দলের পুরপ্রধানের বিরুদ্ধেই সরব উপ-পুরপ্রধান

মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরে আসছেন বুধবার। তার আগেই পুরসভার কাজকর্ম নিয়ে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে সরব হলেন পুরুলিয়ার উপপুরপ্রধান। পুরপ্রধানের নাম না করে তাঁর কাজকর্মের কিছু নমুনা তুলে ধরেছেন তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার উপপুরপ্রধান সামিমদাদ খান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৪ ০০:৩৫
Share:

মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরে আসছেন বুধবার। তার আগেই পুরসভার কাজকর্ম নিয়ে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে সরব হলেন পুরুলিয়ার উপপুরপ্রধান। পুরপ্রধানের নাম না করে তাঁর কাজকর্মের কিছু নমুনা তুলে ধরেছেন তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার উপপুরপ্রধান সামিমদাদ খান। শুধু তাই নয়, ওই সমস্ত কাজকর্ম কি স্বৈরাচারের নমুনা নয়? সাইটে এমন সব প্রশ্নও তুলে ধরেছেন তিনি।

Advertisement

প্রসঙ্গত, পুরসভার নানা কাজকর্ম নিয়ে বিরোধী দল কংগ্রেস তো বটেই, সাহেব বাঁধের কচুরিপানা পরিষ্কার করা নিয়ে পুরসভার ভূমিকা নিয়ে কিছুদিন আগে সরব হয়েছিলেন পুরুলিয়ারই তৃণমূল বিধায়ক কেপি সিংহ দেও। এ বার সরব হলেন উপপুরপ্রধান। স্বাভাবিক ভাবেই মুখ্যমন্ত্রীর সফরের আগে অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল।

সোশ্যাল সাইটে ফেসবুকে একাধিক পোস্টে উপপুরপ্রধান লিখেছেন, ‘পুরুলিয়া পুরসভা ২০১০ সালে গঠন হয়। সব ঠিকঠাকই চলছিল। চেয়ারম্যানইন কাউন্সিলের সদস্যদের নিয়ে নিয়মিত বৈঠক, কাজের ব্যাপারে মাতানৈক্য থাকলে তা নিয়ে আলোচনা হত। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের জন্য তহবিল সিজ হয়ে যায়। নির্বাচনের পরে নতুন সরকার গঠন হয়। আর এ দিকে সব কিছুরই পরিবর্তন হয়ে যায়। দলীয় কাউন্সিলরদের সাপ্তাহিক বৈঠক বন্ধ, বোর্ড মিটিং মাসে হওয়ার বদলে মাঝে মাঝে, আর তহবিল এক জায়গাতেই কুক্ষিগত। বিধানসভা ভোটের পর থেকেই বোর্ডের ২১ জন কাউন্সিলরের কথা বাদ থাক। চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিলের বেশিরভাগ সদস্য পুরসভার তহবিল সম্পর্কে অন্ধকারে।’

Advertisement

উপপুরপ্রধান কারও নাম না করে বলেন, “বিগত তিন বছরে প্রচুর গভর্নমেন্ট অর্ডার (জিও) চুরি হয়ে গিয়েছে। এখনও বোর্ডের বৈঠকে সে সব বিষয় উপস্থাপিত হয়নি। কিন্তু নিয়ম আছে, প্রত্যেকটি জিও বোর্ডের অনুমোদন সাপেক্ষে এবং সিদ্ধান্ত মতো খরচ করে ইউটিলাইজেশন পাঠানোর পরে তহবিলে আবার অর্থ আসে। এখানে অনেক জিও বোর্ড সদস্যরা জানেনই না। শুনছি খরচ হয়ে ইউটিলাইজেশন চলে গিয়েছে। কিন্তু জিও বোর্ড মিটিংয়ে এল না। কোন কাজ কোথায় পাস হল তা কিছুই জানানো হয়নি।”

আবার তিনি বলেছেন, “শহরের হাটে বা কিছু বাজারে ব্যবসা যাঁরা করেন, তাঁদের কাছ থেকে যে অর্থ সংগৃহীত হয় তা পুরসভার পক্ষে কে সংগ্রহ করেন তা অনেকেরই জানা নেই।” বামেদের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেছেন, “বাম নেতাদের কেমন হাল হয়েছে সকলের জানা।” ফেসবুকে এই সব মন্তব্যের সম্পর্কে সামিমদাদ খানকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “আমি নিজের সাইটে কিছু বক্তব্য উল্লেখ করেছি। কেন না কাজ করতে করতে আমার মনে হয়েছে, পুরসভায় গণতন্ত্র নেই। সব কিছু মানুষের জানার অধিকার রয়েছে। শহরে রাস্তাঘাট নিয়ে শহরবাসীর ক্ষোভ বাড়ছে। অথচ গত জানুয়ারিতে রাস্তা সংস্কারের জন্য কমবেশি সওয়া এক কোটি টাকা এসেছে। সেটা আমাদের পর্যন্ত জানানো হয়নি। আমি উন্নয়ন বিভাগ দেখতাম। আমি পর্যন্ত অন্ধকারে।”

তাঁর সংযোজন, “এ ভাবে কেউ যদি নিষ্ক্রিয় থাকেন তখন তো কোথাও সরব হতেই হয়।”

আপনার অভিযোগের তির কার দিকে? উপপুরপ্রধানের জবাব, “যিনি পুরসভা চালান।” এই সব বিষয় জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো ও বিধায়ক কে পি সিংহ দেওকে মৌখিক ভাবে জানিয়েছেন তিনি। পুরসভার বিরোধী দলনেতা বিভাস দাস বলেন, “আমরা তো এ সব নিয়ে অভিযোগ করে আসছি। এখন সাইটে আরও কিছু বেশি বিষয় আমরা জানতে পারলাম। পুরসভার কাজকর্ম নিয়ে তো অভিযোগ উঠেছে। তদন্ত হওয়া দরকার।”

যাঁর বিরুদ্ধে এত সব অভিযোগ, সেই পুরুলিয়ার পুরসভার চেয়ারম্যান তারকেশ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করব না। যা বলার দলের কাছেই জানাব।” জেলা তৃণমূলের সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “আমি সবে বিষয়টি শুনেছি। ঠিক কী হয়েছে, তা নিয়ে পুরপ্রধান ও উপপুরপ্রধানের সঙ্গে কথা বলব।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement