বাঁকুড়া আদালত থেকে বেরিয়ে আসছেন প্রমথনাথ মান্না।—নিজস্ব চিত্র
দু’মাসেও চার্জশিট দিতে পারল না পুলিশ। তাই বুধবার বাঁকুড়া সদর থানায় আমানতকারীদের দায়ের করা দু’টি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাঁকুড়া সিজেএম আদালত থেকে জামিন পেয়ে গেলেন লগ্নি সংস্থা এমপিএস-র কর্ণধার প্রমথনাথ মান্না ও সংস্থার এক ডিরেক্টর প্রবীর চন্দ্র। তবে বাঁকুড়া আদালতে উপস্থিত আমানতকারী ও এজেন্টরা পুলিশ কেন চার্জশিট দিতে পারেনি তা নিয়ে তুমুল ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সরকারপক্ষের আইনজীবী শান্তনু মণ্ডল জানান, যে সমস্ত অভিযোগের সাজার মেয়াদ ১০ বছরের নীচে, সেখানে ৬০ দিনের বেশি অভিযুক্তদের হেফাজতে রাখতে পারে না আদালত। তবে চার্জশিট জমা পড়লে অনেক সময় জামিন মঞ্জুর হয় না। তিনি বলেন, “এ ক্ষেত্রে চার্জশিট জমা পড়েনি। নিয়ম মাফিক অভিযুক্তদের জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে।”
গত ২৬ সেপ্টেম্বর শ্যামল সেন কমিশনে গিয়ে ধরা পড়েন এমপিএস-র ওই দুই কর্তা। পরদিন তাঁদের বাঁকুড়া আদালতে তোলা হলে প্রথমে দু’জনের তিনদিন পুলিশ হেফাজত ও পরে জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়। প্রথম থেকেই জামিনের আবেদন করে আসছিলেন এমপিএস কর্তারা। কিন্তু তাঁদের জামিন মঞ্জুর করেনি আদালত। এ দিন তিনি ওই দু’টি মামলায় জামিন পেলেও জেল থেকে এখনই ছাড়া পাচ্ছেন না। বাঁকুড়া ক্রেতা সুরক্ষা আদালতেও প্রমথনাথের বিরুদ্ধে একটি মামলা চলছে। এ ছাড়া রাজ্যের আরও কয়েকটি জায়গায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।
গত এপ্রিলে বাঁকুড়া সদর থানায় এমপিএস সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতারণা, ষড়যন্ত্রের মতো বেশ কিছু ধারায় দু’টি অভিযোগ দায়ের করেন এজেন্ট ও আমানতকারীরা। এমপিএস কর্তা গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে যতবারই তাঁকে বাঁকুড়া আদালতে হাজির করানো হয়েছে প্রতিবারই আদালত চত্বরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন সংস্থার এজেন্ট ও আমানতকারীরা। এ দিনও বেশ কিছু আমানতকারী ও এজেন্ট উপস্থিত ছিলেন আদালত চত্বরে। তবে সংস্থার কর্তা ও ডিরেক্টরের জামিন মঞ্জুর হওয়ায় ক্ষোভ আরও বেশি আকারে ছড়ায়।
আদালত চত্বরেই পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন সংস্থার আমানতকারী ও এজেন্টরা। সংস্থার এজেন্ট সঞ্জয় মণ্ডল, রঞ্জিত বৈরাগি, বিশ্বজিৎ দে, নিমাই চৌধুরীদের অভিযোগ, “পুলিশ সঠিক তদন্ত করছে না। চার্জশিট জমা না পড়ায় জামিন পেল সংস্থার মালিক। এখানেই প্রমাণ হচ্ছে পুলিশ ঘটনাটিকে হালকা করে দেখছে।” তাঁদের দাবি, প্রতারণা করে হাজার হাজার মানুষের টাকা লুঠ করেছেন প্রমথনাথ। তাই তাঁর কড়া শাস্তি দিতে হবে।
যদিও পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মানতে নারাজ জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার। তাঁর দাবি, “এটি বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের ঘটনা। বহু মানুষ এখানে জড়িত। তাদের মধ্যে অনেকেই বাইরে থাকেন। এই ধরনের ঘটনায় তদন্ত একটু সময় সাপেক্ষ। তদন্তের কাজ শেষ না হওয়াতেই চার্জশিট জমা দেওয়া যায়নি।”