ফের জমিহারাদের বিক্ষোভ রঘুনাথপুরের ডিভিসি প্রকল্পে। তবে এ বার জমিহারা কমিটি প্রকল্পের মূল গেটের সামনে বিক্ষোভে বসলেও শ্রমিকদের প্রকল্পে ঢুকতে বাধা দেয়নি। শুধু আটকানো হয়েেছে ডিভিসি-র কর্মী-অফিসারদের।
স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের দাবিতে সোমবার সকাল থেকে দিনভর রঘুনাথপুরে ডিভিসির নির্মীয়মাণ তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ-অবস্থান করেন স্থানীয় ‘ল্যান্ড লুজারস অ্যাসোসিয়শন’-এর শতাধিক সদস্য। সংগঠনের নেতা চিন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “বারবার বলা সত্ত্বেও ডিভিসি কর্তৃপক্ষ কাজে নিয়োগের ক্ষেত্রে জমিহারাদের পরিবর্তে বাইরে থেকে ঠিকা শ্রমিক নিয়োগ করছেন। তারই প্রতিবাদে বিক্ষোভ-অবস্থান করেছি।” এ দিন বিকেলে রঘুনাথপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট অজয় সেনগুপ্ত প্রকল্প এলাকায় গিয়ে জমিহারা কমিটির সঙ্গে আলোচনায় বসেন।
ডিভিসি-র এই প্রকল্পে মূল গেট আটকে বিক্ষোভ নতুন নয়। নানা ছোটখাট কারণেও বিক্ষোভ হয়েছে গেটের মুখ আটকে। জমিহারা কমিটির অভিযোগ, বর্তমানে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ ঠিকাদার সংস্থার মাধ্যমে প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণের (মেনটেন্যান্স) কাজে কর্মী নিয়োগ শুরু করেছেন। ঠিকার ভিত্তিতে হলেও এই কর্মীদের কাজের ধরণ স্থায়ী। চিন্ময়বাবুদের দাবি, ইতিমধ্যে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ স্যুইচ ইয়ার্ড, অফিসার্স ডর্মিটরি, গেস্টহাউস এবং মূল অফিসে জনা পঞ্চাশ ঠিকা কর্মী নিয়োগ করেছেন, যাঁদের কেউই জমিহারা নন। কমিটির অন্য নেতা দেবজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “স্যুইচ ইয়ার্ডে পাঁচ জন ঠিকা কর্মী নিয়োগের আগে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করেননি। যাঁদের নিয়োগ করেছেন, তাঁরা কেউই এই প্রকল্পের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য নন।
ডিভিসি কর্তৃপক্ষের যুক্তি, স্যুইচ ইয়ার্ডের কাজে দক্ষ কর্মী লাগে বলেই বাইরে থেকে কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। কমিটির পাল্টা দাবি, জমিহারা পরিবারগুলিতেও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ কর্মী রয়েছেন। জমিহারাদের নিযোগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্র তৈরির কাজ শুরু হওয়ার সময় থেকেই বিস্তর জলঘোলা হয়েছে। কমিটির অভিযোগ, প্রশাসন বা ডিভিসি মুখে জমিহারাদের কাজে নিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বললেও বাস্তবে তা কার্যকর করে না। চিন্ময়বাবুর অভিযোগ, “আগে একাধিক বার প্রশাসনের উপস্থিতিতে ডিভিসি-র সঙ্গে আলোচনায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, এই প্রকল্পে অদক্ষ শ্রমিক নিয়োগে জমিহারারাই অগ্রাধিকার পাবেন। এমনকী, এটাও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, দক্ষ শ্রমিক হিসাবে নিয়োগের ক্ষেত্রেও যোগ্যতা থাকলে জমিহারারা পরিবারের সদস্যদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বাস্তবে, প্রকল্প তৈরির সময়ে সমস্ত জমিহারা কাজ পাননি। এখন স্থায়ী ধরনের কাজেও জমিহারাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে।”
জমিহারা কমিটির অভিযোগ মানতে নারাজ ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। সংস্থার এক আধিকারিক বলেন, “যেহেতু জেলা প্রশাসন জমি অধিগ্রহণ করে ডিভিসি-কে দিয়েছে, তাই কারা প্রকৃত জমিহারা, তা স্থির করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে, জমিহারাদের তালিকা জেলা প্রশাসনের কাছে চাওয়া হয়েছে। প্রশাসন সেই তালিকা দিলে আমরা তার ভিত্তিতে জমিহারাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করব।” ওই আধিকারিক আরও জানিয়েছেন, প্রকল্পে এখন নির্মাণকাজই শেষ হয়নি। তাই এখনই ঠিকা অথচ স্থায়ী ভিত্তিক কাজে কর্মী নিয়োগ করা হচ্ছে না। ফলে, জমিহারা কমিটি ডিভিসি-র বিরুদ্ধে যে ধরনের অভিযোগ করছে, তা ঠিক নয়।”