‘রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয় প্রকল্পে’ বরাদ্দ অর্থের হিসেব না দেওয়ায় প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ও এক প্রাক্তন শিক্ষকের নামে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করলেন পুরুলিয়া শহরের শতাব্দী প্রাচীন স্কুল ‘মানভূম ভিক্টোরিয়া ইন্সস্টিটিউশন’ কর্তৃপক্ষ।
স্কুল সূত্রে জানানো হয়েছে, অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের নাম সুনির্মল কর ও স্বপনকুমার লাহিড়ি। সুনির্মলবাবু প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন। চলতি জুন মাসে তিনি অবসর নিয়েছেন। আর স্বপনবাবু ২০০৯ সালের জুন মাসে অবসর নেন।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের এই স্কুলে ১৯৯৫ সাল থেকে রাজ্য সরকারের রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয় প্রকল্পটি চালু রয়েছে। মূলত স্কুলছুট পড়ুয়া যারা মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে পারেনি তার রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয়ের মাধ্যমে পড়াশোনা করতে পারে। প্রতি রবিবার বিদ্যালয়ে এই প্রকল্পের ক্লাস হয়। সাধারণত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বা টিচার ইনচার্জই সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে চালু থাকা রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয়ের কো-অর্ডিনেটর হন। সেই মতো এই বিদ্যালয়েও এই প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুনির্মলবাবু। মানভূম ভিক্টোরিয়া ইন্সস্টিটিউশনের পরিচালন সমিতির সম্পাদক উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “গত জুনে আমাদের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুনির্মল কর অবসর গ্রহণ করেছেন। অবসরকালীন ভাতা ইত্যাদি পাওয়ার জন্য বিদ্যালয় থেকে উনি নন লায়েবিলিটি সার্টিফিকেট চান। এই সার্টিফিকেট দেওয়ার আগে যথারীতি উনি বিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ অর্থ যা তাঁর দায়িত্বে ছিল তা ঠিক মতো খরচ করেছেন কি না খতিয়ে দেখতে গিয়েই বিষয়টি সামনে আসে। দেখা যায়, রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয় প্রকল্প খাতে বরাদ্দ বেশ কিছু টাকার কোন হিসেব নেই।”
উত্তমবাবুর দাবি, “তখন আমরা তাঁকে বলি, আপনি নতুন ভারপ্রাপ্ত শিক্ষককে এই প্রকল্পের হিসেব বুঝিয়ে দিয়ে যান। এটা আপনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।” উল্লেখ্য গত জুন মাসে অবসর নিলেও সুনির্মলবাবু তারপরে আরও কিছুদিন এই প্রকল্পের দায়িত্বে ছিলেন। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক রাজেশ দরিপা বলেন, “আমি তাঁকে বলি, আপনি আমাকে প্রকল্পের হিসেব পুরোপুরি বুঝিয়ে দিয়ে যান। কেন না বেশ কিছু টাকার হিসেবে গরমিল রয়েছে।” উত্তমবাবু বলেন, “এরপর আমরা তাঁকে লিখিত ভাবে হিসেব বুঝিয়ে দেবার জন্য বলি। কিন্তু তাতেও উনি সাড়া দেননি। পরে গত অগস্ট মাসে আর একটি চিঠি দিলে সুনির্মলবাবু কেবলমাত্র ২০১৩ সালে উনি ব্যাঙ্কে ৯৮,৩১০ টাকা জমা করেছেন সেই হিসেব দেন। কিন্তু উনি যে সময় দায়িত্বে ছিলেন সেই সময়কালের (০১/০৭/২০০৯ থেকে ০২/০৫/২০১৩) কোন টাকার হিসেব দিতে পারেননি।”
উত্তমবাবুর দাবি, “বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গিয়ে ধরা পড়ে সুনির্মলবাবু ১৪,৯০,৯৪৩ টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তুললেও এই টাকার কোনও হিসেব দিতে পারেননি। আমরা এরপরেও তাঁকে লিখিত ভাবে জানাই যে আপনি দ্রুত এই টাকার হিসেব দিন। না হলে আমরা আপনার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব। কিন্তু তার পরেও উনি একই ভাবে নিরুত্তর থেকেছেন। তখন বাধ্য হয়েই পরিচালন সমিতির সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তাঁর সঙ্গে যৌথভাবে যেহেতু বিদ্যালয়েরই আর এক প্রাক্তন শিক্ষক স্বপনকুমার লাহিড়ি এই প্রকল্পে ব্যাঙ্কে আমানতে লেনদেনের কাজ করতেন, তাই এই অভিযোগে তাঁকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। পরিচালন সমিতির সিদ্ধান্ত মতো তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।” ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক রাজেশ দরিপা বলেন, “বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক)কে ও প্রকল্পের রাজ্য সভাপতিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
অভিযুক্ত প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক সুনির্মলবাবু অবশ্য বলেন, “আমার বিরুদ্ধে অহেতুক এই অভিযোগ তোলা হচ্ছে। শুধু আমি তো একা নই, অনেকে মিলেই তো এই বিভাগটি দেখভাল করতেন। তবে পুলিশে অভিযোগের বিষয়ে আমি কোনও কিছুই জানি না।” আর এক প্রাক্তন শিক্ষক স্বপনবাবুর দাবি, “আমি তো বিদ্যালয় থেকে অনেক দিন আগেই অবসর নিয়েছি। এখন আমার নাম কীভাবে আসছে বুঝতে পারছি না। পুলিশে অভিযোগের বিষয়টিও জানা নেই।” অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুরুলিয়া সদর থানার পুলিশ।