ঝলমলে রবিবারে ঢল নামল ক্রেতার

প্রস্তুতির শেষ মুর্হূতে সবাই দৌড়চ্ছেন। মণ্ডপে-মণ্ডপে শিল্পীরা কাজ শেষ করতে ব্যস্ত। ছেলেপুলে, গিন্নিকে নিয়ে বাজারের এ মুড়ো থেকে ও মুড়ো দৌড়ে কেনাকাটায় ব্যস্ত বাড়ির কর্তা। ক্রেতাদের আবদার সামলাতে গলদঘর্ম বিক্রেতারা। রবিবার এ ভাবেই দেখা দিল পুরুলিয়ার মণ্ডপ, বাজারহাট। গত রবিবারের বৃষ্টি বাজার মাটি করে দিলেও এই রবিবারের ঝলমলে দিন, বস্ত্র ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফিরিয়ে আনল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:৪৫
Share:

দিনভর ক্রেতাদের ভিড় লেগে থাকল পুরুলিয়া শহরের দোকানে দোকানে।—নিজস্ব চিত্র

প্রস্তুতির শেষ মুর্হূতে সবাই দৌড়চ্ছেন। মণ্ডপে-মণ্ডপে শিল্পীরা কাজ শেষ করতে ব্যস্ত। ছেলেপুলে, গিন্নিকে নিয়ে বাজারের এ মুড়ো থেকে ও মুড়ো দৌড়ে কেনাকাটায় ব্যস্ত বাড়ির কর্তা। ক্রেতাদের আবদার সামলাতে গলদঘর্ম বিক্রেতারা। রবিবার এ ভাবেই দেখা দিল পুরুলিয়ার মণ্ডপ, বাজারহাট। গত রবিবারের বৃষ্টি বাজার মাটি করে দিলেও এই রবিবারের ঝলমলে দিন, বস্ত্র ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফিরিয়ে আনল। এ দোকান, ও দোকান ঘুরে মনের মতো জিনিস কিনতে পেরে বাড়ি ফেরার মুখে ক্রেতাদের মুখেও হাসির ঝিলিক দেখা গেল।

Advertisement

সকাল থেকেই পুরুলিয়া জেলার বড় বাজারগুলোতে চোখে পড়ার মতো ভিড় দেখা যায়। হকারদের হাঁক-ডাক, ক্রেতাদের দর কষাকষি— সব মিলিয়ে পুজোর আগে পুরুলিয়ার চেনা বাজারের ছবিটা ফিরে এল। পুরুলিয়া শহরের কাপড়গলি থেকে শুরু করে বরাকর রোড, পিএন ঘোষ স্ট্রিটের কাপড়ের দোকানগুলিতে ভিড় উপচে পড়ছিল। পুজোর কয়েকদিন আগেই শহরে নতুন ‘শপিং মল’ খুলেছে দেশবন্ধু রোডে। তরুণ প্রজন্মের ভিড় সেখানে একটু বেশিই নজরে এসেছে। নতুন জামা হাতে নাড়াচাড়া করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে অনেকে দেখে নিয়েছেন, তাঁকে কেমন মানাচ্ছে। এতদিন আসানসোল, দুর্গাপুরের শপিং মলে ছুটতেন পুরুলিয়ার বাসিন্দারা। আর এ বার হাতের কাছেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শপিং মল পেয়ে ক’দিন ধরেই ভিড় জমাচ্ছিলেন বাসিন্দারা। রবিবার যেন সেখানে উপচে পড়ে। মধ্যবয়স্ক এক ব্যক্তি ছেলে-মেয়েকে নিয়ে কয়েকটি ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে আসার সময় বলেন, “এখানে এক ছাদের তলায় সব রকমের পোশাক পাওয়া যায়। ঘেমেনেয়ে নাকাল হতে হয় না।” শপিং মলের মালিক নরেশ অগ্রবাল বলেন, “ভালই সাড়া পড়েছে।”

তবে এখনও অনেক মানুষ পরিচিত দোকানে ঘুরেই কেনাকাটি করতে বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। বরাকর রোডের রেডিমেড বস্ত্র ব্যবসায়ী অশোক সারাওগি বলেন, “কত পরিচিত ক্রেতা এ দিন বাজার করতে এসেছিলেন। শুধু বিক্রি করা তো নয়, পরস্পর কুশল বিনিময়ও করেছি। এটা তো শুধু পুজোর বাজারেই সম্ভব।” তিনি জানান, এ বার তরুণীদের ক্ষেত্রে নেট টপ, নেট চুড়িদার, ফ্যান্সি টপের চাহিদা ভাল রয়েছে। ভালই বিক্রি হয়েছে। শেষ রবিবারের বাজারে অবশ্য ছোট ছেলেদের ক্ষেত্রে মোদী ড্রেস ও মেয়েদের ক্ষেত্রে আনারকলি ফ্রক একে অপরকে পাল্লা দিয়েছে। কাপড়গলির এক বস্ত্র ব্যবসায়ী সমীর হালদার বলেন, “তরুণীরা পাখি চুড়িদার, মধুবালা চুড়িদারের দিকে বেশি আগ্রহী।” আর শাড়ির ক্ষেত্রে ‘ট্র্যাডিশনাল’ শাড়ির পাশাপাশি এ বার বাজারে চান্দেরি সিল্ক, ঢাকাই সিল্ক, কুড়ি তসর, চান্দেরী কাটোলা, মালাই সিল্কের বেশ চাহিদা রয়েছে—জানালেন পিএন ঘোষ স্ট্রিটের শাড়ি ব্যবসায়ী গৌতম অগ্রবাল।

Advertisement

বাজার সেরেই বাস ধরার জন্য ছুটছিলেন আড়শার বাসিন্দা যুধিষ্ঠির কুমার, জয়পুরের বাসিন্দা ত্রিলোচন মাহাতো। তাঁরা.বলেন, “গত রবিরার বৃষ্টির জন্য পুজোর বাজার সারতে পারিনি। এ দিকে বাড়ির ছোটরা নতুন জামার জন্য চাপাচাপি করছিল। এ দিন বাজারে এসে মন খুলে কেনাকাটি করেছি।” বোঙাবাড়ির বাসিন্দা নমিতা গরাই জানান, এ বার অনেক নতুন ধরনের শাড়ি বাজারে উঠেছে। শেষ পর্যন্ত তিনি তাঁতই কিনেছেন।

পুরুলিয়া শহরে পুজোর আগের শেষ রবিবারের বিক্রিবাটা ব্যবসায়ীদের ঘাটতি পুষিয়ে দিলেও কিছুটা হলেও হতাশ জেলার অপর দুই শহর রঘুনাথপুর ও আদ্রার ব্যবসায়ীরা। অন্য বার রঘুনাথপুরে তসরের দোকানে পুজোর আগের রবিবার ক্রেতাদের যে ভিড় চোখে পড়ে, এ বার কিন্তু সেই ছবিটা ছিল না। শহরের একটি তসরের শাড়ির দোকানের মালিক প্রণবকুমার দে বলেন, “পুজোর আগে লালপাড় গরদের শাড়ির বিক্রি ভালই হয়। কিন্তু এ বার ক্রেতার সংখ্যা তুলনামূলক অনেক কম।” তসরের হ্যান্ড প্রিন্ট.বিষ্ণুপুরী প্রিন্ট, কাঁথা স্টিচ, কটকি, ঘিচা ভাল পরিমাণে মজুত করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু শেষ রবিবারে ক্রেতার সংখ্যা দেখে কার্যত হতাশ তাঁরা। আর রেলশহর আদ্রাতেও শেষ রবিবারে উপচে পড়া ভিড়ের ছবিটা দেখা যায়নি। আজ সোমবার থেকে পুজোর বোনাস পাওয়ার কথা রেলকর্মীদের। বোনাসের পরেই বাজারে শেষবেলার বিক্রিবাটা বাড়বে, এই আশাতেই রয়েছেন রেলশহরের ব্যবসায়ীরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement