রাস্তা সংস্কারে দুর্নীতি হয়েছে সন্দেহ করে তথ্য জানার অধিকার আইনে কাজ সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন এক যুবক। কিন্তু তাঁকে তথ্য দেওয়ার আগেই যাঁর সেই তথ্য দেওয়ার দায়িত্ব পঞ্চায়েতের সেই নির্বাহী সহায়ককে মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এরপরে পঞ্চায়েত থেকে ওই তথ্য পাওয়ার সম্ভাবনা নেই অভিযোগ তুলে এ বার বিডিও মহকুমাশাসকের কাছে ওই তথ্য চেয়ে নতুন করে আবেদন জানালেন সেই যুবক।
রাইপুর ব্লকের দুন্দার পঞ্চায়েত এলাকার যুবক সৃষ্টিধর মাহাতো-র অভিযোগ, ১০০ দিন প্রকল্পে স্থানীয় চিরুগোড়া থেকে কালাপাথর পর্যন্ত রাস্তা মেরামতির কাজ নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে বলে সন্দেহ। তাই ওই কাজের তথ্য চেয়ে এক মাস আগে তিনি আবেদন করেছিলেন। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন সেই তথ্য দিতে গড়িমসি করেছে। তাঁর বলেন, “গত বুধবার আমাকে ওই তথ্য দেওয়ার আগেই দুন্দার পঞ্চায়েতের নির্বাহী সহায়ককে পঞ্চায়েত কার্যালয়ের ভিতরে ও বাইরে মারধর করা হয়। তারপর নির্বাহী সহায়কের কাছ থেকে আমি আর তথ্য পাইনি। ওই তথ্য পাওয়ার জন্য আমি পুনরায় বিডিও এবং এসডিও-র কাছে আবেদন জানিয়েছি।”
স্থানীয় সূত্রের খবর, তৃণমূল পরিচালিত দুন্দার পঞ্চায়েতের দেখাশোনা করে দলের রাইপুর ব্লক সভাপতি জগবন্ধু মাহাতোর অনুগামীরা। ১০০ দিন প্রকল্পে ওই রাস্তা মেরামতির কাজ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে বিরোধ তৈরি হয়েছে। কাজ না করে টাকা লোপাট করা হয়েছে বলে জগবন্ধুবাবুর বিরোধী শিবিরের অভিযোগ। এরই মধ্যে ওই কাজের ব্যাপারে তথ্য জানতে চেয়ে সৃষ্টিধর পঞ্চায়েত পরিচালকদের বিষনজরে পড়েন বলে অভিযোগ। বুধবার দুপুরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পঞ্চায়েতের নির্বাহী সহায়ক বিপ্রদাস মণ্ডলের সৃষ্টিধরকে ওই তথ্য দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই পঞ্চায়েত কার্যালয়ের ভিতরে এবং বাইরে বিপ্রদাসবাবুকে কলার ধরে কিল চড় ঘুষি মারার অভিযোগ ওঠে। প্রহৃত ওই কর্মী সে দিন সন্ধ্যায় পুলিশের কাছে স্থানীয় দুই তৃণমূল কর্মী ক্ষুদিরাম পাত্র ও সুব্রত পাত্রের বিরুদ্ধে মারধরের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এলাকায় তাঁরা জগবন্ধু মাহাতোর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তারপর তিনদিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ অভিযুক্তদের এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি। এ দিনও চেষ্টা করে দুই অভিযুক্তের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তবে জগবন্ধুবাবু দাবি করেছেন, পঞ্চায়েতের কাজে দুর্নীতি হয়নি। মারধরের অভিযোগও তিনি মানতে চাননি।
মহকুমাশাসক (খাতড়া) শুভেন্দু বসু শুক্রবার বলেন, “বিডিওকে ওই তথ্য দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” রাইপুরের বিডিও দীপঙ্কর দাস এ দিন বলেন, “ওই তথ্য দুন্দার পঞ্চায়েত থেকেই দেওয়া হবে। এ জন্য ওই পঞ্চায়েতের আধিকারিককে বলা হয়েছে। শীঘ্রই ওই ব্যক্তি তথ্য পেয়ে যাবেন।” যদিও বিপ্রদাসবাবু এ দিন এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। দুন্দার পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের শিখা মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, দুন্দার পঞ্চায়েতের নির্বাহী সহায়ক অভিযোগ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধেও পাল্টা অভিযোগ দায়ের হয়েছে। দু’টি অভিযোগেরই তদন্ত শুরু হয়েছে।