ধান কেনার শিবির স্থায়ী করার আর্জি চাষিদের

পুরুলিয়া জেলায় রাজ্য সরকারের উদ্যোগে শিবির করে ধান কেনা শুরু হল সোমবার থেকে। এ দিন বান্দোয়ানের কুচিয়া গ্রামের শিবিরে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ধান কেনার আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। শিবিরে চার জন চাষির হাতে তিনি ধান কেনা বাবদ চেক তুলে দেন। মন্ত্রী বলেন, “শিবির থেকে যাতে নিয়মিত ধান কেনা হয়, সে বিষয়টি দফতরের আধিকারিক ছাড়াও স্থানীয় বিডিও-কে দেখার নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছি।”

Advertisement

সমীর দত্ত

বান্দোয়ান শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:৪১
Share:

ধান কেনার শিবিরে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। নিজস্ব চিত্র

পুরুলিয়া জেলায় রাজ্য সরকারের উদ্যোগে শিবির করে ধান কেনা শুরু হল সোমবার থেকে। এ দিন বান্দোয়ানের কুচিয়া গ্রামের শিবিরে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ধান কেনার আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন। শিবিরে চার জন চাষির হাতে তিনি ধান কেনা বাবদ চেক তুলে দেন। মন্ত্রী বলেন, “শিবির থেকে যাতে নিয়মিত ধান কেনা হয়, সে বিষয়টি দফতরের আধিকারিক ছাড়াও স্থানীয় বিডিও-কে দেখার নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছি।”

Advertisement

একই সঙ্গে মন্ত্রীর আশ্বাস, যদি চাষি ধান বিক্রি করতে এসে শিবির বন্ধ দেখে ফিরে যান, তিনি তখনই টোল-ফ্রি নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানাতে পারেন। যদিও স্থানীয় চাষি দুলাল সিং, মহেন্দ্র সিংদের অভিজ্ঞতা, “ফি বছর ঘটা করে সরকারি উদ্যোগে শিবির করা হয় বটে। তবে, দু-চার দিন পরেই ধান কেনার লোক থাকে না। শিবিরও পাততাড়ি গোটায়।” তাঁদের বক্তব্য, ধান কেনার শিবির স্থায়ী হলে চাষিদের ধান বিক্রি করার ক্ষেত্রে সুবিধা হয়। কুচিয়া গ্রামের বাসিন্দা আর এক চাষি অনিল মাহাতো বলেন, “গত বছর দুয়ারসিনিতে ধান কেনার শিবির হয়েছিল। কয়েক দিন পরে ধান নিয়ে গিয়ে দেখি শিবির বন্ধ। কাকে জানাব বুঝতে না পেরে ধান নিয়ে ফিরে যেতে হয়েছিল। ওই ধান পরে বান্দোয়ান বাজারে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিলাম।” চাষিরা ধানের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না, এই অভিযোগে সম্প্রতি হুড়ার লালপুরে এসইউসিআই-এর নেতৃত্বে পথ অবরোধ হয়েছিল।

চাষিদের অভিযোগের কথা মাথায় রেখে জ্যোতিপ্রিয়বাবু জানান, রাজ্য সরকার ধানের দাম বাঁধতে পারে না। কেন্দ্রীয় সরকার এই দাম বেঁধে দেয়। চলতি বছর ধানের সরকারি দর কুইন্টাল পিছু ১৩৬০ টাকা রাখা হয়েছে। মন্ত্রীর দাবি, “আমরা বিভিন্ন সময় কেন্দ্রীয় সরকারকে এই দাম বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছি। অন্তত ১৫০০ টাকা প্রতি কুইন্টাল করার আবেদন জানিয়েছিলাম। আমাদের আবেদন পূরণ হয়নি।” এরই পাশাপাশি তিনি জানান, ধান কেনার শিবির বন্ধ থাকলে সরাসরি বিডিও-র কাছে অভিযোগ জানাতে পারবেন চাষিরা।

Advertisement

কুচিয়া গ্রামে বান্দোয়ান শবর ল্যাম্পস ধান কেনার দায়িত্ব পায়। জেলা খাদ্য দফতর সূত্রে খবর, চলতি মরসুমে রাজ্য সরকার ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রেখেছে ২২ লক্ষ মেট্রিক টন। ধান সংগ্রহ মসৃণ করতে পুরুলিয়া জেলায় বন্ধ থাকা ৪টি চালকল খোলার জন্য পদক্ষেপও করা হবে।

এ দিন জঙ্গলমহলের বান্দোয়ান ও বোরো থানা এলাকায় শিবিরে ধান কেনার সূচনা করার পরে মন্ত্রী পুঞ্চাতেও একটি শিবিরে হাজির হন। বোরো থানার শুশুনিয়া আদিবাসী ল্যাম্পসের উদ্যোগে ধান কেনার শিবিরে মন্ত্রীকে কাছে পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ কৃষক ভাতা না মেলার অভিযোগ জানান। শুশুনিয়ার বাসিন্দা পবিত্র হাঁসদা বলেন, “আমার বাবা কৃষক ভাতা পেয়ে আসছিলেন প্রায় আট মাস। ওই ভাতা এখন বন্ধ রয়েছে।” অভিযোগ পেয়ে মন্ত্রী সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকদের এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। বোরো থানার আঁকরো গ্রামের দুই চাষি অবনী দে ও সুশারি কর বলেন, “ধান কেনার সরকারি শিবির থাকলে আমাদের মতো ছোট চাষিদের সুবিধা হয়। নইলে স্থানীয় আড়তদারকে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হই।” এ দিন জেলার তিনটি শিবিরেই মন্ত্রী ধানের অভাবি বিক্রি বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন প্রশাসনকে। মন্ত্রীর আশ্বাস, চাষিদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে শিবির চালু থাকবে। যদিও বান্দোয়ান শবর ল্যাম্পসের এক কর্তার কথায়, “ধান কেনার জন্য নিয়মিত টাকার জোগান থাকা চাই। টাকার অভাবের জন্যই ধান কেনা বন্ধ রাখতে হয়।”

ধান কেনার পাশাপাশি জেলার গণবণ্টন ব্যবস্থা নিয়েও কিছু নির্দেশ দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী। জেলায় বিভিন্ন রেশন দোকানে নিম্নমানের চাল ও গম সরবরাহের অভিযোগ প্রসঙ্গে পাশে বসা জেলা খাদ্য নিয়ামককে মন্ত্রীর নির্দেশ, প্রয়োজনে ওই সব অসাধু ব্যবসায়ী ও ডিলারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করুক প্রশাসন। এ দিন বিকেলে মন্ত্রী জেলা ছেড়ে বাঁকুড়ায় রওনা দেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement