মেডিক্যাল কলেজের হস্টেলে ছাত্রীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের ঘটনার তদন্তে পুরুলিয়ায় পৌঁছল মহারাষ্ট্রের নাসিরাবাদ থানার পুলিশের একটি দল।
গত ২৪ মে ওই রাজ্যের জলগাঁওয়ে উল্লাস পাটিল মেডিক্যাল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী, পুরুলিয়ার কেতিকা এলাকার প্রিয়াঙ্কা মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু হয়। তাঁর বিছানা থেকে যে সুইসাইড নোট মেলে তাতে লেখা ছিল, তিন রুমমেটের মানসিক নির্যাতনের জন্যই আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন তিনি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রিয়াঙ্কার মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনার তদন্তকারী অফিসার রমেশকুমার নগরালি-সহ তিন পুলিশকর্মী পুরুলিয়ায় এসেছেন। মৃত ছাত্রীর এক বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছেন তাঁরা। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীরকুমার বলেন, “নাসিরবাদ থানার পুলিশ কল্যাণ গরাই নামে প্রিয়াঙ্কার এক বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সুইসাইড নোটটি বাবা-মা ছাড়াও বুম্বা নামে এক জনের উদ্দেশে লিখেছিলেন প্রিয়াঙ্কা। দেহ উদ্ধারের পরে তাঁর মোবাইল ফোনটি ফোনটি বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। তাতে দেখা যায়, সে দিন পুরুলিয়ার একটি নম্বরের সঙ্গেই ফোনে শেষ কথা বলেছিলেন প্রিয়াঙ্কা। সেই নম্বরটি বুম্বার। কললিস্ট অনুযায়ী, তাঁর সঙ্গে সে দিন একাধিক বার কথা হয় প্রিয়াঙ্কার। বুম্বার সঙ্গে কথা বলতেই শনিবার মহারাষ্ট্র থেকে পুলিশ পুরুলিয়ায় আসে।
শহরে পৌঁছেই পুরুলিয়া সদর থানার পুলিশকে নিয়ে রমেশকুমার নগরালিরা যান কেতিকা এলাকায় কল্যাণ গরাঁই নামে এক যুবকের বাড়িতে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কল্যাণই বুম্বা। তিনি হুগলির একটি কলেজে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেন। কল্যাণকে পুরুলিয়া সদর থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে নাসিরাবাদের পুলিশ।
তবে কল্যাণের কাছে কী কী জানতে চাওয়া হয়েছে, তা তদন্তকারী অফিসারেরা জানাতে চাননি। পুলিশ সুপারও এ ব্যাপারে কিছু বলতে চাননি। পুলিশের একটি সূত্রের খবর, প্রিয়াঙ্কা কল্যাণকে কিছু জানিয়েছিলেন কি না বা তিনি অন্য কিছু জানতেন কি না, তা জানার চেষ্টা চালাচ্ছে মহারাষ্ট্র পুলিশ।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে কোনও কথাই বলতে চাননি কল্যাণ। তাঁর বাবা কার্তিক গরাঁইও বলেন, “পুলিশ ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এ নিয়ে আমি কিছুই জানি না।” প্রিয়াঙ্কার বাবা, পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের শল্য চিকিৎসক নয়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, “মহারাষ্ট্রের পুলিশকর্মীরা আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাঁরা আমার মেয়ের এখানে যে সমস্ত বন্ধু ছিল, যাঁদের সঙ্গে ওর ফোনে কথাবার্তা হত, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। আমি তাঁদের বলেছি, প্রিয়াঙ্কার সুইসাইড নোটে লেখা রয়েছে, ‘আমি প্রিয়ার (মৃত ছাত্রীর রুমমেট, অন্যতম অভিযুক্ত) ব্যাপারে কোনও গুজব ছড়াইনি’।
তার পরেই লিখেছে, ‘দে ফোর্সড মি মেন্টালি টু টেক দিস স্টেপ’। ফলে, তদন্তে এটা সামনে আসা দরকার, ঠিক কী ঘটেছিল।” জলগাঁওয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এন অম্বিকা বলেন, “আমাদের তদন্তকারী দল পুরুলিয়া গিয়েছে। গোটা বিষয়টিই তদন্তের অঙ্গ। ওই ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত চলছে।”