিভাগের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা ছ’টি স্টল। শিল্পকর্ম বিকিকিনির পাশাপাশি বিদেশী ছাত্রছাত্রীদের উদ্যোগে মেলায় নানা রকমের খাবার দাওয়ারের স্টলও বসেছে। বসেছে অত্যাধুনিক ট্যাটুর স্টলও। প্রথম দিনেই জমে উঠেছে ক্রমে জনপ্রিয় হয়ে ওটা এই মেলা।