জেলা অফিসে পোস্টার পড়েছিল আগেই। এ বার দলের বাঁকুড়া জেলা কমিটির বৈঠকেও দলীয় নেতাদের একাংশের তোপের মুখে পড়লেন সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব। প্রশ্ন উঠল, লোকসভা ভোটের প্রচারে শাসক দলকে ঝাঁঝালো আক্রমণে কেন ব্যর্থতা ছিল? কেনই বা সন্ত্রস্ত এলাকায় গিয়ে দলের সাধারণ কর্মীদের পাশে থাকার বার্তা দিলেন না দলের নেতারা?
বস্তুত, লোকসভা ভোটে ভরাডুবির পরেই সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা অফিসে পোস্টার সাঁটিয়ে নেতাদের ‘গাড়ি ছেড়ে বাসে’ এবং ‘এসি ঘর ছেড়ে মানুষের মধ্যে’ যাওয়ার বার্তা দিয়েছিলেন দলীয় কর্মীদের একাংশ। এ বার ভোট-উত্তর দলের প্রথম জেলা কমিটির বৈঠকেও নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠল। আর এ সবই ঘটল সোমবার ওই বৈঠকে উপস্থিত সূর্যকান্ত মিশ্রের সামনে। ভোটে পরাজয়ের কারণ খুঁজে বের করাই ছিল এই বৈঠকের মূল লক্ষ্য। যার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে দলের মাথাদেরই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন জেলা কমিটির একাধিক সদস্য। মূলত যে-সব প্রশ্ন উঠেছে, সেগুলি হল:—
১) প্রচারে সরকারের নেতিবাচক দিকগুলিকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে না পারা,
২) আন্দোলন বিমুখতা,
৩) জেলা শীর্ষ নেতাদের পার্টি অফিস ছেড়ে না বের হওয়া,
৪) ভোট প্রচারের বক্তব্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণে কম তীব্রতা,
৫) সন্ত্রাস কবলিত এলাকায় গিয়ে দলীয় কর্মীদের সাহস জোগানোয় ব্যর্থতা।
কিন্তু, লোকসভা ভোটের সময় জেলার যে ঘটনাকে ঘিরে সারা রাজ্য তোলপাড় হল, সেই ছাপ্পা ভোটে অভিযুক্ত সোনামুখীর তৃণমূল বিধায়ক দীপালি সাহা সম্পর্কে সোমবারের বৈঠকে আশ্চর্য রকম ভাবে নীরব ছিলেন জেলা কমিটির সদস্যরা। দীপালিদেবীকে ধরার দাবিতে বিজেপি পথে নামলেও এখনও পর্যন্ত কোনও আন্দোলন হয়নি সিপিএমের তরফে। জেলা কমিটির এক সদস্যের কথায়, “শাসক দলের বিধায়ক ছাপ্পা ভোট করালেন। আধিকারিকেরা তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগও করলেন। অথচ এত বড় ঘটনা নিয়ে আমাদের দল চুপ থাকল! এতে মানুষের কাছে ভুল বার্তা গিয়েছে।” বৈঠকে বললেন না কেন? এর কোনও উত্তর দিতে পারেননি ওই সিপিএম নেতা।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক তথা দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অমিয় পাত্র বলেন, “প্রচার সভায় আমরা সারদা থেকে টেট, রাজ্যের সাম্প্রতিক সমস্ত ঘটনাই তুলে ধরেছি। কিন্তু, আমাদের দলে অশালীন কথা বলা নিষেধ। সেটা বলতে পারিনি বলেই হয়তো বক্তব্যে ঝাঁঝ কম মনে করছেন অনেকে।” দীপালি সাহার বিষয়টিকে অবশ্য গুরুত্ব দিতে তিনি নারাজ। তাঁর মন্তব্য, “সোনামুখীর ওই বুথ ছাড়াও আরও বহু বুথে ছাপ্পা হয়েছে। সেখানে ওই একটি বুথকে আমরা আলাদা করতে চাইনি। সব বুথ নিয়েই বিভিন্ন জায়গায় মুখ খুলেছি।”