ছ’শো পড়ুয়ার স্কুলে শিক্ষক পাঁচ, অর্ধেক সপ্তাহ তাই ছুটি

শিক্ষকের সংখ্যা পাঁচ। ছ’টি শ্রেণির দশটি সেকশন মিলিয়ে পড়ুয়া প্রায় ছ’শো। শিক্ষক-পড়ুয়া অনুপাতের এমন বৈষম্যে নাজেহাল বাঁকুড়া জেলা স্কুলের প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিক বিভাগ। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, প্রতিটি সেকশনকে সপ্তাহে তিন দিন করে ক্লাস করাচ্ছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

অর্পিতা মজুমদার ও রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৪ ০১:৫৪
Share:

শিক্ষকের সংখ্যা পাঁচ। ছ’টি শ্রেণির দশটি সেকশন মিলিয়ে পড়ুয়া প্রায় ছ’শো। শিক্ষক-পড়ুয়া অনুপাতের এমন বৈষম্যে নাজেহাল বাঁকুড়া জেলা স্কুলের প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিক বিভাগ। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, প্রতিটি সেকশনকে সপ্তাহে তিন দিন করে ক্লাস করাচ্ছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে বাকি তিন দিন।

Advertisement

বাঁকুড়া শহরের প্রায় ১৭০ বছরের পুরনো এই স্কুলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিভাগটির ক্লাস হয় সকালে। প্রাক-প্রাথমিক ও পঞ্চম শ্রেণিতে একটি করে এবং প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে দু’টি করে সেকশন রয়েছে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গোপাল নাথ বলেন, “এই বিভাগে সেকশন বেশি, কিন্তু শিক্ষক কম। তাই বাধ্য হয়ে রুটিন করে প্রতিটি সেকশন তিন দিন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। অভিভাবকদের অনুমতিও নিয়েছি এ ব্যাপারে। স্কুল শিক্ষা দফতরকে সমস্যার কথা জানানো হয়েছে।” স্কুল সূত্রে জানা যায়, গত ডিসেম্বরে কলকাতায় স্কুল শিক্ষা দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর ও কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে সমস্যার কথা জানানো হয়েছিল। সমস্যা এড়াতে স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অতিথি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব দেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। দু’জন প্রাক্তন শিক্ষকের আবেদনপত্রও জমা দেওয়া হয় স্কুল শিক্ষা দফতরে। শিক্ষকদের অভিযোগ, দফতরের কর্তারা প্রথমে অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করে সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দিলেও কোনও পদক্ষেপ করেননি। পরে ফোনে ফের আবেদন জানানো হলে কর্তারা জানান, প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিকে অতিথি শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে না। শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরুর আশ্বাস দিলেও এখনও তেমন কোনও পদক্ষেপ নজরে পড়েনি বলে দাবি শিক্ষকদের।

শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী ৩০ জন পড়ুয়া পিছু এক জন করে শিক্ষক থাকার কথা। সেই হিসেবে এই স্কুলে জনা কুড়ি শিক্ষক থাকা উচিত। কার্যক্ষেত্রে রয়েছেন মাত্র পাঁচ জন। স্কুল সূত্রে জানা যায়, সমস্যা শুরু ২০১২ সাল থেকে। তখন জেলা স্কুলের এই বিভাগে শিক্ষক ছিলেন আট জন। ক্লাসের চাপ সামলাতে না পারায় সে বছর প্রতিটি সেকশনের ক্লাস সপ্তাহে এক দিন করে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৩ সালের মে ও জুনে পরপর দু’জন শিক্ষক অবসর নেন। তখন ছুটি আরও এক দিন বাড়িয়ে দেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। জানুয়ারি থেকে প্রতিটি সেকশনের সপ্তাহে তিন দিন করে ক্লাস নেওয়া চালু হয়।

Advertisement

শুধু শিক্ষক নয়, সমস্যা রয়েছে শিক্ষাকর্মী নিয়েও। চার জন করণিকের জায়গায় রয়েছেন মাত্র এক জন। পিওন পদে দু’জনের পরিবর্তে আছেন এক জন। শিক্ষকদের দাবি, শিক্ষাকর্মীদের বাড়তি কাজও তাঁদের করতে হয়। এক শিক্ষকের বক্তব্য, “পড়ুয়াদের পড়াশোনার ক্ষতির সঙ্গে স্কুলের সম্মানহানিও হচ্ছে।” পরিস্থিতি দেখে অখুশি অভিভাবকেরাও। চিত্তরঞ্জন বাউড়ি নামে এক অভিভাবক বলেন, “গত দু’বছর ধরেই এই ভাবে ক্লাস চলছে। যে ক’জন শিক্ষক রয়েছেন তাঁরা হয়তো সবাইকে সমান সময় দেওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু পড়ুয়াদের সমস্যা তো তাতে মিটছে না।” আর এক অভিভাবকের কথায়, “অন্য স্কুলে পড়ুয়ারা সপ্তাহে ছ’দিন মিড-ডে মিল পায়। কিন্তু এখানে তিন দিন ক্লাস হয়। ফলে, মিড-ডে মিল পায় তিন দিন।”

স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, এপ্রিলে আরও এক জন শিক্ষক অবসর নিয়েছেন। এখন স্কুলে ছুটি চলছে। ২ জুন স্কুল খোলার পরে সপ্তাহে আরও এক দিন ছুটি বাড়াতে হতে পারে বলে মনে করছেন শিক্ষকেরা। বাঁকুড়ার জেলাশাসক তথা এই স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি বিজয় ভারতী বলেন, “স্কুলের এই সমস্যার কথা আমার পুরোপুরি জানা নেই। তবে শিক্ষকের অভাবে সেকশন ছুটি দেওয়া হলে তা মারাত্মক ব্যাপার। আমি এ নিয়ে স্কুলের সঙ্গে আলোচনা করে সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছে শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানাব।”

সমস্যার কথা মেনে নিচ্ছেন প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান রিঙ্কু বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, যে সব স্কুলে বাড়তি শিক্ষক রয়েছেন, সেখান থেকে বদলি করে কম শিক্ষক রয়েছেন, এমন স্কুলে পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু তাতেও শিক্ষকের অভাব পুরোপুরি মেটেনি। তিনি বলেন, “এটা গোটা রাজ্যের সমস্যা। নতুন শিক্ষক নিয়োগ না হলে সব স্কুলে শিক্ষকের অভাব পূরণ করা যাবে না।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement