নতুন নর্দমার ধারে বেআইনি দখলদার। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
জেলা সদর শহরে অবৈধ দখলদারির দাপট রুখতে শেষমেশ পদক্ষেপ করল প্রশাসন। হাত বাড়াল রাজনৈতিক দলগুলিও। প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের উপস্থিতিতে সোমবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনিক ভবনে এ নিয়ে একটি সর্বদলীয় বৈঠক হয়েছে। যেখানে বেআইনি দখলদারি সরিয়ে ফেলে এই শহরকে ফের সুন্দর করে গড়ে তুলতে প্রত্যেকেই সহমত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) শ্যামল মণ্ডল, মহকুমাশাসক (সদর) অরুন্ধতী ভৌমিক, পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখাপাধ্যায়, পূর্ত ও পরিবহণ দফতরের আধিকারিকেরা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং বাসমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক-সহ সব পক্ষের উপস্থিতিতে বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার মহকুমাশাসক (সদর) বলেন, “বৈঠকে দু’একটি রাজনৈতিক দল ছাড়া সকলেই অবৈধ দখলদারি মুক্ত করতে প্রশাসনের পাশে দাঁড়ানোর সদিচ্ছা প্রকাশ করেছেন। বৈঠকে ঠিক হয়েছে, বর্তমানে প্রশাসনিক ভবন থেকে যে নিকাশি নালা তৈরি হচ্ছে, সেখানে আর নতুন করে কোনও হকারকেই বসতে দেওয়া হবে না। তা না হলে ফের একই দুর্দশা হবে। দুই, রাস্তা জুড়ে ভারি গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেওয়া হবে না। এ ছাড়া সিউড়ি বাসস্ট্যান্ড ও শহরের অন্যান্য রাস্থায় যে সব দখলদার রয়েছেন, তাঁদেরও সরে যাওয়ার জন্য নোটিস পাঠানো হবে।”
এমনিতেই সিউড়ি শহরের বিভিন্ন রাস্তা বা নিকাশি নালা দখল করে অবৈধ ভাবে একটার পর একটা অস্থায়ী দোকান, হোটেল, এমনকী রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ও গড়ে উঠেছে। কোথাও আবার রাজপথের একটা বড় অংশ দখল করে ছোট-বড় গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা। সিউড়ি শহরের ক্রমবর্ধমান অবৈধ দখলদারির জন্যই অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল নগরজীবন। সঙ্কীর্ণ রাস্তায় তীব্র যানযট এবং নিকাশি নালার অভাবে বৃষ্টি হলেই জল থৈথৈ পথ--- এই দৃশ্য যেন অবধারিত ভাবে জড়িয়ে গিয়েছে জেলা সদরের সঙ্গে। অবৈধ দখলদারির এই সমস্যার নেপথ্যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং প্রশাসনিক নজরদারির অভাবকেই দায়ী করেন একটা বড় অংশের শহরবাসী। সেই বদনাম ঘুচিয়ে অবৈধ দখল মুক্ত করতেই এ বার উদ্যোগ নিল প্রশাসন।
প্রসঙ্গত, সিউড়ি শহরের বিভিন্ন রাস্তার পাশাপাশি শহরের মূল রাস্তার পাশে থাকা নিকাশি নালার উপরেই অবৈধ ভাবে একটার পর একটা দোকান নির্মিত হয়েছে। পুরকর্তৃপক্ষ ওই সব অবৈধ নির্মাণ ভাঙার সাহস না দেখানোয় বহুবছর ওই নালা সাফাই করা সম্ভব হয়নি। যার ফলে বৃষ্টি হলেই নিকাশি অব্যবস্থায় রাস্তায় জল উঠে আসছিল। সে কারণেই ওই নিকাশি সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেয় পুরসভা। ১৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে প্রশাসনিক ভবন থেকে সিউড়ি বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ৬৬৭ মিটার দৈর্ঘ্যের নিকাশি নালা (সংস্কার ও কিছু অংশ নতুন করে তৈরি) তৈরির কাজ শুরু করেছিল। নিকাশি নালা তৈরির লক্ষ্যেই পুরকর্তৃপক্ষ অবৈধ ভাবে নিকাশি নালার উপর বসে থাকা হকারদের হঠিয়ে দিয়েছিল। নালা তৈরি হতে না হতেই ওই অবৈধ দখলদারিরা ফের নিজেদের অবস্থানে ফিরে আসতে চাইলেই রুখে দাঁড়ায় প্রশাসন। প্রশাসন সাফ জানিয়ে দেয়, কোনও ভাবেই আর নিকাশি নালার উপরে বসা যাবে না। তাতেই হকারদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। সোমবারই এ ব্যাপারে পুরপ্রধানকে এসইউসি একটি স্মারকলিপিও জমা দিয়েছিল। তার পরেই প্রশাসন সর্বদলীয় বৈঠক ডাকে। সিউড়ির পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় বলছেন, “প্রশাসন যখন উদ্যোগী হয়েছে, তখন সকলে মিলে চেষ্টা করতেই হবে।”