বামিরা গ্রামে তৃণমূলের এই অফিসেও হামলা হয়েছে। —নিজস্ব চিত্র।
গত বিধানসভা ভোটের পর থেকেই এলাকা বিরোধীশূন্য। তবু রাজনৈতিক সংঘর্ষের বিরাম নেই পাত্রসায়রে। আর এই সংঘর্ষ মূলত তৃণমূলেরই একাধিক গোষ্ঠীর মধ্যে। লোকসভা ভোটের পরেও এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পাত্রসায়রের বালসি-১ পঞ্চায়েত এলাকা।
দলের বৈঠক সেরে বাড়ি ফেরার পথে সোমবার রাতে মৌকুচি মোড়ের কাছে, পাত্রসায়র-বিষ্ণুপুর রাস্তায় তৃণমূলের ব্লক সভাপতির গোষ্ঠীর নেতা-কর্মীদের উপরে হামলার অভিযোগ ওঠে দলের অন্য গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। জয়ন্ত মাল নামে এক তৃণমূল কর্মীকে বিষ্ণুপুর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বোমার আঘাতে বালসি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বুদ্ধদেব পাল-সহ তিন জন আহত হন। অন্য দিকে, বামিরা গ্রামে তৃণমূলের অঞ্চল কার্যালয়ে ভাঙচুরের পাল্টা অভিযোগ উঠেছে ব্লক সভাপতির গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সোমবার রাত থেকেই বামিরায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তৃণমূলের পার্টি অফিস পর্যন্ত পাহারা দিতে হচ্ছে পুলিশকে। দু’পক্ষই পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে। পুলিশ অবশ্য কাউকে ধরতে পারেনি।
২০০৯ সালের লোকসভা ভোটের পর থেকেই সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষে বারবার তেতে উঠেছে পাত্রসায়র। বিধানসভা ভোটের পর ছবিটা পুরোপুরি বদলে গিয়েছে। এলাকায় সিপিএম কার্যত নেই। এখন মারপিট চলছেই শাসকদলের নিজেদের মধ্যেই। পাত্রসায়র ব্লক তৃণমূল সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর একদা ঘনিষ্ঠ, ব্লকের নেতা নব পালের বিরোধ এখন তুঙ্গে। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটের পরে ব্লকে নববাবু প্রভাব বাড়াতে ফের ময়দানে নেমে পড়েছেন। অন্য দিকে, ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া স্নেহেশবাবুও। তারই জেরে ওই দুই নেতার অনুগামীরা এলাকা দখলের জন্য ফের মারপিটের রাস্তায় নেমেছেন বলে তৃণমূলের নিচুতলার কর্মীদের অভিযোগ।
তৃণমূল সূত্রের খবর, বালসি-১ পঞ্চায়েতটি বর্তমানে নববাবুর গোষ্ঠীর দখলে। এর আগে নানা অছিলায় এলাকায় দুই গোষ্ঠীর সমর্থকদের মধ্যে বচসা ও মারপিট হয়েছে। যার জেরে আতঙ্কে রয়েছেন এলাকার বাসিন্দারাও। বামিরা গ্রামেরই বাসিন্দা নব পালের অভিযোগ, “রবিবার রাতে আমার খুড়তুতো ভাই বাপি পালের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়ের অনুগামীরাই। বাপির স্ত্রী ও মেয়েকে টানাহেঁচড়া করা হয়।” সোমবার রাতে দলের অঞ্চল অফিসেও হামলা হয়। নববাবুর অভিযোগ, স্নেহেশবাবুর মদতপুষ্ট কিছু দুষ্কৃতী দরজা ভেঙে ঢুকে টিভি, চেয়ার ভেঙে তছনছ করে দেয়। মুখ্যমন্ত্রীর কাটআউট, পতাকা, ফেস্টুনও খুলে দেওয়া হয়। নববাবু বলেন, “এলাকায় উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ টাকার একাংশ ঠিকাদারদের কাছ থেকে ব্লক সভাপতি আত্মসাৎ করছেন। প্রতিবাদ করায় আমাকে হেনস্থা করা হচ্ছে। সেজন্য অনেকেই এখন ব্লক সভাপতির কাছ থেকে সরে গিয়েছেন।”
স্নেহেশবাবুর পাল্টা অভিযোগ, “বামিরা গ্রামে এখন আর নব পালের পায়ের তলায় মাটি নেই। তাই পাত্রসায়রের কিছু ভুইফোঁড়, তোলাবাজকে সঙ্গে নিয়ে এলাকায় নতুন করে অশান্তি বাধানোর চেষ্টা করছেন তিনি। তোলাবাজিকে সমর্থন করি না বলেই ওদের সংস্পর্শ ত্যাগ করেছি।” তাঁর আরও দাবি, পার্টি অফিসে হামলার সঙ্গে তাঁরা যুক্ত নন। নববাবুর গোষ্ঠীই ওই কাজ করে এখন তাঁদের নামে অপবাদ দিচ্ছে।
দলের দুই নেতার কাজিয়ায় ক্ষুব্ধ নিচুতলার কর্মীদের একটা বড় অংশ। তাঁদের বক্তব্য, “গোষ্ঠী রাজনীতি দলের ক্ষতি করছে। এলাকার মানুষকেও ক্ষুব্ধ করে তুলছে। অথচ বিরোধ মেটাতে উদাসীন উচ্চ নেতৃত্ব।” তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ বলেন, “বিষয়টি জানা নেই। দেখছি কী হয়েছে।”