পাত্রসায়রে অবশেষে নড়ল পুলিশ

ধর্ষণ, আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা

নানা টালবাহানার পরে অবশেষে বধূ মৃত্যুর ঘটনায় এফআইআর নিল পাত্রসায়র থানার পুলিশ। রবিবার রাতে মৃতার স্বামীর দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ওই বধূকে ধর্ষণ ও আত্মহত্যায় প্ররোচনা-সহ একাধিক ধারায় মামলা শুরু করেছে। যদিও ওই বধূকে ধর্ষণ ও আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ায় অভিযুক্ত শীর্ষেন্দু দত্ত এবং ধর্ষণের নালিশ চাপা দেওয়া ও আত্মহত্যায় প্ররোচনায় অভিযুক্ত তৃণমূলের ছাত্রনেতা সুব্রত ওরফে গোপে দত্ত এখনও অধরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাত্রসায়র শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০৭
Share:

নানা টালবাহানার পরে অবশেষে বধূ মৃত্যুর ঘটনায় এফআইআর নিল পাত্রসায়র থানার পুলিশ। রবিবার রাতে মৃতার স্বামীর দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ওই বধূকে ধর্ষণ ও আত্মহত্যায় প্ররোচনা-সহ একাধিক ধারায় মামলা শুরু করেছে। যদিও ওই বধূকে ধর্ষণ ও আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ায় অভিযুক্ত শীর্ষেন্দু দত্ত এবং ধর্ষণের নালিশ চাপা দেওয়া ও আত্মহত্যায় প্ররোচনায় অভিযুক্ত তৃণমূলের ছাত্রনেতা সুব্রত ওরফে গোপে দত্ত এখনও অধরা।

Advertisement

বাঁকুড়া জেলা পুলিশের এক আধিকারিক সোমবার বলেন, “মৃতার স্বামীর অভিযোগের ভিত্তিতে ধর্ষণ, আত্মহত্যায় প্ররোচনা এবং নির্যাতিতার পরিবারকে হুমকি দেওয়ার কয়েকটি ধারায় দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা শুরু হয়েছে। অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে।” পুলিশ সূত্রের খবর, ওই বধূর স্বামীর অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার রাতে যে এফআইআর হয়েছে তার নম্বর ১০৪। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬, ৩০৬, ৫০৬, ৫০৯, ৩৪ নম্বর ধারায় মামলা করা হয়েছে।

মামলা শুরু হওয়ায় খুশি মৃত বধূর পরিবার। মৃত বধূর স্বামী বলেন, “দেরিতে হলেও পুলিশ নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা শুরু করেছে। এ বার অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতার করুক, এটাই আমরা চাই।” তবে, এরই মধ্যে মৃত বধূর দেওরকে ফোনে খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে গোপের বিরুদ্ধে। ওই যুবক সোমবার বলেন, “যেহেতু গোপের নামে দাদা থানায় অভিযোগ করেছে, তাই গোপে আমাকে দেখে নেওয়ার আর খুনের হুমকি দিয়েছে। বিষয়টি আমরা পুলিশকে জানিয়েছি।”

Advertisement

যত দিন যাচ্ছে, এই ঘটনাকে ঘিরে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও প্রকট হচ্ছে পাত্রসায়রে। স্থানীয় রাজনীতিতে গোপে দত্ত পাত্রসায়র ব্লক তৃণমূল সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়ের বিরোধী শিবিরের লোক হিসাবেই পরিচিত। রবিবার স্নেহেশবাবু বলেছিলেন, “পারিবারিক বিষয়ে আমরা নাক গলানোর বিরোধী। তার পরেও কেউ সালিশিতে গিয়ে থাকলে, সেটা একান্তই তাঁর নিজস্ব ব্যাপার। এতে দলের কোন ভূমিকা নেই।” এর প্রতিক্রিয়ায় এ দিন স্নেহেশবাবুকে পাল্টা বিঁধেছেন তৃণমূলের ওই ছাত্রনেতা। গোপের অভিযোগ, “তৃণমূল নেতা স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়ের পায়ের তলা থেকে এখন মাটি সরে গিয়েছে। আমি তাঁর বিরোধী। তাই রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় স্নেহেশবাবু এবং তাঁর অনুগামী অরবিন্দ পাঁজা আমার বিরুদ্ধে ওই বধূর স্বামীকে দিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করিয়েছেন।” তাঁর আরও দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে ওই বধূকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা ঠিক নয়। পুলিশ প্রশাসনের উপরে তাঁর আস্থা রয়েছে।

ধর্ষণে অভিযুক্ত শীর্ষেন্দু এখনও পলাতক। গোপে কিন্তু এলাকাতেই রয়েছেন। সোমবার সকালে মোটরবাইকে করে সঙ্গীদের নিয়ে বাজারে গিয়েছিলেন, দিনভর বাড়িতে ও থানার পাশে পার্টি অফিসেও হাজির ছিলেন। মৃত বধূর পরিবার এবং এলাকার মানুষের ক্ষোভ, এত গুরুতর অভিযোগের পরেও পুলিশ গোপেকে ধরা তো দূরের কথা, জিজ্ঞাসাবাদটুকুও করেনি। গোপে নিজেও বলছেন, “আমি কোথাও পালাচ্ছি না। কারণ, আমি কোনও অন্যায় করিনি। পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করে গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখুক, এটাই আমি চাই।”

গোপে এই কথা বললেও স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের বড় অংশ কিন্তু মানছেন, ওই ঘটনায় দলের ভাবমূর্তিতে কালি ছিটেছে। এবং গোপে নিজেও কিছুটা বেকায়দায় পড়েছেন। স্নেহেশবাবু বলেন, “মৃত বধূর পরিবার আমাদের দলের সক্রিয় সমর্থক। তবু, রাজনীতির রং লাগবে বলে এখনও পর্যন্ত ওঁদের বাড়িতে আমি যাইনি। গোপে ব্যক্তিগত স্বার্থে ওই বাড়িতে সালিশিতে গিয়েছিল। এর সঙ্গে দলের কোন সম্পর্ক নেই। মৃত বধূর পরিবার নিজেরাই অভিযোগ করেছেন। এখন নিজের পিঠ বাঁচানোর জন্য গোপে অনেক কথা বলবে।” পাত্রসায়র ব্লক তৃণমূল নেতা অরবিন্দ পাঁজার দাবি, “গোপে এলাকায় ‘দাদা’ হওয়ার জন্য ধর্ষণে অভিযুক্ত থেকে শুরু করে জমির দালাল, সবার পাশেই দাঁড়াতে চাইছেন।”

তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই পাত্রসায়র ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা সন্ত্রস্ত। আগে সিপিএমের জমানাতেও ছোটখাটো ঘটনার সালিশি হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেও ভুরিভুরি অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, পালাবদলের পরে তৃণমূলের রাজত্বে সেই পরিস্থিতির আদৌ বদল হয়নি। বিধানসভা ভোটের পর থেকেই সিপিএম কর্মীদের মারধর, জরিমানা আদায়ের বিস্তর অভিযোগ উঠেছে বর্তমান শাসকদলের বিরুদ্ধে। দলের দুই গোষ্ঠীর ঝামেলা দেখতে দেখতেও তাঁরা বীতশ্রদ্ধ। কিন্তু, এক বধূকে ধর্ষণের অভিযোগ সালিশি করে চাপা দেওয়ার ঘটনা প্রকাশ্যে আসায় এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সাম্প্রতিক অতীতে এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেনি পাত্রসায়রে। প্রকাশ্যে না হলেও গোপনে বা নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতায় ঘটনার নিন্দা করছেন এলাকার শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement