জয়পুরে শিশু শ্রমিক পাচার কাণ্ডে ধৃত ব্যক্তি পুলিশের কাছে দাবি করলেন তিনি ওই ঘটনায় যুক্ত নয়। তিনি শুধু পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুরের এক যুবকের সঙ্গে ওই কিশোরদের জোগাড় করে দেওয়ার জন্য সুনীল শবরের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন মাত্র।
জেলা পুলিশের একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, ওই ঘটনায় ধৃত কেন্দা থানার সর্দারডি গ্রামের বাসিন্দা ইউসুফ মাল জেরায় তাদের কাছে দাবি করেছে, তাঁর শ্বশুরবাড়ি কেশপুর এলাকায়। সেখানকার এক যুবক তার জরির কারখানায় কাজ দেওয়ার জন্য মাস ছ’য়েক আগে কিছু ছেলেকে চেয়েছিলেন। পরে ইউসুফের সঙ্গে ওলগাড়া গ্রামের সুনীল শবরের পরিচয় হয়। তখন তিনি সুনীলের সঙ্গে কেশপুরের ওই যুবকের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর কতজন শ্রমিক, কোথায় গিয়েছে সে ব্যাপারে ইউসুফ কিছুই জানেন না বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছেন।
মানবাজারের কাশিডি ও বোরো থানা এলাকার ওলগাড়া গ্রাম থেকে পাঁচ মাস আগে ১৩ জনকে শ্রমিক হিসাবে রাজস্থানের জয়পুরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এদের গড় বয়স ১৪ বছর। এরা সকলেই শবর জনজাতি ভুক্ত। সম্প্রতি কয়েকজন অভিভাবক মানবাজার ও বোরো থানায় অভিযোগ দায়ের করেন, তাদের ছেলেদের আটকে রেখে একটি জরির কারখানায় কম পারিশ্রমিকে দীর্ঘক্ষণ ধরে কাজ করানো হচ্ছে। সম্প্রতি ওই কিশোরদের মধ্যে নিতাই শবর নামে একজন ট্রেনে আসার পথে রাস্তাতেই মারা যায়।
পুরুলিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য বুধবার বলেন, “ওই কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকরা চাইলে টেলিফোনে তারা ওই ছেলেগুলির সঙ্গে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেবে বলে জানিয়েছে। যাঁরা তাঁদের ছেলেদের ফিরিয়ে আনতে চান, তাদের ফিরিয়ে আনারও ব্যবস্থা করা হবে।”
যদিও এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকায় পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয় বিভিন্ন মহল। সংশয়ে পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া শবর কল্যাণ সমিতিও। ওই সমিতির অন্যতম কর্তা প্রশান্ত রক্ষিত বলেন, “নিতাইয়ের পরিণতি দেখে অভিভাবকরা তাদের ছেলেদের ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন। তাদের কলকাতায় গেঞ্জি কারখানায় কাজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ভিন্ রাজ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এটা পাচার ছাড়া আর কী? এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, শিশু শ্রমিক আইন লঙ্ঘন, গাফিলতির ফলে এক শিশু শ্রমিকের মৃত্যুর দায়, ন্যূনতম মজুরি আইন লঙ্ঘন করা প্রভৃতির অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ কী ব্যবস্থা নিচ্ছে সমিতি লক্ষ রাখছে।” প্রশাসনের কয়েকজন আধিকারিকদেরও প্রশ্ন, অভিযোগ অবশ্যই গুরুতর। তাই পুলিশের সময় নষ্ট না করে এখনই কড়া পদক্ষেপ করা উচিত। না হলে অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে অভিযুক্তরা পালিয়ে যাওয়ার সময় পেয়ে যাবে। যদিও পুলিশের দাবি, গুরুত্ব দিয়েই খোঁজখবর শুরু করা হয়েছে।